কৃষকের মহতি ঊদ্যোগ, জমি বিক্রির টাকায় সড়ক নির্মাণ

নিজস্ব প্রতিবেদক
আনোয়ার হোসেন আনু, কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: বৃহঃস্পতিবার ৯ই ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৭:০০ অপরাহ্ন
কৃষকের মহতি ঊদ্যোগ, জমি বিক্রির টাকায় সড়ক নির্মাণ

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় এক কৃষক জমি বিক্রি করে প্রায় ১৫' শ ফুট সড়ক নির্মাণ করেছে। সড়ক না থাকায় গ্রামের মানুষের যেন ভোগান্তির শেষ ছিলো না। নিজের জমি বিক্রির টাকায় সড়ক নির্মাণ করে প্রশংসার পাশাপাশি এলাকার মানুষের জীবনমান উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। নীলগঞ্জ ইউনিয়নের কুমিরমারা গ্রামের কৃষক কামাল হোসেন ব্যক্তি উদ্যোগে সড়ক নির্মাণ করে জনপ্রতিনিধিদের গ্রামবাসীর প্রতি অবজ্ঞার জবাব দিয়েছেন এমনটাই মনে করেন গ্রামবাসী ।


জানাগেছে, নীলগঞ্জ ইউনিয়নের বেশির মানুষ কৃষক। ওই এলাকার কুমিরমারা গ্রামে চলাচলের কোন সড়ক না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে ওই গ্রামের আড়াইশ পরিবারের কয়েকশত মানুষকে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে আন্ধারমানিক নদীর জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যেতো ওই এলাকা। এতে অনাবাদি থাকতো কৃষকের জমি। এছাড়া স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী সহ গর্ভবতী মায়েদের যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাতে হতো। জনপ্রতিনিধিদের কাছে বার বার অনুরোধ করেও সড়ক নির্মাণ হয়নি দীর্ঘদিনেও। গ্রামের মানুষের এমন দূর্ভোগ লাগবে ভুক্তভোগী কৃষক কামাল হোসেন সকড়টি নির্মানের উদ্যোগ নেয়। নিজের কাছে নগত টাকা না থাকায় জমি বিক্রি করে টাকার সংগ্রহ করে। ১৪ শ ফুট লম্বা এবং ১৪ প্রস্থের এই সড়ক নির্মাণে এক বিঘা জমি ৭ লাখ টাকায় বিক্রি করে টাকা সংগ্রহ করেন। পনের দিন ধরে ভেকু দিয়ে মাটি কেটে সড়ক নির্মাণ করে এ কাজে স্থানীয়দের অনেকেই সেচ্ছাশ্রমে শ্রমিক হিসেবে সহযোগিতা করেছেন।  


কুমিরমারা গ্রামের বাসিন্দা সাইয়েদ মিয়া জানান, আগে এখানে একটি ভেড়ির মতো (ছোট সড়ক) ছিলো। এখান থেকে একজন মানুষ হাটাচলা করতে খুবই কষ্ট হতো। এছাড়া জোয়ারের পানি প্রবেশ করে সবই তলিয়ে থাকতো। আমরা বার বার মেম্বর চেয়ারম্যানে কাছে ধর্না ধরে এমনকি মানববন্ধন করেও রাস্তাটি নির্মান করাতে পারিনি। কৃষক কামাল হোসেন এই রাস্তাটি নির্মান করেছেন। আমরা তার জন্য দোয়া করি। একই এলাকার অপর বাসিন্দা সুলতান মিয়া জানান, আমদের কুমিরমারা গ্রামে সবচেয়ে চেয়ে সবজি চাষ হয়। এ এলাকার বেশির ভাগ মানুষই কৃষক। দীর্ঘদিন ধরে সড়ক না থাকার কারনে আমাদের সবজি বাজারে পৌছাতে ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হতো। এখন এই সড়কটি নির্মানের ফলে আর সমস্যা হবেনা। কামাল হোসেনের এই মহতী কাজের জন্য গ্রামের মানুষ বাহবাহ জানিয়েছেন। 


কৃষক কামাল হোসেন বলেন , প্রায় এক বছর আগে আমি এই ভেড়ি (ছোট সড়ক) দিয়ে যাচ্ছিলাম। তখন এক গর্ভবতী মাকে একটি ভ্যানে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো। ভেড়ির অবস্থা এতটা খারাপ ছিলো যে, ভ্যানটি হঠাৎ বিলের মধ্যে পড়ে যায় এবং ওই গর্ভবতী মা ওখানে বসেই সন্তান প্রসব করেন। যেটা দেখে আমার খুবই খারাপ লেগেছে। স্থানীয় জনপ্রতিধিদের কাছে গেলে বরাদ্দ না থাকায় তারা করতে পারেনি। তখনই আমি নিজ থেকেই পন করি ওই সড়কটি নির্মান করে দিবো। পরে আমার নিজের ৩০ শতাংশ জমি বিক্রি করে ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে সড়কটি নির্মান করে দেই।  

নীলগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাবুল মিয়া জানান, কৃষক কামাল হোসেন সড়ক নির্মান করে মহতী কাজ করেছেন। তাকে আমি স্বাদুবাদ জানাই। সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজে বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।