আগামী নির্বাচনে সরকার ফাঁকা মাঠে গোল দিতে চায় কিন্তু জনগণ আর তা মেনে নেবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।শুক্রবার (৭অক্টোবর) গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।তিনি বলেন, ওনারা (শেখ হাসিনা) তো চানই বিরোধী দল নির্বাচনে না আসুক। ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়ার অভ্যাস হয়ে গেছে ওনাদের। ওয়াক ওভার। আমরা বলেছি যে, এই ধরনের ইলেকশন জনগণ মানবে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা তো একটা লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি, আমরা তো নির্বাচন করতেই চাই কিন্তু সেই নির্বাচনটা তো হতে হবে নির্বাচনের মতো। ওটা তামাশা হওয়ার জন্য তো হবে না। যারা ভোটের আগের রাতেই ভোট করে ফেলে, ভোট নিয়ে চলে যায়। ১৫৪ জনকে নির্বাচিত করে দিল, নির্বাচন হয়ে গেল। প্রার্থীরা কেউ ক্যাম্পেইনে নামতে পারবে না। তাদেরকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হবে। দেশে একটা ভয়-ভীতি ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করা হবে-এটা তো হতে পারে না।
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগদান শেষে দেশে ফিরে বৃহস্পতিবার গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘একেবারে সবাইকে লোকমা তুলে খাওয়ায়ে দিতে হবে, জিতিয়ে দিতে হবে। তবেই (নির্বাচনে) আসবে -এটা তো হতে পারে না। মিলিটারি ডিক্টেটররা এভাবেই করেছে। তারা তো জনগণের কাছে যেতেই ভয় পায়। জনগণের সামনে ভোট চাইতে গিয়েও ভয় পায়। ’
প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, এভাবেই তিনি টিকে আছেন। জনগণকে প্রতারণা করে, মিথ্যা কথা বলে, ভয় দেখিয়ে-সব কিছু করে টিকে আছেন। নির্বাচনে আমাদের ভয় পাওয়ার প্রশ্ন নেই। বরং তারা ভীত হয়ে আছেন। তারা সন্ত্রস্ত্র হয়ে আছেন। যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয় তাহলে তারা ক্ষমতায় আসতে পারবে না-এটাই হচ্ছে মূল কথা। যে কারণে তারা আজ বিভিন্ন কলাকৌশল করে, বিভিন্ন রকম প্রতারণা করে, জনগণকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত করে দিয়েছে ভোট দেওয়া থেকে। মানুষই তো ভোট দিতে যায় না এখন।
তিনি বলেন, এরা (আওয়ামী লীগ) ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য নির্বাচনকে একটা প্রহসন, একটা খেলায় পরিণত করেছে। আপনারা দেখবেন, অধ্যাপক আলী রিয়াজের যে হাইব্রিড ডেমোক্রেসি বইটা আছে সেটার মধ্যে বলা আছে, এই সমস্ত দেশগুলো কর্তৃত্ববাদী। যেখানে শেকড় গেড়ে বসে সেখানে নির্বাচনটা তাদের অন্যতম অস্ত্র।
সেই অস্ত্রটা কী তারা দেখায় যে, আমরা একটা নির্বাচন করেছি। উই আর ইলেক্টেড গভমেন্ট। বাট দেয়ার ইজ নো ইলেকশন আসলে কোনো ইলেকশন হবে না। পৃথিবীর অনেকগুলো দেশ আছে এভাবে তারা নির্বাচন করে, এভাবে তারা টিকে থাকার চেষ্টা করে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা সংলাপ করছি তাদের সঙ্গে যারা এই সরকারকে মানে না, যারা মনে করে যে, এই সরকার দেশের গণতন্ত্রকে ধবংস করে দিয়েছে-তাদের সঙ্গে আমরা সংলাপ করছি। আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপের কোনো সুযোগ নাই, প্রশ্নই ওঠে না। দে মাস্ট লিভ, তাদেরকে চলে যেতে হবে। আমরা বার বার করে বলছি যে, চলে গিয়ে নতুন তত্ত্বা্বধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা দিতে হবে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার কাজ করবে।
নির্বাচন নিয়ে সরকার আলোচনায় ডাকলে যাবেন কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি স্পষ্টভাষায় বলেন, প্রশ্নই উঠতে পারে না। আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত কোনো আলোচনার সুযোগ নেই, কোনো আলোচনা হবে না।যুগপৎ আন্দোলন কবে নাগাদ শুরু হতে পারে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করছি। সময়টা এখনই বলা যাবে না। সেই সংলাপ যখনই শেষ হবে তখন বলতে পারবো।
পুলিশ কর্মকর্তাদের ওপরে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া স্যাংশন বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, আমি বরাবর একথাটি বলে এসেছি। আসলে স্যাংশনটা আসা উচিত বর্তমান সরকারের ওপরে। কারণ যা কিছু হচ্ছে সরকারের নির্দেশেই হচ্ছে। মূল উদ্দেশ্যেটা হচ্ছে বিরোধী দলকে দমন করা। তারা যে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে আছে তার বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবাদ না হয়। জনগণ যেন রাস্তায় বের হতে না পারে সেজন্য তারা এই কাজ করছে। আপনারা দেখেছেন জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে আন্দোলন হয়েছে। সেখানেও তারা গুলি করে মানুষ হত্যা করেছে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপরে স্যাংশন দেওয়া মানেইতো গোটা জাতির ওপরে স্যাংশন দেওয়া। এরআগে আমরা বলেছি, এটা আমাদের জন্য লজ্জার। কলঙ্কের বিষয় যে আমাদের একটা বাহিনীর ওপরে স্যাংশন দেওয়া হয়েছে। এ স্যাংশনটা আমরা আশা করিনি।সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অ্যাডভোকেট এজে মোহাম্মদ আলী ও আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল উপস্থিত ছিলেন।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।