সাবেক সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমেদ সম্প্রতি তার নিজের ইউটিউব চ্যানেলে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন, যেখানে তিনি ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারির বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন। ভিডিওর শুরুতে তিনি জুলাই-আগস্ট মাসের নিহতদের জন্য দোয়া ও আহতদের দ্রুত সুস্থতার কামনা করেন। পাশাপাশি, তিনি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রার্থনা করে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের প্রশংসা করেন।
পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহ: নেপথ্যে কী ঘটেছিল?
মইন ইউ আহমেদ তার ভিডিওতে উল্লেখ করেন, ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারির সকালটা ছিল সেনাবাহিনীর জন্য আরেকটি নিয়মিত দিন। তিনি জানান, সেদিন সকাল সাড়ে ৭টায় সেনাসদরের কাজ শুরু হয় এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ মিটিং ছিল, যেখানে সেনাবাহিনীর পরবর্তী বছরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছিল। ঠিক সেই সময়ে সিজিএস লেফটনেন্ট জেনারেল সিনহা এসে মর্টার নিয়ে বিডিআরের সাথে আলোচনার প্রস্তাব দেন, যেটি পরে বিদ্রোহের সূচনা হিসেবে গণ্য হয়।
সাবেক সেনাপ্রধান বলেন, "সকাল ৯টার দিকে আমি যখন মিটিংয়ে ব্যস্ত ছিলাম, তখন পিলখানায় বিদ্রোহের খবর আসে। সিজিএস সিনহা আমাকে জানান, পিলখানায় গোলযোগ শুরু হয়েছে এবং পরিস্থিতি গুরুতর হয়ে উঠছে।"
সামরিক গোয়েন্দা এবং অপারেশন রেস্টোর অর্ডার
মইন ইউ আহমেদ জানান, পিলখানার পরিস্থিতির ভয়াবহতা দেখে তিনি সেনাবাহিনীর একটি ব্রিগেডকে অপারেশনের জন্য প্রস্তুত হওয়ার নির্দেশ দেন, যা পরে 'অপারেশন রেস্টোর অর্ডার' নামে পরিচিত হয়। তিনি বলেন, "আমি ডিজি বিডিআরের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি এবং তিনি জানান, বিদ্রোহীরা আগে থেকেই পরিকল্পিতভাবে কাজ করছে।"
রাজনৈতিক সমঝোতা এবং সামরিক অভিযান
মইন ইউ আহমেদ বলেন, পিলখানায় সামরিক অভিযান চালানোর পরিকল্পনা থাকলেও, সরকারের তরফ থেকে রাজনৈতিকভাবে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রী তাকে জানিয়েছিলেন যে, বিদ্রোহীরা সেনাবাহিনীকে পিলখানা থেকে সরে যেতে বলেছে এবং রাজনৈতিক আলোচনা করার জন্য প্রস্তুত ছিল।
বিদ্রোহের সমাপ্তি এবং তার প্রভাব
মইন ইউ আহমেদ আরও উল্লেখ করেন, ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে সরকার থেকে নির্দেশনা আসে যে, রাজনৈতিক আলোচনা করে বিদ্রোহীদের সাথে সমঝোতা করতে হবে। তিনি জানান, বিদ্রোহীরা পিলখানার গেটগুলোর সামনে মর্টার এবং অন্যান্য অস্ত্র মোতায়েন করেছিল, যা তাদের প্রতিরোধ করার জন্য প্রস্তুত ছিল।
অবশেষে, বিদ্রোহীরা সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনা করতে আসে এবং তাদের একটি বড় রুমে রাখা হয়। মইন ইউ আহমেদ তাদের সাথে কথা বলে পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চান, কিন্তু বিদ্রোহীদের নেতা তার প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে ব্যর্থ হন।
তদন্তের দাবি এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
ভিডিওর শেষাংশে মইন ইউ আহমেদ বিডিআর বিদ্রোহের সুষ্ঠু তদন্তের দাবি করেন এবং জানান যে, বিদ্রোহের উপর তার লেখা একটি বই শিগগিরই প্রকাশিত হবে। তিনি বলেন, "এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হওয়া উচিত, যাতে দায়ীদের সঠিকভাবে চিহ্নিত করা যায়।"
সাবেক সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমেদের এই ভিডিওটি বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় নতুন আলো ফেলেছে এবং জনগণের মধ্যে নতুন করে আলোচনা তৈরি করেছে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।