প্রকৃত সফল ব্যক্তি কে? আর মানুষের জন্য প্রকৃত সফলতাই বা কী? দুনিয়ায় বিশাল অর্থ সম্পদের মালিকানা কিংবা প্রভাব-প্রতিপত্তি ও ক্ষমতাধর ব্যক্তিরাই কি প্রকৃত সফলকাম? ইসলাম এ সম্পর্কে কী বলে?সাধারণত সমাজে সম্পদের মালিক কিংবা ক্ষমতাধর ব্যক্তিদেরকে সফল ভাবা হয়। আবার কর্মক্ষেত্র হিসেবে পেশাদারিত্বের দিক দিয়েও অনেক সফল হয়। পড়াশোনা, চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন ইস্যুতেই মানুষ সফলতা লাভ করে। আসলে এসব মানুষের প্রকৃত সফলতা নয়। বরং প্রকৃত সফল ব্যক্তি সম্পর্কে কুরআনুল কারিমে মহান আল্লাহ তাআলা তা সুস্পষ্টভাষায় ঘোষণা করেছেন। তাহলো-
আত্মশুদ্ধি অর্জন
আত্মশুদ্ধি অর্জনই প্রকৃত সফলতা। যে ব্যক্তি নিজের জীবনে আত্মশুদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন, তিনিই প্রকৃত সফল ব্যক্তি। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন-
فَأَلْهَمَهَا فُجُورَهَا وَتَقْوَاهَا - قَدْ أَفْلَحَ مَن زَكَّاهَا - وَقَدْ خَابَ مَن دَسَّاهَا
'অতপর তাকে তার অসৎকর্ম ও সৎকর্মের জ্ঞান দান করেছেন, যে নিজেকে শুদ্ধ করে, সেই সফলকাম হয়। আর যে নিজেকে কলুষিত করে, সে ব্যর্থ মনোরথ হয়।' (সুরা আশ-শামস : আয়াত ৮-১০)অর্থাৎ যে ব্যক্তি সব ধরনের কাজে নিজেকে সব সময় উন্নতি করার চেষ্টা করে, ব্যবহারে ও সততায় প্রতিনিয়ত নিজের উন্নয়নের চেষ্টা করে, অন্যের ভুলের চেয়ে নিজের ভুল নিয়ে বেশি চিন্তা করে, অসৎ কাজ থেকে বিরত থাকে এবং সৎ কাজে মনোযোগী হয়, দুনিয়া ও আখেরাতের মানদণ্ডে সেই সফল ব্যক্তি।
কৃপণতা না করা
দুনিয়ায় ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্তুতি, প্রভাব-প্রতিপত্তি কিংবা ক্ষমতা এ সবের কোনো কিছুই সফলতার মানদণ্ড নয়। বরং প্রকৃত সফল সেই ব্যক্তি যে আল্লাহকে ভয় করে, তাঁর কথা মতো জীবন পরিচালনা করে, তাঁর নির্দেশের আনুগত্য করে এবং তাঁর দেখানো পথে ব্যয় করে। বিশেষ করে নির্দেশ পালন ও দানের ক্ষেত্রে কৃপণতা করে না। তারাই প্রকৃত সফল ব্যক্তি। মহান আল্লাহ তাআলা বিষয়গুলো কুরআনুল কারিমে এভাবে তুলে ধরেছেন-
إِنَّمَا أَمْوَالُكُمْ وَأَوْلَادُكُمْ فِتْنَةٌ وَاللَّهُ عِندَهُ أَجْرٌ عَظِيمٌ - فَاتَّقُوا اللَّهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ وَاسْمَعُوا وَأَطِيعُوا وَأَنفِقُوا خَيْرًا لِّأَنفُسِكُمْ وَمَن يُوقَ شُحَّ نَفْسِهِ فَأُوْلَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ
'তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি তো কেবল পরীক্ষাস্বরূপ। আর আল্লাহর কাছে রয়েছে মহাপুরস্কার। অতএব তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় কর, (তাঁর কথা) শুন, (তাঁর বিধি-নিষেধের) আনুগত্য কর এবং (তার নির্দেশিত পন্থায় ও খাতে) ব্যয় কর। এটা তোমাদের জন্যে কল্যাণকর। আর যারা মনের কার্পণ্য থেকে মুক্ত, তারাই সফলকাম।' (সুরা তাগাবুন : আয়াত ১৬)
আয়াতে ঘোষিত কৃপণতা দুই ধরণের হতে পারে। যার একটি হলো আত্মিক কৃপণতা। আর দ্বিতীয়টি হলো পার্থিব কৃপণতা। আত্মিক কৃপণতা হলো- আল্লাহকে ভয় করার ক্ষেত্রে গড়ি মসি করা কিংবা ভয় না করা। আনুগত্যের ক্ষেত্রে গড়িমসি বা না করা। আল্লাহর পথে ব্যয় করার ক্ষেত্রেও পরিপূর্ণ কৃপণতার পরিচয় দেয়া।সর্বোপরি দুনিয়াতে মহান আল্লাহ বান্দাকে যত নেয়ামত দান করেছেন, এসব নিয়ে চিন্তা গবেষণা ও কৃতজ্ঞতাজ্ঞাপন না করাও কৃপণতার অন্তর্ভূক্ত।
ভালো কাজ করা ও মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকা
দুনিয়াতে সফল সেই ব্যক্তি যে, আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক সব সময় আল্লাহর আদেশগুলো বিনা বাক্যে মেনে নেয়, আর নিষেধগুলো মেনে নিতে বিনা বাক্যে মন্দ থেকে বিরত থাকে। এ বিষয়ে মহান আল্লাহ ঘোষণা-
وَلْتَكُن مِّنكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَأُوْلَـئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ
'আর তোমাদের মধ্যে এমন একটা দল থাকা উচিত যারা আহবান জানাবে সৎকর্মের প্রতি, নির্দেশ দেবে ভাল কাজের এবং বারণ করবে অন্যায় কাজ থেকে, আর তারাই হলো সফলকাম।' (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১০৪)এ আয়াতে বিষয়টি সুস্পষ্ট যে, উম্মতের মধ্যে সেই ব্যক্তি সফল, যে সৎ কাজের আদেশ দেয় আর মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকে।
জান্নাতিদের জন্যই চূড়ান্ত সফলতা
আখেরাতের কর্মক্ষেত্র দুনিয়া। যারা এ দুনিয়ায় মহান আল্লাহ নির্দেশগুলো যথাযথভাবেে মনে চলবে, তাদের জন্য চূড়ান্ত সফলতা হলো জান্নাত। কুরআনুল কারিমে এ বিষয়টিও সুস্পষ্টভাবে উঠে এসেছে-
كُلُّ نَفْسٍ ذَآئِقَةُ الْمَوْتِ وَإِنَّمَا تُوَفَّوْنَ أُجُورَكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَمَن زُحْزِحَ عَنِ النَّارِ وَأُدْخِلَ الْجَنَّةَ فَقَدْ فَازَ وَما الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلاَّ مَتَاعُ الْغُرُورِ
'প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ নিতে হবে। আর তোমরা কেয়ামতের দিন পরিপূর্ণ বিনিময় লাভ করবে। তারপর যাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাত দান করা হবে, সেই প্রকৃত সফলকাম। আর দুনিয়ার জীবন ধোঁকা ছাড়া আর কিছুই নয়।' (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৮৫) দুনিয়ার চাকচিক্যময় জীবন লাভ, সম্পদ ও ক্ষমতাই মানুষের জীবনের সফলতা নয়, বরং প্রকৃত সফলতা হচ্ছে, আল্লাহর নির্দেশ পালনের মাধ্যমে আখেরাতের চিরস্থায়ী জীবনে জাহান্নাম থেকে নাজাত এবং জান্নাত লাভই হলো মুমিনের চূড়ান্ত সফলতা।
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, আল্লাহর দেয়া বিধান ও নির্দেশ মেনে চলা, নিষেধগুলো থেকে বিরত থাকা। নসিহতগুলো যথাযথ পালন করা। কুরআনি জিন্দেগি যাপন করা। আর এর মাধ্যমেই দুনিয়া ও পরকালের সফলতা লাভ করবে মুমিন। মুমিনের জন্য এটিই প্রকৃত সফলতা।
দনিয়া ও পরকালে সফলতা লাভের দোয়া
দুনিয়া ও পরকালে প্রকৃত সফলতা লাভে আল্লাহর শেখানো ভাষায় তাঁর কাছে প্রার্থনা করা জরুরি। তাহলো-
رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
উচ্চারণ : ‘রাব্বানা আতিনা ফিদদুনইয়া হাসানাতাও ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাতাও ওয়া ক্বিনা আজাবান্নার।’
অর্থ : হে আমাদের প্রভু! আমাদের দুনিয়ার কল্যাণ দান কর এবং আখিরাতের কল্যাণ দান কর। আর আগুনের (জাহান্নামের) আজাব থেকে বাঁচাও।’আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে দুনিয়া ও পরকালীন জীবনের সফলতা লাভের তাওফিক দান করুন। কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক জীবন পরিচালনা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।