কুয়াকাটা সৈকতে মালিকানা দাবীতে ঝুঁকিপুর্ন স্থাপনা নির্মাণ!

নিজস্ব প্রতিবেদক
আনোয়ার হোসেন আনু, কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: শনিবার ১লা এপ্রিল ২০২৩ ০৫:২১ অপরাহ্ন
কুয়াকাটা সৈকতে মালিকানা দাবীতে ঝুঁকিপুর্ন স্থাপনা নির্মাণ!

রমজান মাসে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে স্থাপনা নির্মাণের হিড়িক পরেছে। সৈকতের জিরো পয়েন্টের দুই দিকে পাকা আধাপাকা ও সেমিপাকা স্থাপনা নির্মাণে জোট বেধেছে সৈকতের মালিকানা দাবীদাররা। সৈকতের পশ্চিম পাশের একাংশের মালিকানা দাবীদার সাজেদুল ইসলাম হিরু গংরা পরিবেশে প্রতিবেশ বিনষ্ট করে ঝুঁকিপুর্ন স্থাপনা বীরদর্পে নির্মাণ করছে। 


সৈকত এলাকায় স্থাপনা নির্মাণে পৌরসভা, বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির অনুমোদন নেয়ার নিয়ম থাকলেও এরা কাউকেই তোয়াক্কা করছেন না। জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে ঝুঁকিপুর্ন স্থাপনা নির্মাণ বন্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হচ্ছে। উল্টো অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ করতে গিয়ে তোপের মুখে পরতে হয়েছে ভূমি প্রশাসনকে। হুমকি দিচ্ছে দখলদাররা।  


আদালতের নিষেধাজ্ঞার ধুয়ো তুলে সরকার পক্ষ সৈকতের বিরোধীয় ভূমিতে প্রবেশ কিংবা হস্তক্ষেপের এখতিয়ার নেই এমন হুমকি ধামকি দিচ্ছে প্রকাশ্যেই। অথচ ভোগদখলকারীরা পর্যটনের পরিবেশ প্রতিবেশের তোয়াক্কা না করে প্রতিনিয়ত পাকা,আধাপাকা মার্কেট, আবাসিক হোটেল,খাবার হোটেল ও পর্যটন নির্ভর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করে আসলেও মামলা জটিলতায় ব্যবস্থা নিতে পারছে না জেলা প্রশাসন ও বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি। 


ফলে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত এলাকার সৌন্দর্য বর্ধন,পরিবেশ রক্ষায় পদক্ষেপ নিতে পারছেন না জেলা প্রশাসন । সৈকত এলাকায় অপরিকল্পিত  ভাবে গড়ে ওঠা হোটেল রেস্তোরাঁ,দোকানপাটের বর্জ,মল-মুত্র সমুদ্রের পানিতে ফেলা হচ্ছে। খোলা পায়খানা ও পয়ঃনিস্কাশনের ময়লা আবর্জনার দুর্গন্ধে নাকাল পর্যটকরা। এতে পর্যটকদের মাঝে কুয়াকাটার পরিবেশের প্রতি নেতিবাচক ধারণা তৈরি হচ্ছে।


জানা গেছে, কুয়াকাটা চৌরাস্তা বাহিরে সমুদ্র সৈকত লাগোয়া অর্ধ শতাধিক স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। সৈকতের এসব জমি জেলা প্রশাসন তাদের দাবি করে কয়েকবার উচ্ছেদের উদ্যোগ নিলেও মামলা জটিলতায় বার বার ব্যর্থ হয়েছে।  

 সৈকতের মালিকানা দাবী করে আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নিয়ে আসে ভোগদখলকারীগন। ভূমি প্রশাসনের দাবী কাগজপত্রের জোর না থাকলেও আদালতের নিষেধাজ্ঞাই একমাত্র সম্ভল এদের । সৈকত এলাকার এসব জমির মালিকানা দাবী নিয়ে সরকার বনাম সাজেদুল ইসলাম হিরু গংদের সাথে দীর্ঘদিন ধরে মামলা চলে আসলেও কোন সুরাহায় যেতে পারছে না জেলা প্রশাসন।

 সমুদ্র আইন অনুযায়ী সৈকতের জমির মালিকানা সরকারের এমন আইন থাকলেও তা শুধু কাগুজে আইন।বাস্তবতায় ভিন্ন এমনটাই মনে করছেন সৈকত প্রেমীরা।


সৈকতে যেখানে জোয়ার ভাটায় সমুদ্রের পানি এসে আঁচড়ে পরছে সেখানে লোহার এঙ্গেল দিয়ে সৈকতের বিরাট অংশ জুড়ে তিন তলা ঝুঁকিপুর্ন স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। যেখানে রয়েছে খাবার হোটেল, আবাসিক হোটেল, ঝিনুক মার্কেট। স্থাপনাটি এতই উচু এবং ঝুঁকিপুর্ন যে কোন সময় ঝড়ো বাতাসে ভেঙে পরে বড় ধরনের দূর্ঘটনার সম্ভাবনা রয়েছে। ঝুঁকিপুর্ন এ স্থাপনার নির্মাণ  কাজ পরিদর্শন শেষে জেলা প্রশাসককে  অবহিত করেছে উপজেলা প্রশাসন । মামলা জটিলতা নিরসন করে সৈকত এলাকার দখলমুক্ত করতে জেলা প্রশাসন জোরালো উদ্যোগ নিয়েছেন বলে সু্ত্র জানিয়েছেন। 


এরই মধ্যে আবাসিক হোটেল সী কুইন কতৃপক্ষের নতুন করে নির্মাণাধীন একটি আধাপাকা স্থাপনা অপসারণ করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন। একদিকে উচ্ছেদের উদ্যোগ,অন্যদিকে একাধিক নতুন নতুন স্থাপনা গড়ে তোলা হচ্ছে। 


পরিবেশ আইনবিধ সমিতি (বেলা) বরিশাল বিভাগীয় সমন্বয়কারী লিংকন বায়েন বলেন, কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে দেশ বিদেশ থেকে হাজার হাজার পর্যটকদের আগমন ঘটে। সেখানে ঝুঁকিপুর্ন ভবন নির্মাণ করা বেআইনি। তিনি আরো বলেন সৈকতের সৌন্দর্য রক্ষা করে পর্যটনের পরিবেশ সৃষ্টি করার নির্দেশনা থাকলেও তা কার্যকরে আরো জোরালো ভূমিকা নিতে হবে। 


এ বিষয়ে স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীরা তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে নির্মাণাধীন সরদার মার্কেটের দেখভালের দ্বায়িত্বে থাকা নিপু (৩০) দম্ভোক্তি করে বলেন, আপনারা যা পারেন লেখেন। আমরা আমাদের কাজ করবো। এ ব্যাপারে নির্মাণাধীন সরদার মার্কেটের মালিক সাজেদুল ইসলাম হিরু এর মুঠো ফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া যায়নি।


ইউনিয়ন (ভূমি) সহকারী কর্মকর্তা মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, সমুদ্র সৈকত দখল করে ঝুঁকিপুর্ন স্থাপনা নির্মাণে নিষেধ কিংবা বাধা দিতে গেলে আদালত অবমাননার হুমকি দিচ্ছে দখলদাররা। এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন অবগত রয়েছে বলে জানান স্থানীয় এই ভূমি কর্মকর্তা।


এ ব্যাপারে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য সচিব মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন গণমাধ্যম কর্মীদের জানিয়েছেন, সৈকতের পরিবেশ প্রতিবেশ রক্ষা এবং দখল রোধে বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর কার্যক্রম ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। কেউ অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করে থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এরই মধ্যে একটি অবৈধ স্থাপনা অপসারণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।