ছেলের চেয়ে মা যখন ১০ মাসের বড় !

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: শুক্রবার ৮ই জানুয়ারী ২০২১ ০৪:০২ অপরাহ্ন
ছেলের চেয়ে মা যখন ১০ মাসের বড় !

ছেলের চেয়ে মা বড় মাত্র ১০ মাসের। বাবা বয়সের চেয়ে ছেলে ছোট মাত্র চার বছরের। জাতীয় পরিচয়পত্রে (স্মাটকার্ড) উল্লেখিত জন্ম তারিখে তাঁদের তিনজন মা-বাবা ও ছেলে এই বয়সের পার্থক্য রয়েছে। তারা হলেন, জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার আহম্মেদাবাদ ইউনিয়নের বালাইট পূর্বপাড়া গ্রামের মো. মোছলিম উদ্দিন, মোছা. ছুরতন বেগম ও মো. সোবহান। বয়স সংশোধনের নানান শর্তের বেড়া জালে তাঁরা বয়স সংশোধন করতে পারেননি। জাতীয় পরিচয়পত্র স্মাটর্কাডের সুবিধার চেয়ে উল্টো অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে তাঁদের। জাতীয় পরিচয়পত্রে মা-বাবা ও ছেলের বয়সের অদ্ভুদ পার্থক্যে কারণে বয়স্ক ভাতা জোটেনি।

জাতীয় পরিচয় পত্রে বয়সের সমস্যায় পড়া এই তিন জন হলেন, মোছলিমউদ্দীন তাঁর স্ত্রী মোছাঃ ছুরতন বেগম ও তাঁদের বড় ছেলে মোঃ সোবহান। তাঁদের বাড়ি জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার বালাইট পূর্বপাড়া গ্রামে। মোছলিম উদ্দিন পেশায় এক ভিক্ষুক। তিনি স্ত্রী মোছাঃ ছুরতন বেগমকে নিয়ে কালাই পৌরশহরের কলেজ পাড়া মহল্লায় একটি কুঁড়ে বাড়িতে থাকেন। তাঁদের পাশের বাড়িতে বড় ছেলে মো. সোবহানও থাকেন। মো.মোছলিম উদ্দীন ও মোছা.ছুরতন দম্পতির চার ছেলে। বড় ছেলে মো.সোবহান ভ্যানচালক।

মো. সোবহানের বারা মোছলিম উদ্দীনের জাতীয়পত্রের (স্মার্টকার্ড) নম্বর ৪৬০৮১২৯১১২। জাতীয় পরিচয় পত্রে তাঁর জন্ম তারিখ ২৮ অক্টোবর ১৯৫৯ সাল রয়েছে। তাঁর স্ত্রী মোছাঃ ছুরতন বেগমের জাতীয়পরিচয় পত্রের (স্মার্টকার্ড) নম্বর-৭৩০৮১৪২৫৪১। জাতীয়পরিচয় পত্রে তাঁর জন্ম তারিখ ২৪ এপ্রিল ১৯৬২ সাল রয়েছে। তাঁদের বড় ছেলে সোবহানের জাতীয়পরিচয়পত্র (স্মার্টকার্ড) নম্বর ১৯০৮০২৬৫৯২। তার স্মার্ট কার্ডে জন্মতারিখ ১ জুন ১৯৬৩। তাঁদের জাতীয়পরিচয় পত্রে উল্লেখিত বয়স পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, মা-বাবা ও ছেলের বয়সের অদ্ভুদ পার্থক্য চোখে পড়ে।

মো.সোবহানের বাবা মো.মোছলিম উদ্দীন বলেন, হামার আসল বয়স ৭৬ বছরেরও বেশি। সরকার মোক (আমাকে) র্কাড করে দিচে (দিয়েছে) সেটি মোর বয়স কমে দিচে। কার্ডত বয়স কম থাকার জন্য মুই (আমি) বয়স্ক ভাতার কার্ড পাওনি (পাইনি)। আবার কার্ডত হামার (আমার) বেটার (ছেলে) বেশি দিচে। কার্ডেও হিসাবে মুই মোর বেটার চার বছরের বড়।

মো.সোবহানের মা মোছা.ছুরতন বেগম বলেন, মুই (আমি) চোখে ঠিক মতো দেখি না। ভাতার কার্ড জন্নি (জন্য) মেম্বার- চেয়ারম্যানের কাছে অনেক বার গেছু (গিয়ে ছিলাম)। ভোটের র্কাড দেখে বয়স হয়নি বলে হামাক (আমাকে) ভাতা কার্ড করে দেইনি। মোরা (আমরা) বয়স ঠিক করার জন্নি অফিসত গেছিনু (যাওয়া হয়ে ছিল), মোরকে ( আমাদের) বিয়্যার (বিয়ের) কাবিন চাওছে (চাচ্ছেন)। একন মোরা বিয়্যার কুটে পামু (কোথায় পাবো)। তাই মোক ফেরত (ফিরিয়ে) দিচে (দিয়েছে)।

মো.সোবহান বলেন, হামি (আমি) জন্মেছি ১৯৬৩ সালের জুন মাসের ১ তারিখে। আর হামার (আমার) মা জন্মেছে ১৯৬২ সালের ২৪ এপ্রিল। মা হামার (আমার) চেয়ে বয়সে ১০ মাসের বড়। ডিজিটাল কার্ডে হামার (আমার) ও মা-বাবার বয়সের পার্থক্য দেখে অবাক হয়েছি।

উপজেলার আহম্মেদাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান মো. আলী আকবর আলী বলেন, মোছলিম উদ্দিন, ছুরতন বেগম ও সোবহান বয়স সংশোধনের জন্য ও প্রয়োজনীয় নাগরিক সুবিধা পেতে আমার কাছে কখনো আসেনি। তাছাড়া বয়স সংশোধনের জন্য উপজেলা নির্বাচন অফিস আছে।

কালাই উপজেলা নির্বাচন অফিসার মো.আবুল কালাম বলেন, আমি শুনেছি চেয়ারম্যানর-মেম্বারের কাছে তারা বেশি ঘোরা-ঘুরি করে ছিলেন। তারা কখনো বয়স সংশোধনের জন্য অফিসে আসেনি। যদি আসে তাহলে তাদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখে খুব দ্রুত বয়স সংশোধন করা হবে।