বিসিসি নির্বাচন: ভাই খায়েরকে বুকে টেনে নিলেন হাসানাত, নৌকার বিজয়ের ইঙ্গিত

নিজস্ব প্রতিবেদক
এইচ.এম.এ রাতুল, জেলা প্রতিনিধি, বরিশাল।
প্রকাশিত: শনিবার ৩রা জুন ২০২৩ ১১:১৩ অপরাহ্ন
বিসিসি নির্বাচন: ভাই খায়েরকে বুকে টেনে নিলেন হাসানাত, নৌকার বিজয়ের ইঙ্গিত

বরিশাল সিটি নির্বাচনের আর বাকী ৮ দিন। দীর্ঘ প্রায় ৪৮ দিন পর নৌকার মনোনয়ন পাওয়া আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতকে বুকে টেনে নিলেন বড় ভাই আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। ছোট ভাই আবুল খায়ের আবদুল্লাহকে আলিঙ্গন করে বিজয়সূচক ‘ভি’ চিহ্ন দেখান বড় ভাই হাসানাত। এসময় উপস্থিত নেতারা করতালি দিয়ে তাদেরকে স্বাগত জানান। শনিবার বিকেলে বরিশালের গৌরনদীতে বিভাগের ৫ জেলার সমন্বয়ে বিশেষ বর্ধিত সভায় এ দৃশ্য দেখা যায়। নৌকা মার্কার মেয়র প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাত সভাস্থলে এসে পৌছুলে অনুষ্ঠানের সভাপতি ও তার বড় ভাই আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ তাকে বুকে টেনে ঐক্যের বার্তা দেন। খায়ের আবদুল্লাহ ও বড় ভাই হাসানাত আবদুল্লাহর আলিঙ্গনের মধ্য দিয়ে বরিশাল সিটি নির্বাচনে আওয়ামীলীগের সৃষ্ট বিভেদের অবসান হবে বলে মনে করছেন দলটির নেতা-কর্মীরা। এছাড়া বরিশালে দলীয় প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখবে। একই সঙ্গে বিভাগে দলীয় রাজনীতিকেও গতিশীল করবে মনে করছেন তারা।


সূত্রমতে, বরিশাল সিটি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে বর্তমান মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ ও দলীয় প্রার্থী তাঁর চাচা আবুল খায়ের আবদুল্লাহর মধ্যে বিভেদ দানা বেঁধেছিল। মনোনয়ন পাওয়ার পর খায়ের আবদুল্লাহ বরিশালে ফেরার পর তাঁকে ঘিরে আলাদা একটি বলয় তৈরি হয়। প্রয়াত মেয়র শওকত হোসেন হিরণের অনুসারী নেতা-কর্মী, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের সমর্থক ও হাসানাত পরিবারের একচ্ছত্র আধিপত্যে ছিটকে পড়া পুরোনো নেতা-কর্মীরা খায়ের আবদুল্লাহকে সমর্থন দেন। এরই ধারাবাহিকতায় খোকন সেরনিয়াবাতের নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতে বাদ পড়েন ভাই হাসানাত ও ভাতিজা বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। এমন প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ বিভেদ নিরসনে হাসানাত আবদুল্লাহকে প্রধান করে ৯ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেয়। শনিবার বিকেলে ওই কমিটির ডাকে গৌরনদীতে বিশেষ সভা করে আওয়ামী লীগ। এর আগে ২৬ মে একই কমিটি গৌরনদীতে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভা আহ্বান করেছিল। কিন্তু ওই সভায় যোগ দেননি খায়ের আবদুল্লাহ। যাননি ভাতিজা সাদিক আবদুল্লাহও। ফলে তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিভেদের বরফ গলেনি। 


শনিবার অনুষ্ঠিত সভায় আলহাজ¦ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ্ (এমপি) বলেন, সকল মতভেদ ভুলে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে আগামী ১২ই জুন নৌকার প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাতকে বিজয়ী করে ঘরে ফিরবো ইনশাআল্লাহ্। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী এবং উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে হবে। আপনাদের হাতে আামার ¯েœহের ছোট ভাই খোকন সেরনিয়াবাতকে তুলে দিলাম।  উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা ওয়াদা করে যান, আপনারা আমার ছোট ভাই আবুল খায়ের আবদুল্লাহর পক্ষে কাজ করে তাঁকে জয়যুক্ত করবেন। পরে খায়ের আবদুল্লাহ উপস্থিত সবার উদ্দেশে বলেন, ‘সব ভেদাভেদ ভুলে আসুন, আমরা সবাই নৌকাকে জয়ী করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করি।’


এসময় মেয়র প্রাথী খোকন সেরনিয়াবাত বলেন  ‘ নিজেদের মধ্যে বিভেদ ভুলে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নূতন বরিশাল গড়তে হবে। এই নির্বাচন এই জন্য গুরুত্বপূর্ণ যে এর প্রভাব আশে পাশে সকল জেলায় পড়বে। আমরা এজন্য সকলের  সহযোগিতা চাই।


সূত্র জানায়, সভায় বিভাগের পাঁচ জেলার শীর্ষ নেতারা যোগ দেন। গৌরনদী পৌরসভা মাঠে অনুষ্ঠিত সভায় বড় ভাই হাসানাত আবদুল্লাহর পাশের চেয়ারে বসেন খায়ের আবদুল্লাহ। সভায় বিভেদ ভুলে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার নির্দেশনা দেন কেন্দ্রীয় নেতারা। দুই ভাইয়ের মান-অভিমান নিয়ে যখন ভোটের মাঠে নানা আলোচনা-সমালোচনা, তখন তাঁদের আলিঙ্গন ভিন্ন মাত্রা যোগ করবে বলে আশা করছেন দলটির নেতা-কর্মীরা।


প্রেসিডিয়াম মেম্বার আবদুর রহমান বলেন, হাসনাত ভাই যখন আয় খোকন আয় বলে খোকন ভাইকে বুকে টেনে নেন, তখন আমার বুকটা জুড়িয়ে যায়’ এর ফলে আমাদের নির্বাচনের চেহারা আজকে থেকে বদল হয়ে গেল।


যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাসিম বলেন, আমরা আবার প্রমান করে দিয়েছি দলের প্রয়োজনে, নেত্রীর মুখ রক্ষায়  সকলে মিলে নৌকাকে বিজয়ী করবো।


হাসানাত আবদুল্লাহর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও জাতীয় কমিটির সদস্য গোলাম আব্বাস চৌধুরী বলেন, সব দ্বিধাদ্বন্দ্ব ভুলে এখন পুরো শক্তি নিয়ে তাঁরা নৌকাকে বিজয়ী করতে মাঠে নামবেন। এটিকে একটি অভূতপূর্ব ঐক্যের ঘটনা বলেও মন্তব্য করেন তিনি।


আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বার জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন আমাদের বরিশালে পদ্মাসেতু সহ যোগাযোগ ব্যবস্থার অভূতপূর্ব উন্নয়ন করেছেন শেখ হাসিনা। বরিশালের প্রতিটি জেলা এখন ‘ঘরের দুয়ার ধারে’। এ জন্য সবাইকে সম্মিলিতভাবে খোকন সেরনিয়াবাতকে ভোট দেয়ার জন্য কাজ করতে হবে।


এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন, আর্ন্তজাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ, কেন্দ্রীয় কার্যনিবাহী সদস্য আনিসুর রহমান, গোলাম কবির রাব্বানি চিনু, সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দবেনাথ সম্ভু, আ.স ম  ফিরোজ, নুরুন নবী চৌধুরী শাওন, আরদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইফনুসসহ বরিশাল বিভাগের ৫ জেলার ও সকল উপজেলা আ’লীগের সভাপতি ও সম্পাদকদ্বয় এবং ৫ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, বিভাগের সকল উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়রগণ।