নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা ৩৩ ডিসি ওএসডি

নিজস্ব প্রতিবেদক
মোঃ সাইফুল ইসলাম, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশিত: বুধবার ১৯শে ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৭:৫৬ অপরাহ্ন
নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা ৩৩ ডিসি ওএসডি


২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ৩৩ জন জেলা প্রশাসককে (ডিসি) বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে। বুধবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত পৃথক বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। এসব কর্মকর্তাকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে।  


জানা গেছে, ওএসডি হওয়া ৩৩ জন কর্মকর্তা যুগ্মসচিব পদে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে দায়িত্ব পালন করছিলেন। হঠাৎ এই বদলির সিদ্ধান্তে প্রশাসনের ভেতরে আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। তবে কী কারণে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা স্পষ্ট করেনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।  


একাধিক সূত্র বলছে, ২০১৮ সালের নির্বাচনে দায়িত্ব পালনের সময় বিভিন্ন অনিয়ম ও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠেছিল। সম্প্রতি সরকার প্রশাসনে শুদ্ধি অভিযান চালানোর অংশ হিসেবে এই কর্মকর্তাদের সরিয়ে নিয়েছে। অন্যদিকে, কেউ কেউ বলছেন এটি নিয়মিত প্রশাসনিক পরিবর্তনের অংশ, এতে অন্য কিছু খোঁজার দরকার নেই।  


ওএসডি হওয়া কর্মকর্তাদের একজন বলেন, "আমাদের হঠাৎ ওএসডি করা হয়েছে। কিন্তু কী কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। আমরা নিয়মিত দায়িত্ব পালন করছিলাম।"  


প্রশাসনের ভেতরে অনেকে মনে করছেন, রাজনৈতিক চাপ বা প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। আবার কেউ কেউ বলছেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিতর্কিত ভূমিকার কারণে এই পদক্ষেপ।  


জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, "ওএসডি করা একটি প্রশাসনিক প্রক্রিয়া। এসব ক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোনো গুরুতর অভিযোগ থাকলে তা তদন্তের জন্য তাদের সরিয়ে নেওয়া হয়।"  


বিরোধী দল বিএনপির নেতারা বলছেন, এই পদক্ষেপ সরকার নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করতে নিয়েছে। বিএনপির একজন যুগ্ম মহাসচিব বলেন, "২০১৮ সালের নির্বাচনে যে ধরনের অনিয়ম হয়েছিল, তা সারা বিশ্ব দেখেছে। এই কর্মকর্তারা তখন সরকারকে সহযোগিতা করেছিলেন। এখন পরিস্থিতি বদলাতে থাকায় তাদের সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।"  


অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, সরকারের প্রশাসনিক কাঠামো শক্তিশালী করতে নিয়মিত পরিবর্তন প্রয়োজন। একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, "ওএসডি করা মানেই যে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, তা নয়। কখনো কখনো প্রশাসনিক প্রয়োজনে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।"  


সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা মনে করছেন, প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সরকারকে আরও সুস্পষ্টভাবে সিদ্ধান্তের কারণ জানাতে হবে। এ ধরনের পদক্ষেপ যেন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। একই সঙ্গে ওএসডি হওয়া কর্মকর্তাদের যেন সঠিক মূল্যায়ন ও ন্যায়বিচার পাওয়া নিশ্চিত হয়, সে আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা।