দুনিয়াকে বাদ দিয়ে পরকালে সফলতা লাভের কোনো সুযোগ নেই। কেননা দুনিয়া আখেরাতে শস্যক্ষেত্র। দুনিয়ার সব ভালো ও মন্দ কাজের বিচার হবে পরকালে। প্রতিটি কাজেরই হিসাব গ্রহণ করা হবে। কেয়ামতের দিন দুনিয়ার কাজের জবাবদিহিতা ছাড়া কোনো আদম সন্তানই মুক্তি পাবে না। তাই দুনিয়ার যে কোনো কাজ পরকালের জবাবদিহিতার মানসিকতা নিয়ে সম্পন্ন করা জরুরি।
এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! কেয়ামতের দিন কোন কাজে মুক্তি মিলবে?
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তরে বললেন, ‘আল্লাহর সঙ্গে ধোকাবাজি করো না।’
ওই ব্যক্তি পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আল্লাহর সঙ্গে ধোকাবাজি করার অর্থ কী?’
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন-
‘আল্লাহর নির্দেশ/বিধান শুধুমাত্র তাঁরই সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পালন করো। অন্য উদ্দেশ্যে নয়।’
মূলকথা হলো, দুনিয়ার কোনো আমল কিংবা ইবাদতই আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্যে করা যাবে না। কেননা আমল বা ইবাদত আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্যে করাই হলো আল্লাহর সঙ্গে ধোকাবাজি। দুনিয়াতে সবচেয়ে বড় ধোকাবিজ হলো- রিয়া বা লোক দেখানো আমল কিংবা ইবাদত। যা ছোট শিরকের অন্তর্ভূক্ত। ছোট ছোট শিরক অব্যাহত থাকলে তা বড় শিরকে পরিণত হয়। আর শিরককারীর কোনো ইবাদতই আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না।
প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো ঘোষণা করেন যে, কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা রিয়াকারীকে ৪টি মারাত্মক সম্বোধনে ডাকবেন-
>> হে কাফের! (অস্বীকারকারী)
>> হে ফাজের! (পাপী)
>> হে গাফের! (ধোকাবাজ)
>> হে খাছের! (ক্ষতিগ্রস্ত)
অতঃপর আল্লাহ তাআলা রিয়াকারের উদ্দেশ্যে বলবেন, ‘তোমাদের আমল বিনষ্ট হয়ে গেছে। তোমাদের প্রতিদান নষ্ট হয়ে গেছে। তোমাদের উপকারে আসতে পারে এমন কোনো আমল নেই। হে গাফের! (ধোকাবাজ) আজ তোমার আমলের প্রতিদান সেসব লোকদের কাছ থেকে গ্রহণ করো, যাদের উদ্দেশ্যে কিংবা যাদেরকে দেখানোর জন্য তুমি দুনিয়াতে আমল কিংবা ইবাদত করেছিলে।
মনে রাখতে হবে
যে কোনো কাজ অর্জন করার চেয়ে তা রক্ষা করা অনেক কঠিন। তেমনি নেককাজ বা আমল করা অতি সহজ, আর তা হেফাজত করা অনেক কঠিন। সুতরাং আমল অল্প হোক কিংবা বেশি; তা করতে হবে শুধুমাত্র আল্লাহ তাআলার জন্য। কোনোভাবেই অন্যকে দেখানোর জন্য কোনো আমল বা ইবাদত করা যাবে না। আর তাতেই পরকালে সহজে মুক্তিপাবে মুমিন। আল্লাহর সঙ্গে ধোকাবাজি থেকে বিরত থাকতে তাওবা-ইসতেগফারের বিকল্প নেই। এ তাওবা-ইসতেগফারই মানুষকে যাবতীয় প্ররোচনা থেকে মুক্ত রাখবে। এ কারণেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিষ্পাপ হওয়ার পরও উম্মতের শিক্ষা লাভে তিনি প্রতিদিন ৭০-১০০ বার আল্লাহর কাছে তাওবা-ইসতেগফার করতেন।
দুনিয়ার যাবতীয় রিয়া ও ফেতনা থেকে মুক্ত থাকতে পড়ুন-
اَسْتَغْفِرُوا اللهَ العَظِيْم الَّذِى لَا اِلَهَ اِلَّا هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّوْمُ وَ اَتُوْبُ اِلَيْهِ
উচ্চারণ : আসতাগফিরুল্লাহাল আজিম আল্লাজি লা ইলাহা ইল্লাহুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুমু ওয়া আতুবু ইলাইহি।
অর্থ : মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, যিনি এক ব্যতিত কোনো ইলাহ নেই। তিনি চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী এবং তার দিকেই আমরা ফিরে যাবো।’
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কেয়ামতের দিন মুক্তি লাভে লোক দেখানো কাজ থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। বেশি বেশি তাওবা ও ইসতেগফার করার তাওফিক দান করুন। দুনিয়ার যাবতীয় আমল ও ইবাদত শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
ইনিউজ ৭১/এম.আর
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।