মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত বাংলাদেশ চা গবেষণা কেন্দ্রের প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিটের আয়োজনে ১০ নভেম্বর রবিবার অনুষ্ঠিত হলো পাঁচদিনব্যাপী ‘টি টেস্টিং অ্যান্ড কোয়ালিটি কন্ট্রোল’ প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন এসইউপি এনডিসি পিএসসি। তিনি এই প্রশিক্ষণ কোর্সের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন এবং চায়ের কোয়ালিটি উন্নয়নের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
এ সময় মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন বলেন, “চায়ের দাম বাড়ানোর চেয়ে কোয়ালিটি উন্নতি করা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। কোয়ালিটি উন্নত না হলে দাম ধরে রাখা সম্ভব নয়। যারা ভালো চা তৈরি করতে চান, তারা অবশ্যই বাজারে ভালো দাম পাবেন। কিন্তু এখন অনেকেই ভালো চায়ের সঙ্গে খারাপ চা মিশিয়ে বাজারে বিক্রি করছেন, যার কারণে চায়ের দাম কমে যাচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “কোয়ালিটি উন্নতি করতে পারলে আমাদের উৎপাদনেও সমৃদ্ধি আসবে এবং রফতানি বাজারে দেশের চায়ের কদর বাড়বে। এজন্য প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জগুলো একত্রিতভাবে মোকাবেলা করতে হবে।”
এছাড়া, চা বোর্ডের চেয়ারম্যান টি টেস্টিং ও কোয়ালিটি কন্ট্রোলের প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধন শেষে 'ভ্যালু এডেড চা প্রদর্শনী' ঘুরে দেখেন। প্রদর্শনীতে ১২ রকমের কোয়ালিটি চা প্রদর্শন করা হয়, যার মধ্যে ছিল ইম্পেরিয়াল জেসমিন টি, প্রিমিয়ার ব্লাক টি, অর্থোডক্স টি, গ্রিন টি, হোয়াইট টি, মাসালা টি, অ্যালোভেরা এণ্ড পাইনআপেল টি, তুলসি টি, রোজ টি, ইয়োলো টি, জিঞ্জার টি, এবং চায়না লিচি টি।
চায়ের উৎপাদন এবং কোয়ালিটি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি আরো বলেন, “এ বছরের উৎপাদনে কিছুটা শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে, অধিকাংশ চা বাগানে উৎপাদন কিছুটা বাড়লেও, আমাদের নির্ধারিত উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে আমরা আশা করি, দ্রুত সমস্যাগুলোর সমাধান সম্ভব হবে।”
তিনি ন্যাশনাল চা কোম্পানি (এনটিসি) সম্পর্কেও কথা বলেন, যাদের বাগানে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। তিনি বলেন, “এনটিসি সরাসরি টি বোর্ডের অধীনে না, তবে মন্ত্রনালয় এবং এনটিসির মধ্যে মিটিং চলছে, কিভাবে এসব সমস্যা সমাধান করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা চলছে।”
চা বোর্ডের চেয়ারম্যান অবৈধ পথে চায়ের আমদানি ও রফতানি সমস্যা নিয়েও কথা বলেন। তিনি জানান, “আমরা চোরাই পথে নিম্নমানের চা আমদানি রোধ করার জন্য বিজিবির সাথে যোগাযোগ বৃদ্ধি করতে যাচ্ছি, বিশেষ করে বর্ডারে নজরদারি বাড়ানোর জন্য।”
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ চা বোর্ডের সদস্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি, বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. মো. ইসমাইল হোসেন এবং বাংলাদেশীয় চা সংসদের সিলেট ব্রাঞ্চের চেয়ারম্যান জি এম শিবলী। প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিটের পরিচালক ড. একেএম রফিকুল হক সভাপতিত্ব করেন।
প্রশিক্ষণে দেশের ৮০ থেকে ৯০টি চা বাগানের প্রতিনিধির পাশাপাশি ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট, চট্টগ্রাম, ঝিনাইদহ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলার ২৮ জন প্রশিক্ষণার্থী অংশগ্রহণ করেছেন।
বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, কোয়ালিটি উন্নয়নে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপের ঘোষণা দেন এবং আশা ব্যক্ত করেন যে, শ্রীমঙ্গলসহ চায়ের মূল উৎপাদন এলাকাগুলোর উন্নয়ন অব্যাহত থাকবে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।