যাত্রাবাড়ীতে পুলিশ-শিক্ষার্থী সংঘর্ষ, ২ পথচারী গুলিবিদ্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: বৃহঃস্পতিবার ১৮ই জুলাই ২০২৪ ১১:৫৪ পূর্বাহ্ন
যাত্রাবাড়ীতে পুলিশ-শিক্ষার্থী সংঘর্ষ, ২ পথচারী গুলিবিদ্ধ

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের সঙ্গে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ চলছে। এ সময় পুলিশের গুলিতে দুই পথচারী গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখায় পুলিশ তাদের উপর গুলি চালায়।


বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) বেলা সাড়ে ১০টার দিকে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়।এর আগে বুধবার সন্ধ্যার পর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন এবং পুলিশ আক্রমণ করলে শিক্ষার্থীরাও পাল্টা আক্রমণ চালায়। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধরা মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের কাজলা অংশের টোলপ্লাজায় আগুন ধরিয়ে দেন।


যদিও রাত সোয়া ৩টার দিকে পুলিশ-র‍্যাব-বিজিবির যৌথ টহলের পর যাত্রাবাড়ী-শনিরআখড়া এলাকায় যান চলাচল শুরু হলেও ফের তা দখলে নেয় আন্দোলনকারীরা। বর্তমানে মহাসড়কের উভয় পাশে যান চলাচল বন্ধ আছে।গতকাল থেকে দফায় দফায় এ সংঘর্ষে দুই বছরের এক শিশুসহ অন্তত ৬ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। একজন নিহত হয়েছেন।এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ঢাকাসহ সারা দেশে ২২৯ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।


আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালের কোটাপদ্ধতি বাতিল করে পরিপত্র জারি করে সরকার। সরকারের এই কোটা বাতিলের পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে রিট করেন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অহিদুল ইসলামসহ সাতজন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর রুল দেন হাইকোর্ট। চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত ৫ জুন রুল অ্যাবসলিউট (যথাযথ) ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট।

 

পরে হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন চেম্বার আদালত হয়ে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য ওঠে ৪ জুলাই। রিট আবেদনকারীপক্ষ সময় চেয়ে আরজি জানালে সেদিন আপিল বিভাগ শুনানি পিছিয়ে দেন।পাশাপাশি রাষ্ট্রপক্ষকে নিয়মিত লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করতে বলা হয়। এ অবস্থায় কোটা পুনর্বহালসংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে গত ৯ জুলাই আবেদন করেন দুই শিক্ষার্থী।

 

দুই শিক্ষার্থী ও রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন শুনানির জন্য ১০ জুলাই আপিল বিভাগে ওঠে। শুনানি শেষে সরকারি চাকরিতে নিয়োগে কোটার বিষয়ে পক্ষগুলোকে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দেন আপিল বিভাগ। কিছু পর্যবেক্ষণ, নির্দেশনাসহ এ আদেশ দেয়া হয়। এই স্থিতাবস্থা চার সপ্তাহের জন্য উল্লেখ করে আপিল বিভাগ আগামী ৭ আগস্ট পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন।আন্দোলনকারীরা আদালতের আদেশ মানে না দাবি করে নির্বাহী বিভাগের আদেশের দিকে তাকিয়ে বিক্ষোভ-সমাবেশ চালিয়ে আসছেন। 


সোমবার (১৫ জুলাই) দুপুরের পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। কয়েক ঘণ্টা চলা সংঘর্ষে উভয়পক্ষের অনেকে আহত হন। সন্ধ্যার পর পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ হয়। সেখানে অনেকে আহত হন।

 

তাদের সঙ্গে কোটা সংস্কারের দাবিতে মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে রাজধানীর ১৫-২০টি স্থানে একযোগে সড়ক অবরোধ শুরু করেন বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। অবরোধে গোটা রাজধানী অচল হয়ে পড়ে। পাশাপাশি চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, বগুড়াসহ দেশের প্রায় সর্বত্র শিক্ষার্থীরা সড়কে নেমে এসেছেন। শেষ খবর পর্যন্ত ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রংপুরে ছাত্রলীগ ও পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে ৬ জন নিহত হন।

 

নিহতদের গায়েবানা জানাজাকে কেন্দ্র করে বুধবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে পুলিশ এবং ছাত্রলীগের সঙ্গে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ হয়। এতে সাংবাদিকসহ আনেকে আহত হন।এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে বুধবার (১৭ জুলাই) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।


ভাষণে তিনি বলেন, আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের সুযোগ রয়েছে। এরপরও রাস্তায় আন্দোলনে নেমে দুষ্কৃতকারীদের সংঘাতের সুযোগ করে দেবেন না। সর্বোচ্চ আদালতের রায় আসা পর্যন্ত ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করার জন্য সকলকে অনুরোধ জানাচ্ছি। আমার বিশ্বাস, আমাদের ছাত্রসমাজ উচ্চ আদালত থেকে ন্যায়বিচারই পাবে, তাদের হতাশ হতে হবে না।জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের পরপরই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফেসবুক পেজে সারা দেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।