যে সকল কারনে ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করল

নিজস্ব প্রতিবেদক
জিয়াউল হক জুয়েল (স্টাফ রিপোর্টার)
প্রকাশিত: বৃহঃস্পতিবার ২৪শে অক্টোবর ২০২৪ ১১:৩৩ পূর্বাহ্ন
যে সকল কারনে ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করল

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করে নিষিদ্ধ করেছে সরকার। বুধবার (২৪ অক্টোবর) রাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এতে সই করেন জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন।


গত মঙ্গলবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার ৫ দফা দাবি জানায় এবং বৃহস্পতিবারের মধ্যে সময় বেঁধে দেয়। একদিনের মধ্যেই সরকার এই নিষেধাজ্ঞা জারি করে, যা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।


প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর থেকে, বিশেষ করে বিগত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগ নানাবিধ অপরাধে জড়িত ছিল। এদের বিরুদ্ধে হত্যা, নির্যাতন, ছাত্রাবাসে সিট বাণিজ্য, ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের অভিযোগ রয়েছে, যা দেশের প্রধান গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া, কিছু ঘটনায় সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের অপরাধ আদালতে প্রমাণিত হয়েছে।


বিশেষ করে ২০২৪ সালের ১৫ জুলাই থেকে চলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রী ও সাধারণ জনগণের ওপর ‘উন্মত্ত ও বেপরোয়া সশস্ত্র আক্রমণ’ চালায়, যার ফলে বহু নিরীহ শিক্ষার্থী নিহত হয় এবং অসংখ্য মানুষের জীবন বিপন্ন হয়।


সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে যে, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও ছাত্রলীগ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক এবং উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত ছিল। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে, সরকার 'সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯'-এর আওতায় ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।


ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়ার খবর পাওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে। তারা নানা স্লোগান দিতে শুরু করে এবং মিষ্টি বিতরণ করে। "সন্ত্রাসী লীগ নিষিদ্ধ হলো" এবং "ক্যাম্পাস সন্ত্রাসমুক্ত হলো" স্লোগানগুলো বাতাসে ভাসছিল।


১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ছাত্রলীগ, যা বাঙালির স্বাধিকারের আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল, সময়ের পরিক্রমায় বিভিন্ন বিতর্কে জড়িয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দলাদলি, হামলা, খুন ও টেন্ডারবাজির কারণে সংগঠনটির বিরুদ্ধে সমালোচনা বেড়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে ছাত্রলীগের ভবিষ্যৎ এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক দৃশ্যে এর প্রভাব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।