ক্ষমা প্রাপ্তির সূবর্ণ সময়

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: বৃহঃস্পতিবার ২রা মে ২০১৯ ১০:৪৬ পূর্বাহ্ন
ক্ষমা প্রাপ্তির সূবর্ণ সময়

মানুষ প্রেরিত হয়েছে আল্লাহর ইবাদতের জন্য। রমজান ইবাদতের অন্যতম মোক্ষম সময়। হাদিসে এসেছে- যে ব্যক্তি রমজান পেলো কিন্তু নিজেকে গুনাহ থেকে মুক্ত করতে পারল না; তার পানাহারে আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই। সুতরাং আমরা নিমজ্জিত পাপাচার থেকে মুক্ত হতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শিখানো পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারি। আর তা হচ্ছে- তাওবা ও ইসতিগফার। আমরা তাওবা ও ইসতিগফারের মর্মার্থগুলো জেনে নিই-

তাওবাহ : তাওবাহ অর্থ ফিরে আসা, প্রত্যাবর্তন করা। শরীয়তের পরিভাষায়, অতীতে সব খারাপ কাজের জন্য লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়ে গুনাহের কাজ পরিত্যাগ  করা এবং পুনরায় গুনাহ না করার দৃঢ় সংকল্প করা।

মাগফিরাত : মাগফিরাত অর্থ ক্ষমা চাওয়া, মাফ চাওয়া, মার্জনা প্রার্থনা করা। আল্লাহর নিকট গুনাহের জন্য ক্ষমতা চাওয়া ও গুনাহের জন্য ক্ষমা চাওয়া ও গুনাহের মন্দ পরিণাম থেকে পরিত্রান কামনা করাকে ইসতিগফার বলে। সুতরাং আমরা আল্লাহর দরবারে খাঁটি তওবা করবো এবং মাগফিরাত কামনা করবো। কারণ রমজানের বর্তমান (মাগফিরাতের) দশকেই রয়েছে এর সূবর্ণ সময়। আসুন আস্বস্ত হই; জেনে নিই রাসুল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র জবান মোবারকের কয়েকটি অমীয় বাণী-

ক. হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মহান আল্লাহ তাঁর বান্দার তাওবায় তোমাদের ঐ লোকের চাইতে বেশি খুশি হন, যে ব্যক্তি তার হারানো উট ফিরে পেল। (মুসলিম)। 

খ. আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের আগের যুগের এক ব্যক্তি নিরানব্বই জনকে হত্যা করার পর পৃথিবীতে সর্বশ্রেষ্ঠ আলেমের সন্ধানে বেরিয়ে পরে। তাকে এক খ্রিস্টান দরবেশের খোঁজ দেয়া হয়। সে তার কাছে গিয়ে বলে যে, সে নিরানব্বই জন লোককে হত্যা করেছে, তার জন্য এখন তাওবার কোনো সুযোগ আছে কি? দরবেশ বললো, নেই। ফলে সে দরবেশকেও হত্যা করে সংখ্যা একশ’ পূর্ণ করে। অতঃপর পুনরায় সে দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ আলেমের খোঁজে বেরিয়ে পড়লে তাকে এক আলেমের সন্ধান দেয়া হলো। তার কাছে গিয়ে হত্যাকারী বললো, সে একশ’ লোককে হত্যা করেছে, এখন তার জন্য তাওবার সুযোগ আছে কি? আলেম বলল, হ্যাঁ, তাওবার সুযোগ আছে। তাওবার বাঁধা কে হতে পারে? তুমি অমুক স্থানে চলে যাও। সেখানে কিছু সংখ্যক লোক আল্লাহর ইবাদাত করছে। তাদের সাথে তুমিও ইবাদাত করো। আর তোমার দেশে ফিরে যেও না। কারণ ওটা মন্দ এলাকা। ফলে নির্দেশের স্থানের দিকে লোকটি চলতে তাকলো। অর্ধেক রাস্তা গেলে তার মৃত্যুর সময় এসে পড়ল। তখন রহমতের ফেরেশতা ও আযাবের ফেরেশতার মধ্যে বাদানুবাদ শুরু হলো। রহমতের ফেরেশতা বললো, এ লোক তাওবা করে আল্লাহর দিকে ফিরে এসেছে। কিন্তু আযাবের ফেরেশতা বললো, লোকটি কখরো কোনো সৎ কাজ করেনি। এমন সময় মানুষ রূপ ধারণ করে আরেক ফেরেশতা তাদের কাছে এলো। তারা এ বিষয়ে তাদের মধ্যে তাকেই বিচারক মেনে নিলো। বিচারক বললো, তোমরা উভয় দিকের রাস্তার দূরত্ব মেপে দেখো। যে দিকটি নিকটে হবে সে সেটিরই অন্তর্ভূক্ত হবে। কাজেই জায়গা পরিমাপের পর দেখা গেল সে যে দিকের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছিল সে দিকের নিকটবর্তী। ফলে রহমতের ফেরেশতাগণ তার জান (রূহ) কবয করলেন। (বুখারি, মুসলিম)।

সুতরাং আমরা বুঝতে পারলাম তাওবা একজন গোনাহগার বান্দাকে কীভাবে জাহান্নামের ক্ষতিগ্রস্ত পথ থেকে জান্নাতের সীমাহীন আলোর পথে নিয়ে আসতে পারে। আমরা তাওবা করে আল্লাহর পথে ফিরে আসব। মাগফিরাত লাভ করব।

লক্ষণীয়-
এখন রমজান মাস; এই মাসের ইবাদতের ব্যাপারে অসংখ্য ছাওয়াবের কথা বলা হয়েছে। যেহেতু এই মাসের প্রতিদান আল্লাহ দেবেন। কীসের ভয়! আমরা আল্লাহর দরবারে তাওবা করি; মাগফিরাত চাই। কেননা রাসুল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, ‘আমি রাসুল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি- আল্লাহর শপথ! আমি দৈনিক সত্তর বারের বেশি তাওবা করি এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই (বুখারি)।  অন্য বর্ণনায় এসেছে- রাসুল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘হে লোকেরা! তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবাহ কর এবং তাঁর কাছে ক্ষমা চাও। কেননা আমি প্রতিদিন একশ’ বার তাওবা করি (মুসলিম)।

অর্থাৎ রাসুল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে তাওবা ও ইসতিগফারের দিকে উৎসাহিত করেছেন। সুতরাং এই রমজানের মাগফিরাতের দশকে আল্লাহর কাছে মাফ পাওয়া, ক্ষমা পাওয়া সূবর্ণ সুযেগ। আল্লাহ আমাদের গুনাহ মার্জনা করুন। আমাদের সঠিক পথের সন্ধান দিন। আমাদের তাওবা ও ইসতিগফারের তাওফিক দান করুন। আমীন।

তথ্যসূত্র : সহি বুখারি, মুসলিম, জামে আত-তিরমিজি।

ইনিউজ ৭১/এম.আর