উল্লাপাড়ার চড়িয়া মধ্যপাড়া মাদ্রাসায় শতভাগ পাশ, জিপিএ ৫ সহ সাফল্য

নিজস্ব প্রতিবেদক
মোঃ শামছুল হক - সিরাজগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: বুধবার ১৫ই জানুয়ারী ২০২৫ ০৬:৫৫ অপরাহ্ন
উল্লাপাড়ার চড়িয়া মধ্যপাড়া মাদ্রাসায় শতভাগ পাশ, জিপিএ ৫ সহ সাফল্য

সিরাজগঞ্জ জেলার সলঙ্গা থানার চড়িয়া মধ্যপাড়া দারুল কোরআন কওমীয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসা থেকে এবছর শতভাগ পাশের ফলাফল এসেছে। নূরানী তা’লিমুল কোরআন বোর্ড, চট্টগ্রাম বাংলাদেশ কর্তৃক কেন্দ্রীয় সনদ পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ১০ জন ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে ৩ জন জিপিএ ৫ অর্জন করেছে, বাকি ৭ জন এ গ্রেডে সাফল্য লাভ করেছে। 


আজ বুধবার (১৫ জানুয়ারি) দুপুরে মাদ্রাসার আয়োজনে ফলাফল পুরস্কার বিতরণী ও অভিভাবক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হাফেজ মাও: মুফতি আব্দুর রউফ সাহেব, যিনি বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস সিরাজগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি। তিনি কৃতি ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে পুরস্কার এবং ক্রেস্ট তুলে দেন। 


এছাড়া মাদ্রাসার অন্যান্য শিক্ষক এবং অভিভাবকরা এই সাফল্যের জন্য মাদ্রাসার শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তাদের শুভেচ্ছা জানান। উপস্থিত ছিলেন মাও: ইয়াহিয়া সাহেব, মাও: আব্দুল মান্নান সাহেব, মাও: মোফাসসের আলম, হাফেজ মাও: হাফিজুর রহমান এবং হাফেজ মাও: মোজাফফর হোসাইন। 


মাদ্রাসার মুহতামিম হাফেজ মাও: ইমরান হোসাইন সিরাজী এ প্রতিনিধিকে জানান, "আমরা অত্যন্ত আনন্দিত যে আমাদের মাদ্রাসা থেকে এই বছর কেন্দ্রীয় সনদ পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ১০ জন ছাত্র-ছাত্রী মধ্যে ৩ জন জিপিএ ৫ অর্জন করেছে এবং ৭ জন এ গ্রেডে উত্তীর্ণ হয়েছে। এটি আমাদের শিক্ষকদের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতিশ্রুতি ও নিষ্ঠার ফলস্বরূপ।"


অনুষ্ঠানে আরও জানানো হয়, মাদ্রাসা পরিচালনা পর্ষদ এবং শিক্ষকরা তাদের দায়িত্বের প্রতি পূর্ণ আস্থা রেখে কাজ করে যাচ্ছেন। এজন্য তারা তাদের শিক্ষা ও নৈতিক মূল্যবোধের ক্ষেত্রে উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। 


উপস্থিত অভিভাবকরা এই সাফল্য অর্জনে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন এবং মাদ্রাসার শিক্ষকবৃন্দের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, "এটি আমাদের জন্য একটি গর্বের বিষয়। আমাদের সন্তানেরা এখানে শিক্ষা নিয়ে সফল হয়েছে, যা আমাদের এলাকায় একটি বড় ঘটনা। মাদ্রাসার শিক্ষকরা তাদের দায়িত্ব পালন করেছেন অত্যন্ত সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে।" 


এ বছর ১০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে তিনজনের জিপিএ ৫ সহ একাধিক শিক্ষার্থী সাফল্যের শিখরে পৌঁছেছে, যা মাদ্রাসার সুনাম আরও বাড়িয়েছে। মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা তাদের কঠোর পরিশ্রম এবং অধ্যাবসায়ের মাধ্যমে এসব সাফল্য অর্জন করেছে। 


সাফল্য অর্জনকারী ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে জানান, তারা খুবই খুশি এবং তাদের এই অর্জনকে আরো বড় কিছু করার জন্য উৎসাহ হিসেবে গ্রহণ করবে। তারা এই সফলতার জন্য তাদের শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞ এবং ভবিষ্যতে আরও ভালো কিছু করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। 


মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত হৃদ্যতাপূর্ণ। শিক্ষকরা ছাত্রদের শুধু পড়াশোনা নয়, তাদের নৈতিক শিক্ষাও দেন। এই শিক্ষার ফলে ছাত্ররা তাদের জীবনকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে সক্ষম হচ্ছে। 


মাদ্রাসার অভিভাবকরা বলেন, "এখনকার সময়ে ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা খুশি যে, এই মাদ্রাসাটি শিক্ষার্থীদের ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি সাধারণ জ্ঞান অর্জনে সহায়তা করছে।"


মাদ্রাসার কর্মকর্তারা আশা প্রকাশ করেছেন, আগামী বছরেও তাদের মাদ্রাসা থেকে আরও ভালো ফলাফল আসবে এবং তারা ধারাবাহিকভাবে উন্নতির পথে এগিয়ে যাবে। 


তারা উল্লেখ করেন, "আমরা সর্বদা আমাদের শিক্ষার্থীদের উন্নতির জন্য কাজ করছি এবং আমাদের লক্ষ্য তাদেরকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি শুধু পাঠ্য বইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এখান থেকে সৎ, দক্ষ এবং জ্ঞানী মানুষ তৈরি হবে, যারা সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ থাকবে।"


এছাড়া শিক্ষকদের আন্তরিকতা এবং কঠোর পরিশ্রমের ফলেই আজকের এই সাফল্য অর্জন সম্ভব হয়েছে। মাদ্রাসা শিক্ষকেরা তাদের প্রতিটি ছাত্রের প্রতি যত্নশীল ও উদার মনোভাব নিয়ে পড়ান, যাতে তারা শুধু শিক্ষিত না হয়ে, বরং আদর্শ মানুষ হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। 


এই মাদ্রাসার সাফল্য শুধু এলাকার জন্য নয়, পুরো সিরাজগঞ্জ জেলার জন্য একটি গর্বের বিষয়। তাদের এই সাফল্য স্থানীয় জনগণের মধ্যে শিক্ষা বিষয়ে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সাহায্য করবে।