দৌলতপুরে ২০ বছরের হাট তুলে দিল প্রশাসন

নিজস্ব প্রতিবেদক
গোলাম সিদ্দিক জান্টু, জেলা প্রতিনিধি কুষ্টিয়া
প্রকাশিত: বৃহঃস্পতিবার ২০শে জানুয়ারী ২০২২ ০৯:২৫ অপরাহ্ন
দৌলতপুরে ২০ বছরের হাট তুলে দিল প্রশাসন

সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণের লক্ষে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে সড়কের পাশ থেকে ২০ বছরের পুরনো সাপ্তাহিক হাট তুলে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। পরে এই হাট স্থানান্তর করা হয়েছে উপজেলার প্রধান সড়কের পার্শ্বসড়কের দুই পাশে। উপজেলার এই হাটটি স্থানান্তরে বাজার কমিটি আরো দুদিন সময় চাইলেও তা মানেনি প্রশাসন। ফলে তড়িঘড়ি করে বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) হাটটি সরিয়ে নেয় উপজেলা বাজার কমিটি। 


জানা যায়, ২০০১ সালে বিএনপির নেতৃত্বে চারদলীয় জোট সরকারে আসার পর এলাকার মানুষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে দৌলতপুর উপজেলা পরিষদ বাজারে সাপ্তাহিক হাট বসানো হয়। সপ্তাহে তিনদিন রোববার, মঙ্গলবার ও বৃহস্পতিবার উপজেলা বাজারে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে নির্দিষ্ট জায়গায় এই হাট চলে আসছিল। তবে দিন দিন হাটটি সম্প্রসারিত হয়ে প্রধান সড়কের দুই পাশে গিয়ে ঠেকে। এর ফলে সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ায় তা নিয়ন্ত্রণের লক্ষে বৃহস্পতিবার স্থানীয় প্রশাসন এই হাট তুলে দেয়। তবে হঠাৎ করেই হাটটি তুলে দেয়ায় এতে স্থানীয়দের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। 


এদিকে ২০ বছরের পুরনো এই হাট তুলে দেয়ায় হাটে বসা কাঁচা তরকারি ও মাছ, মাংসসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের ব্যবসায়ীদের মাঝে অসন্তোষ দেখা গেছে। হাট স্থানান্তরের ফলে আগের তুলনায় বেচাকেনা অর্ধেকে নেমে আসবে বলে তারা মনে করছেন। তারা বলছেন, এতদিন পথ চলতি মানুষজন তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় কাঁচা তরিতরকারিসহ অন্যান্য পণ্য কিনে আসলেও এখন তা থেকে বঞ্চিত হতে হবে। অনেকে এখান থেকে হাট উঠে গেছে ভেবে গন্তব্যে ফিরে যাবেন। 


বাজারের প্রধান সড়কের পার্শ্বসড়কে হাট স্থানান্তরের প্রথমদিন বৃহস্পতিবার হাটে বসা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগের হাটের (মঙ্গলবার) তুলনায় এদিন বেচাকেনা অর্ধেক কমে গেছে। এর আগে অন্তত রাত ৯টা পর্যন্ত অনেকে হাটে বেচাকেনা করে আসলেও বিক্রি না হওয়ায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পরপরই তারা মালামাল গুটিয়ে নিয়েছেন। 


দৌলতপুর থানা বাজার থেকে আসা আনোয়ার হোসেন জানালেন, খরিদ্দারের অভাবে বেশিরভাগ কাঁচা তরকারি পড়ে রয়েছে। তাই অবিক্রীত মালামাল নিয়ে আগেভাগেই ফিরে যেতে হচ্ছে। চক দৌলতপুর এলাকার মাছ ব্যবসায়ী পলাশ আলী জানান, অাগের স্থানে হাট বসলে এতক্ষণ সব মাছ ফুরিয়ে যেত। কিন্তু আজ নতুন জায়গায় বসে অর্ধেক মাছও বিক্রি হয়নি। বছর পেরিয়ে গেলেও এখানে হাট জমবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন। 


উপজেলার পূর্বপাড়া এলাকার সবজি ব্যবসায়ী কটা হোসেন প্রতি হাটে রাত ১১টা পর্যন্ত তার ছেলের চায়ের দোকানের সামনে বসে সবজি বেচেন। বেচাকেনাও ভালো হয়। কিন্তু বৃহস্পতিবার হাট সরিয়ে দেয়ার কারণে তার সেই বেচাকেনায় ভাটা পড়েছে। সন্ধ্যার পরে কটা জানান, তখন পর্যন্ত তার তিনভাগের একভাগ সবজিও বিক্রি হয়নি। শীতের ভেতর অযথা বসে থেকে লাভ নেই। গত হাটের তুলনায় এদিন আগেই মালামাল গুটিয়ে নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি। এই স্থানান্তরিত জায়গায় হাট না জমলে পাখিভ্যান চালানোর ওপর জোর দেবেন বলে জানান সবজি ব্যবসায়ী কটা। 


অন্যদিকে স্থানীয় লোকজন বলছেন, সড়কের দুই পাশ থেকে এই হাট সরিয়ে দেয়ার মধ্য দিয়ে সঠিক একটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় হাটে বসা ব্যবসায়ীরা প্রথমের দিকে কয়েক মাস একটু ক্ষতির শিকার হলেও পরে স্বাভাবিক হয়ে যাবে। তবে এত তড়িঘড়ি না করে হাটটি ঠিকভাবে বসানোর জন্য আরেকটু সময় দেয়ার দরকার ছিল বলে তারা অভিমত ব্যক্ত করেন। এদিকে দৌলতপুর উপজেলা পরিষদ বাজারে প্রতি সপ্তাহে তিনদিন বসা এই হাট হঠাৎ করে তুলে দেয়া হলেও উপজেলার রিফায়েতপুর বাজারসহ আরো কয়েকটি বাজারে সড়কের দুই পাশে আগের মতোই বৃহস্পতিবার হাট বসেছে বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে। 


দৌলতপুর উপজেলা বাজার কমিটির সভাপতি কাজিমউদ্দিন জানান, দুইদিন আগে (মঙ্গলবার) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাদের ডেকে বাজারের ওপর এবং সড়কের দুই পাশে বসা সাপ্তাহিক হাট তুলে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এ সময় উপজেলা পরিষদের আওতায় থাকা নির্দিষ্ট কয়েকটি ফাঁকা জায়গার কথা উল্লেখ করে যে কোনো এক জায়গায় হাটটি স্থানান্তরের প্রস্তাব করা হলে ইউএনও রাজি হননি। তিনি অনড় অবস্থানে থাকায় শেষমেষ হাট স্থানান্তরে অন্তত আরো দুইদিন আগামী শুক্রবার ও শনিবার পর্যন্ত সময় চাওয়া হলে তিনি তাতেও রাজি হননি। 


এ প্রসঙ্গে দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল জব্বার জানান, সরকারের জননিরাপত্তা বিভাগের রিট পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে সারাদেশে সড়কের পাশে হাট-বাজার সরানোর আদেশ রয়েছে। সেই মোতাবেক সড়ক নিরাপত্তার লক্ষে সড়কের পাশে কোনো হাট আর বসতে দেয়া হবে না। প্রথম পর্যায়ে উপজেলা বাজারের হাটটি সরিয়ে দেয়া হয়েছে। উপজেলা পরিষদে অনেকগুলো দপ্তর রয়েছে। এখানে প্রতিদিন অনেক মানুষ যাতায়াত করেন। সুতরাং উপজেলা হেডকোয়ার্টার হিসেবে এখানে অধিকতর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে উপজেলার অন্যান্য বাজারেও সড়কের পাশে যেসব হাট রয়েছে সেগুলো তুলে দেয়া হবে।