আমের নতুন রাজধানীতে গাছে গাছে মুকুলের সমারোহ

নিজস্ব প্রতিবেদক
রিফাত হোসাইন সবুজ, জেলা প্রতিনিধি, নওগাঁ
প্রকাশিত: বৃহঃস্পতিবার ৪ঠা মার্চ ২০২১ ০৪:৩৭ অপরাহ্ন
আমের নতুন রাজধানীতে গাছে গাছে মুকুলের সমারোহ

নওগাঁ জেলায় আমের বাগানগুলোতে এখন থোকায় থোকায় ঝুলছে মুকুল। যে দিকে চোখ যায় শুধুই মুকুলের সমারোহ।


আবহাওয়া  অনুকূলে থাকায় আমের নতুন রাজধানী খ্যাত নওগাঁর আম বাগানগুলোতে গাছে গাছে ফুটেছে আমের মুকুল। আম গাছের পাতার ফাঁকে - ফাঁকে উঁকি দিয়ে জানান দিচ্ছে আমের মুকুলের আগমনের কথা। 

কয়েক বছর থেকে আম উৎপাদনে শীর্ষস্থানে রয়েছে উত্তরের জেলা নওগাঁ। আমের রাজধানী নামে এরই মধ্যে পরিচিত হতে শুরু করেছে জেলাটি। চলতি মৌসুমে সেই জেলার আনাচে কানাচে ছড়িয়ে থাকা আম গাছে শোভা পাচ্ছে মুকুল। এবারও আম উৎপাদনে শীর্ষস্থান ধরে রাখার আভাস দিচ্ছে গাছের মুকুল।


থোকায় থোকায় ঝুলছে গাছে মুকুল। আবহাওয়া অনুক‚লে থাকায় বাগানগুলোতে গাছে গাছে পাতার ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে আমের আগমনের বার্তা।


নওগাঁ জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর তথ্যমতে, জেলায় এবার ২৫ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হচ্ছে। গত বছর আম চাষ হয়েছিল ২৪ হাজার ৭৭৫ হেক্টর জমিতে। চলতি বছর জেলায় আমের চাষ বেড়েছে ১ হাজার ৭ হেক্টর জমিতে।


নওগাঁর বেশ কয়েকটি আম  বাগান ঘুরে দেখা যায় বাগানে আম চাষীদের ব্যস্ততা। গাছের গোড়ায় পানি দেয়া আর মুকুল ধরে রাখার জন্য সহায়ক বিভিন্ন ধরনের স্প্রের ব্যবহারসহ পরিচর্চার কাজে ব্যস্থ সময় পার করছেন। চাষিরা আশা করছে আমের ভালো ফলনের। মৌ মাছিদের গুঞ্জনে মুখরিত হবে আম বাগানগুলোতে। বাগান পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায় মুকুল যাতে ঝরে না যায় সেজন্য চাষিরা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। এক্ষেত্রে ব্যবহার হচ্ছে ভিটামিন আর গ্রোথ হরমোন জাতীয় ঔষধ। পোকা মাকড়ের হাত থেকে রক্ষার জন্য কীটনাশক। এসব ব্যবহার হয় সাধারণত মুকুল আসার আগে মুকুল পুরোপুরি ফুটলে ও গুটি বাঁধার পর। 


নওগাঁর সবচেয়ে বেশি আম উৎপাদন হয়ে থাকে পোরশা,সাপাহার ও নিয়ামপুর উপজেলায়। বরেন্দ্র এলাকা হিসেবে খ্যাত এই উপজেলাগুলো পানির স্তর নিচে তাই অন্য কোন ফসল চাষ হয়না। শুধু মাত্র বছরে আমন ধান চাষ করা হয় স্বল্প পরিসরে বৃষ্টির পানির উপর নির্ভর করে। যার কারনে এই এলাকাগুলোতে প্রতি বছর বৃদ্ধি পাচ্ছে আমের চাষ।


নওগাঁর সাপাহার উপজেলার আম চাষি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমি ২৫বিঘা জমিতে আমের চাষ করছি। এখন পর্যন্ত মুকুল পড়া বা পোকা-মাকড়ের আক্রমন নেই। তবে ভাল মুকুল যেন আসে সেই সাথে মুকুল যেন ঝড়ে না পড়ে সে জন্য ইসি ফিডল্যাম, সালফার, ইমডাফ্লোপ্রিড, ইমিসাফি নামের সব ঔষধ ব্যবহার করছি।


পোরশা উপজেলার নিতপুর ( মাষ্টারপাড়া ) এলাকার আম চাষি মাসুদ রানা জানান, আমার প্রায় ৪০বিঘা জমিতে এবার আম চাষ করেছি। আমের জাতের মধ্যে রয়েছে আ¤্ররুপালি, নাগফজলী, খিরশাপাতি, বারি-১২, নেংড়া ও গোপালভোগ। এবার আবহাওয়া অনুকূলে আছে। তেমন পোকার আক্রমন নেই। তবে কৃষি অফিসের পরামর্শে মুকুল যেন ঝরে না পড়ে এবং পোকার আক্রমন ঠেকাতে অগ্রিম কিছু ঔষধ ব্যবহার করছি।


নিয়ামতপুর উপজেলার ভাবিচা গ্রামের আম চাষি বাদল হোসেন বলেন, আমি এবার ৮০বিঘা জমিতে আম চাষ করেছি। প্রতি বিঘায় ১২০টি আম গাছ রয়েছে। প্রতিটি আম গাছের চারা রোপন থেকে শুরু করে আম উৎপাদন পর্যন্ত খরচ হয় প্রায় তিন হাজার টাকা। এছাড়া প্রতিটি আম গাছ থেকে আম উৎপাদন হয় ১০-১২কেজি। এখন সব মিলে আবহাওয়া যদি ভালো থাকে শেষ পর্যন্ত, তবে ভালো ফলনের আশা করছি। 


কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক শামছুল ওয়াদুদ বলেন, আম গাছে পোকা মাকড়ের তেমন উপদ্রব নেই। তারপরও পোকা-মাকড় যেন মুকুলের ক্ষতি না করতে পারে এবং মুকুল যেন না ঝড়ে পড়ে সে জন্য কৃষি বিভাগ থেকে আম চাষিদের কিছু অগ্রিম কিছু ঔষধ প্রয়োগ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। যদি আবহাওয়া অনুকূলে থাকে তবে এবছর প্রতি হেক্টর জমিতে ১২মেট্রিক টন উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সে হিসেবে এবার জেলায় মোট আম উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে তিন লক্ষ ১০হাজার দুইশত মেট্রিক টন। 


কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর নওগাঁর ১১টি উপজেলার মধ্যে সাপাহারে ৮হাজার ৫২৫ হেক্টর, পোরশায় ১০হাজার ৫০ হেক্টর, নিয়ামতপুরে ১হাজার ১৩০ হেক্টর,পতœীতলায় ৩হাজার ১৫ হেক্টর, মহাদেপুরে ৬২৫ হেক্টর, মান্দায় ৪০০ হেক্টর, ধামুইরহাটে ৬৭৫ হেক্টর, বদলগাছীতে ৩৩৫ হেক্টর, আত্রাইয়ে ১২০ হেক্টর, রাণীনগরে ৩৫ হেক্টর এবং নওগাঁ সদর উপজেলাতে আমের চাষ হয়েছে ৪৪০ হেক্টর জমিতে।