ধানের জেলায় উত্তপ্ত চালের বাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক
রিফাত হোসাইন সবুজ, জেলা প্রতিনিধি, নওগাঁ
প্রকাশিত: মঙ্গলবার ৩১শে মে ২০২২ ০৬:০৪ অপরাহ্ন
ধানের জেলায় উত্তপ্ত চালের বাজার

কৃষি প্রধান দেশের সর্ববৃহৎ উত্তরের জেলা নওগাঁ। এ জেলায় প্রচুর পরিমানে ধান আবাদ হয়ে থাকে।  স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় এ উদপাদিৎ চাল সরবরাহ করা হয়ে থাকে। চলতি ভরা মৌসুমে জেলায় চালের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা বাজারে প্রকার ভেদে চালের দাম বেড়েছে প্রতি কেজিতে ৮ থেকে ১০ টাকা। দাম বাড়ার কারন হিসাবে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, মোকাম থেকে বেশি দামে চাল কিনতে হচ্ছে। যার কারনে খুচরা বাজারেও প্রভাব পড়েছে। অন্যদিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে চালের বাজার নিয়ন্ত্রনে আশ^াস জেলা প্রশাসনের।


ধান চালের উদ্বৃত্ত জেলায় বেড়েই চলেছে চালের দাম। গত ১৫ দিনের ব্যবধানে প্রকার ভেদে চালের দাম বেড়েছে প্রতি কেজিতে ৮ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। এতে বিপাকে পড়েছে মধ্যবিত্ত ও নি¤œআয়ের মানুষ।


সরেজমিনে নওগাঁ শহরের পৌর খুচরা চালবাজার ঘুরে দেখা যায়, বর্তমানে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি স্বর্ণা-৫ জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ৪২ টাকায়। এছাড়াও কাটারি জাতের চাল প্রতি কেজি ৬৮টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৭৫টাকায়, জিরাশাইল চাল এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৬০ টাকায় সেটি এখন বিক্রি হচ্ছে ৭০। তবে অন্যান্য চালের দাম তেমন একটা বৃদ্ধি পায়নি।


শহরের পৌর খুচরা চাল বাজারে চাল কিনতে এসেছেন রিক্সা চালক কুদ্দুস মন্ডল। এসময় কুদ্দস বলেন, দিন শেষে যে টাকা পাই চাল কিনতে এসে তার পুরোটাই চলে যাচ্ছে। অন্যান্য বাজারতো দূরের কথা। এভাবে যদি প্রতিদিনই চালের দাম বৃদ্ধি পেতে থাকে তাহলে আমরা নিম্ম আয়ের মানুষরা কোথায় গিয়ে ঠাঁই নিবো।


নওগাঁ শহরের থানার মোড় এলাকার ভ্যান চালক নজরুল হোসেন চাল কিনতে আসলে তার সঙ্গে কথা হয়। এসময় তিনি বলেন, ‘আজকে বাজারে এসে দেখি চালের দাম বেড়েছে। স্বর্ণা-৫ জাতের পাঁচ কেজি চাল কিনতে আসছিলাম, দাম বেশি দেখে তিন কেজি কিনলাম। যে চাল কিছুদিন আগে ৪২ টাকায় কিনেছিলাম আজকে ৫০ টাকা কেজি দরে কিনলাম। 


শহরের খাস-নওগাঁ মহল্লার বাসিন্দা জাফর আলী, কাটারি জাতের চাল কয়েকদিন আগে প্রতি কেজি ৬৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছিল। আমি ৫ কেজি চাল কিনে নিয়ে গেছি। বর্তমানে সেই চাল আজকে এসে দেখি খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকায়। আমরা স্বল্প আয়ের মানুষ। কেজিতে ৭ টাকা করে বেড়ে যাওয়াতে অন্যদের সমস্যা হবে না কিন্তু আমাদের মত মানুষদের অনেক বড় সমস্যা যা বুঝার মত কেউ নাই। বাজারে প্রতিটি পন্যর দাম বেড়েছে। তার সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে চালের দাম। এই ভাবে চলা অম্ভব হয়ে পড়েছে।


চালের দাম বাড়ার কারন হিসাবে জানতে চাইলে নওগাঁ পৌর খুচরা চাল বাজার সমিতির সভাপতি উত্তম সরকার বলেন, পাইকারি কেনার ওপর খুচরা দর ঠিক করা হয়। দাম বাড়ানো বা কমানো কোনো কিছুতেই খুচরা বিক্রেতাদের কিছুই করার থাকে না। বর্তমানে মোকাম থেকেই প্রকার ভেদে মোকাম থেকে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) চালের দাম ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেড়েছে। খুচরা বাজারেও চালের দাম বেড়ে গেছে।


এই খুচরা ব্যবসায়ী আরও বলেন, দাম বাড়ার পিছনে আমাদের কিছু করার নেই। তবে নিয়মিত ভাবে যদি সরকারের পক্ষ থেকে বাজার মনিটরিং করা হতো তাহলে এভাবে হুটহাট করে চালের দাম বাড়তো না। 


নওগাঁ পৌর ক্ষুদ্রচাল ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি মকবুল হোসেন বলেন, বোরো ও আমনের ভরা মৌসুমে সাধারণত চালের সরবরাহ বেশি থাকায় চালের দাম বছরের অন্য সময়ের তুলনায় কম থাকে। কিন্তু এবার ঈদের (ঈদুল ফিতর) পর থেকে বোরো মৌসুমের চাল বাজারে আসা শুরু করতেই চালের দাম না কমে উল্টো বাড়তির দিকে। গত দুই সপ্তাহ ধরে প্রায় প্রতি দিনই চালের দাম বাড়ছে। অবস্থা এমন হয়েছে একদিন পরপর মোকামে প্রতি বস্তা চালের দাম ৫০ থেকে ৮০ টাকা করে বাড়ছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে আগামী দুই-তিন সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা পর্যায়ে ক্রেতাদের ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি দরে চাল কিনে খেতে হবে। চালের দাম হঠাৎ বৃদ্ধি পাওয়ায় খুচরা বাজারে কমেছে ক্রেতার সংখ্যা। সবাই অপেক্ষা করছে দাম কমার।


অন্যদিকে জেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বলেন, চালের দাম বাড়ার অন্যতম কারণ হলো হঠাৎ ধানের দাম বেশি। বৈরি আবহাওয়ার কারনে নওগাঁসহ উত্তরাঞ্চলে ধানের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। ধানের উৎপাদন কম হওয়ার আশঙ্কার কারনে বাজারে ব্যবসায়ীদের ধান কেনার প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। বেশি দামে ধান কেনার পর চাল উৎপাদনের পর খরচ সমন্বয় করতে গিয়ে চালের দাম বাড়াতে হচ্ছে।


চালের বাজার নিয়ন্ত্রনের আশ^াস দিয়ে জেলা প্রশাসক খালিদ মেহেদী হাসান বলেন, চালের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি অবগত হয়েছি। চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে দ্রুত প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালনা করা হবে। সেই সাথে যে সব অসাধু ব্যবসায়ীরা অকারণে চালের দাম বাড়িয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।