সীমান্তের শূন্যরেখায় শেষ দেখা

নিজস্ব প্রতিবেদক
এস এম তারেক হোসেন, জেলা প্রতিনিধি মেহেরপুর
প্রকাশিত: রবিবার ২৭শে নভেম্বর ২০২২ ০৩:১৮ অপরাহ্ন
সীমান্তের শূন্যরেখায় শেষ দেখা

কাঁটাতারে বাঁধা রক্তের সম্পর্ক। দেশ বিভক্ত হওয়ার আগে ওপার বাংলায় পারিবারিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে এপার বাংলার অসংখ্য পরিবারের। মানচিত্রে এখন দুইদেশের নাগরিক তারা। কিন্তু শরীরে বইছে একই পরিবারের রক্ত। সম্পর্কটাকে আলাদা করে রেখেছে শুধুমাত্র সীমান্তের তারকাঁটা আর ভৌগোলিক দূরত্ব। চিরচেনা স্বজনদের সাথে দেখা করার সুযোগ একেবারেই শূন্য। দুই বাংলার অসংখ্য মানুষের স্বজনদের এখন দুইদেশে বসবাস। দেখা হয়না বছরের পর বছর।


৩০ বছর পূর্বে মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর উপজেলার ভবেরপাড়া গ্রামের ফিলিপ হালসোনার মেয়ে সুকৃতি মন্ডলের বিয়ে হয় ভারতের নদীয়া জেলার হৃদয়পুর গ্রামের সঞ্জিত মন্ডলের সঙ্গে। ভবেরপাড়া ও হৃদয়পুরের দুরত্ব মাত্র ২কিলোমিটার হলেও অবাধে যাতায়াতে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় সীমান্তের তারকাঁটা। যার ফলে দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ থাকলেও সুকৃতি মন্ডলকে দেখার সুযোগ পায়নি এপার বাংলার স্বজনরা। 


গত (২৫শে নভেম্বর) শুক্রবার ভারতের নদীয়ার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় সুকৃতি। আবেদনের প্রেক্ষিতে স্বল্প সময়ের জন্য সুকৃতির মরদেহ দেখার সুযোগ পায় এপার বাংলার ভবেরপাড়ায় থাকা তার পরিবারের স্বজনরা।


 সীমান্তের শূন্যরেখায় কাঁটাতারের বাঁধা পেরিয়ে (২৬শে নভেম্বর) শনিবার দুপুরের দিকে বিজিবি এবং বিএসএফের পতাকা বৈঠকের মধ্যে দিয়ে মেহেরপুরের মুজিবনগরের স্বাধীনতা সড়কের অদূরে বেলতলা সীমান্তের ১০৫ নং পিলারে বাংলাদেশী কন্যা ও ভারতীয় নাগরিক সুকৃতি মন্ডলের লাশ বাংলাদেশী স্বজনদের শেষ বারের মতো দেখার সুযোগ করে দেয় দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি এবং বিএসএফ। এসময় দুইদেশী স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে ভারত বাংলাদেশ সীমান্তের শূন্য রেখা।


বিজিবি এবং বিএসএফের এমন মানবিকতাকে ধন্যবাদ জানায় দুই বাংলার স্থানীয় বাসিন্দারা। ভবিষ্যতে সীমান্তে এমন মানবিক উদ্যােগ সচল রাখার দাবি জানান তারা। এসময় মুজিবনগর বিজিবি ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার শেখ শহিদুল ইসলাম ও বিএসএফ এর হৃদয়পুর ক্যাম্পের  অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তরুণ কুমার শর্মার নেতৃত্বে সীমান্তরক্ষী দুই বাহিনীর দুটি দল স্বাধীনতা সড়কের অদূরে বেলতলা সীমান্তের শুন্য রেখায় উপস্থিত ছিলেন।