আফগান বিমানঘাঁটিতে আবারও চোখ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের

নিজস্ব প্রতিবেদক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: শুক্রবার ৭ই মার্চ ২০২৫ ০৪:৩৩ অপরাহ্ন
আফগান বিমানঘাঁটিতে আবারও চোখ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের

আফগানিস্তানের ওপর আবারও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ বাড়ছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি জানিয়েছেন, তিনি আফগানিস্তানের বাগরাম বিমানঘাঁটিতে মার্কিন সেনাদের ফিরিয়ে আনতে চান। তার দাবি, চীন এখন বাগরাম নিয়ন্ত্রণ করছে, আর এই পরিস্থিতি মার্কিন স্বার্থের জন্য উদ্বেগজনক।


গত মাসে, ট্রাম্প পূর্বে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে ফিরে আসতে পারে। তখন তিনি বলেন, চীনের বাড়তে থাকা প্রভাব মোকাবিলা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র বাগরামে একটি ছোট বাহিনী রাখতে পারে। ট্রাম্পের মতে, বাগরাম বিমানঘাঁটি চীনের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর কাছাকাছি অবস্থিত, মাত্র এক ঘণ্টার দূরত্বে, এবং এজন্য এর কৌশলগত মূল্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


তবে তালিবান গোষ্ঠী ট্রাম্পের এই দাবিকে নাকচ করেছে। তাদের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, ট্রাম্পের দাবি ভিত্তিহীন এবং ভুল তথ্যের উপর দাঁড়িয়ে। তিনি স্পষ্টভাবে জানান যে, বাগরাম এখনো তালিবানের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং সেখানে চীনা সামরিক বাহিনীর উপস্থিতি নেই। মুজাহিদ আরো বলেন, এই ধরনের বিভ্রান্তিকর তথ্য দেওয়া বন্ধ করতে হবে এবং ট্রাম্পের উপদেষ্টাদের উচিত এ বিষয়ে সঠিক তথ্য প্রদান করা।


বাগরাম বিমানঘাঁটি একটি কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। এটি কাবুল থেকে ১১ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে, আফগানিস্তানের পারওয়ান প্রদেশে অবস্থিত। সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৫০-এর দশকে এটি নির্মাণ করে এবং ১৯৭৯ সালের সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধের সময় এটি সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধান ঘাঁটি ছিল। ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে তালিবানকে উৎখাত করতে এবং ওসামা বিন লাদেনকে ধরতে এই ঘাঁটি দখল করে।


এটি শুধু একটি সামরিক ঘাঁটি ছিল না; ২০০১ সালে সেখানে একটি কারাগারও প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যা আফগানিস্তানের গুয়ান্তানামো হিসেবে পরিচিতি পায়। ২০২০ সালে, ট্রাম্প তালিবানদের সঙ্গে একটি চুক্তি করেন যার মাধ্যমে মার্কিন সেনা আফগানিস্তান থেকে প্রত্যাহার হয়। তবে সেনা প্রত্যাহারের পরও ট্রাম্প দাবি করেছেন যে, তার প্রশাসন বাগরাম বিমানঘাঁটি ধরে রাখার পরিকল্পনা করেছিল, কিন্তু এখন চীন সেখানে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে।


এদিকে, আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের পর মার্কিন সামরিক সরঞ্জাম এখনও সেখানে রয়ে গেছে। ট্রাম্প এই পরিস্থিতির তীব্র সমালোচনা করেছেন, বিশেষ করে সাত বিলিয়ন ডলারের সামরিক সরঞ্জাম আফগানিস্তানে রেখে আসা নিয়ে। তিনি দাবি করেছেন, তালিবান এখন এসব সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি করছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের ফেরত পাওয়া উচিত।


আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনীর বিদায় নেওয়ার পর চীন ব্যাপকভাবে আফগানিস্তানে নিজেদের পদচিহ্ন ফেলেছে। চীনা কোম্পানিগুলো তালিবান সরকারের সঙ্গে ব্যবসায়িক চুক্তি করেছে এবং আফগানিস্তানে অবকাঠামো প্রকল্পে বিনিয়োগ করছে। তবে চীন তাদের সামরিক উপস্থিতি অস্বীকার করেছে। চীন আফগানিস্তানে তার অর্থনৈতিক সম্পর্ক বাড়ানোর পাশাপাশি নিরাপত্তা দিকেও তার স্বার্থ রক্ষা করতে চায়, বিশেষ করে উইঘুর বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে।


মার্কিন বাহিনীর আফগানিস্তান থেকে প্রত্যাহারের পর, আফগানিস্তানে শূন্যতা তৈরি হয়েছে, এবং চীন এই শূন্যতা পূরণের জন্য আগ্রহী। চীনের আফগানিস্তানে বিনিয়োগ এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রকল্পগুলি তার উপস্থিতি শক্তিশালী করেছে। তাছাড়া, তালিবানকে বাণিজ্যিক সুবিধা দেওয়া চীনের জন্য কৌশলগত গুরুত্ব বহন করে।


যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের সম্পর্কের এই ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা আফগানিস্তানকে নিয়ে যে কৌশলগত যুদ্ধ চলছে, তা স্পষ্ট করে তোলে। ট্রাম্পের মন্তব্য এবং চীনের দখলে আসা বাগরাম বিমানঘাঁটি এই আঞ্চলিক আধিপত্যের নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।