২০২৪ সালের বাংলাদেশের বিক্ষোভ উস্কে দেয় বাংলাদেশের পুলিশ- ওএইচসিএইচআর

নিজস্ব প্রতিবেদক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: শুক্রবার ২১শে ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৪:২১ অপরাহ্ন
২০২৪ সালের বাংলাদেশের বিক্ষোভ উস্কে দেয় বাংলাদেশের পুলিশ- ওএইচসিএইচআর

জাতিসংঘের মানবাধিকার অধিকার অফিস (ওএইচসিএইচআর) ২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্ট মাসের বিক্ষোভের উপর একটি তথ্য অনুসন্ধান প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যা বাংলাদেশে রাজনীতির এক গুরুত্বপূর্ণ সময়কালকে চিত্রিত করে। প্রতিবেদনটি জানায়, এই সময়ে সরকার উৎখাতের পাশাপাশি আন্দোলনে নিরাপত্তা বাহিনীর ভূমিকা ও তার প্রভাবকে তুলে ধরা হয়েছে।


ওএইচসিএইচআর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে কোটা সংক্রান্ত বিক্ষোভগুলো সহিংস রূপ ধারণ করেছিল এবং এতে নিরাপত্তা বাহিনীর ক্রমবর্ধমান তৎপরতা ছিল। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিক্ষোভকারীদের শান্ত করার জন্য সুপ্রিম কোর্টের রায়ের অপেক্ষা করতে বলেছিলেন, তবে তাদের কাছে তার বক্তব্য ছিল কুটিল এবং আন্তরিকতা ছিল না।


বিক্ষোভের সময় ১৬ জুলাই প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বিক্ষোভকারীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানান এবং ২০২৪ সালের জুলাই মাসের ১৮ তারিখ থেকে নিরাপত্তা বাহিনী সড়কে শক্তি প্রয়োগ শুরু করে। সাধারণ জনগণও বিক্ষোভে অংশ নেয় এবং নিরাপত্তা বাহিনী প্রাণঘাতী শক্তি ব্যবহারের দিকে ঝুঁকে পড়ে। বিশেষ করে, পুলিশ এবং বিজিবি রাইফেল, পিস্তল ও শটগান ব্যবহার করে।


এদিকে, নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযান চলাকালীন ১৯ জুলাই সারা দেশে গুলি চালানোর পর বিক্ষোভকারীরা সরকারের বিরুদ্ধে তাদের দাবি আরও জোরালোভাবে তুলে ধরে। সরকার তাদের নিরাপত্তা বাহিনীর শক্তি প্রয়োগে অব্যাহত রাখে, এবং ২৩ জুলাই পর্যন্ত দেশজুড়ে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়।


প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২১ জুলাই সুপ্রিম কোর্টের একটি রায় মুক্তিযোদ্ধাদের বংশধরদের সরকারি চাকরির কোটা ৫ শতাংশে কমিয়ে দেয়, যা সরকারের প্রতি বিক্ষোভকারীদের ক্ষোভ আরও বাড়িয়ে তোলে। তাদের দাবি ছিল তৎকালীন সরকারের পদত্যাগ ও একাধিক উর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ।


এছাড়া, বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামী সরকারের পতন দাবি করে ২৬ জুলাই জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানায়। নিরাপত্তা বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে গণগ্রেপ্তার অভিযান শুরু করে, যার ফলে দেশজুড়ে আরও বিক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ২৮ জুলাই গোয়েন্দা শাখার প্রধান একটি ভিডিও প্রকাশ করে, যাতে আটক ছয়জন ছাত্রনেতা বিক্ষোভের সমালোচনা করে।


ওএইচসিএচআর জানায়, প্রতিবাদ আন্দোলনের সময় সরকারের শক্তি প্রয়োগের পাশাপাশি সেনাবাহিনীও মোতায়েন করা হয়েছিল। ৫ আগস্ট ঢাকায় একটি বড় গণমিছিল অনুষ্ঠিত হওয়ার আগেই সরকার সশস্ত্র বাহিনী, বিজিবি, পুলিশ এবং র‌্যাবকে রাস্তায় নেমে আসতে নির্দেশ দেয়।


তবে, বিক্ষোভকারীরা আন্দোলন চালিয়ে যায় এবং ৫ আগস্ট ঢাকার কেন্দ্রস্থলে একটি গণমিছিলের পরিকল্পনা করে। এই সময়ে সেনাবাহিনী এবং বিজিবি বেশিরভাগ সময় বিক্ষোভকারীদের মিছিল করতে দেয়, তবে কিছু স্থানে সেনাবাহিনী গুলি চালায়। পরবর্তী সময়ে, ২ আগস্ট, শেখ হাসিনা হেলিকপ্টারে করে দেশ ছেড়ে চলে যান, যখন সেনাবাহিনীর কিছু অফিসার বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালাতে আগ্রহী ছিল না।


এই প্রতিবেদনটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক নতুন দৃষ্টিকোণ প্রদান করে, যেখানে জনতা, নিরাপত্তা বাহিনী, এবং সরকারের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ ছিল। এটি জাতিসংঘের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির এক বিস্তারিত পর্যালোচনা।