চট্টগ্রামের কাজী মোহাম্মদ আলী, ছোট বেলায় দেখেছেন টাকার অভাবে চিকিৎসা না পাওয়া রোগীদের কষ্ট। তখনই প্রতিজ্ঞা করেছিলেন মানুষের জন্য কিছু একটা করার। এরপর তিল তিল করে ৪১ বছর ধরে জমিয়েছেন ৫০ লাখ টাকা। সেই টাকা ‘ওয়াকফ’ হিসেবে দান করেছেন চট্টগ্রাম মেডিক্যালে, এর লভ্যাংশ ব্যয় হবে ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসায়।
চট্টগ্রামের কাজী মোহাম্মদ আলীর দিন কাটে নাতি-নাতনিদের সাথে খুনসুটিতে। কিন্তু তার মন পড়ে থাকে গরীব অসুস্থ শিশুদের কাছে।
মোহাম্মদ আলীর ছোটবেলা এতো স্বচ্ছল ছিলনা। শুধু নিজ পরিবারের দুর্দশা নয় দেখেছেন হাসপাতালে গরিব মানুষের দুর্দশাও। তখনই তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মানুষের জন্য কিছু একটা করার।
তিনি জানান, “আমার মনে দাগ কাটত যে আরও বেশি দিন চাকরি করি এবং শেষ বয়সে এসে যদি এদের জন্য কিছু করতে পারি তাহলে আমার ভাল লাগবে। আগে থেকে দুই-চার-পাঁচ টাকা টিনের পটে ফেলে রাখতাম। আস্তে আস্তে সংখ্যাটা বড় হলো।”
বছর বিশেক আগে মোহাম্মদ আলীর মা মারা যান ক্যান্সারে। এর বছর পাঁচেক পর এই রোগেই মারা যান তার ভাগনি। এর আগে নানাকেও একইভাবে হারিয়েছেন। এসব ঘটনা তার মনে দাগ কেটেছিল। তাই তিল তিল করে জমানো ৫০ লাখ টাকা তুলে দিয়েছেন ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসার জন্য।
মোহাম্মদ আলী বলেন, “ওয়াকফ অ্যাকাউন্ট নামে হিসাব খুললাম। ওই অ্যাকাউন্টে এই ৫০ লাখ আমি ফিকসড ডিপোজিট করলাম। এর লভ্যাংশ দিয়ে প্রতিবছর ক্যান্সার রোগীদের জন্য ব্যয় করা হবে।”
ওয়াক্ফ হিসাবের মূল টাকা ব্যাংক থেকে কেউ তুলতে পারবেন না। কেবল বছর শেষে মুনাফাটা পাবে রোগী কল্যাণ সমিতি। সেই টাকায় চিকিৎসা হবে অসহায় শিশুদের।
চমেক হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক অভিজিৎ সাহা বলেন, “প্রতিবছর এটার লভ্যাংশ রোগী কল্যাণ সমিতির অ্যাকাউন্টে জমা হবে।”
চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান বলেন, “এই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গরীব রোগীরাই চিকিৎসা নিতে আসেন। তাদের বেশির ভাগ এখান থেকেই দেওয়ার চেষ্টা করি। তারপরেও যা অতিরিক্ত লাগবে তার এক তৃতীয়াংশ এই টাকা থেকে পূরণ করা সম্ভব।”
এই সহায়তায় ক্যান্সার আক্রান্ত কোনো শিশু চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরে গেলে শতভাগ শান্তি পাবেন ৮০ ছুঁই ছুঁই মোহাম্মদ আলী।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।