প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ১০:১১
মানুষ জীবনের প্রয়োজনে প্রতিনিয়ত রিজিকের সন্ধানে ব্যস্ত থাকে। কেউ চাকরিজীবী, কেউ ব্যবসায়ী, আবার কেউ পরিশ্রমী শ্রমিক। কিন্তু ইসলাম শেখায়, রিজিকের প্রকৃত মালিক আল্লাহ তায়ালা। মানুষ যতই চেষ্টা করুক, আল্লাহর নির্ধারিত ভাগের বাইরে এক কণা রিজিকও অর্জন করতে পারে না। কুরআনে আল্লাহ বলেন, “পৃথিবীতে কোনো জীবজন্তু নেই যার রিজিক আল্লাহর দায়িত্বে নয়” (সূরা হুদ, ৬)। এই আয়াত মানবজাতিকে এক অটুট নিশ্চয়তা দেয় যে, জীবিকার চিন্তায় হতাশ হওয়া কোনো মুমিনের কাজ নয়।
নবী করিম (সা.) বলেছেন, “যদি তোমরা আল্লাহর উপর তেমন ভরসা করতে, যেমন ভরসা করার অধিকার রয়েছে, তবে তোমাদের রিজিক দেওয়া হতো যেমনভাবে পাখিদের দেওয়া হয়; তারা সকালে ক্ষুধার্ত অবস্থায় বের হয় এবং সন্ধ্যায় তৃপ্ত হয়ে ফিরে আসে” (তিরমিজি)। এই হাদীস আমাদের শেখায়, পরিশ্রম করতে হবে কিন্তু ফলাফলের দায়িত্ব আল্লাহর হাতে সোপর্দ করতে হবে।
বর্তমান সময়ে মানুষ রিজিকের চিন্তায় অস্থির। অনেকেই অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা বা কর্মসংস্থানের সংকটে পড়ে হতাশ হয়ে পড়ে। কিন্তু ইসলাম এই অবস্থায় ধৈর্য ও তাওয়াক্কুলের দীক্ষা দেয়। কারণ আল্লাহ বলেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য বেরিয়ে আসার পথ সৃষ্টি করেন এবং তাকে এমন জায়গা থেকে রিজিক দেন যা সে কল্পনাও করে না” (সূরা আত-তালাক, ২-৩)।
অতএব, রিজিক কখনো কমে না, বরং আল্লাহর হুকুমে বৃদ্ধি বা হ্রাস পায়। কেউ যদি রিজিকের জন্য হারাম উপায়ে চেষ্টা করে, তবে সাময়িকভাবে হয়তো কিছু পেতে পারে, কিন্তু তাতে বরকত থাকে না। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “হারাম উপার্জন থেকে গড়া শরীর জান্নাতে প্রবেশ করবে না” (মুসনাদে আহমদ)। সুতরাং হালাল উপার্জনই প্রকৃত আশীর্বাদ।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, রিজিক শুধু অর্থ বা খাদ্য নয়, বরং জ্ঞান, স্বাস্থ্য, সময় ও সন্তানের সুখও রিজিকের অন্তর্ভুক্ত। কেউ যদি নিজের অবস্থায় সন্তুষ্ট থাকে এবং শোকর আদায় করে, তবে আল্লাহ তার রিজিক বাড়িয়ে দেন। কুরআনে বলা হয়েছে, “তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো, আমি তোমাদেরকে আরো বৃদ্ধি করব” (সূরা ইবরাহিম, ৭)।
আমরা অনেক সময় অন্যের সম্পদ, সুযোগ বা সাফল্য দেখে হিংসা করি। অথচ ইসলাম বলে, প্রত্যেকের রিজিক নির্দিষ্ট। তাই হিংসা নয়, বরং নিজের ভাগ্যে সন্তুষ্ট থাকা উচিত। কারণ রিজিকে অসন্তুষ্টি কেবল মানসিক অশান্তি বাড়ায়, কিন্তু শোকর আত্মাকে প্রশান্ত করে।
রাসূল (সা.) এর জীবনে রিজিকের শিক্ষা ছিল সরলতা ও আস্থা। তিনি কখনো দুনিয়ার ধনসম্পদের প্রতি আকৃষ্ট হননি, বরং আল্লাহর প্রদত্ত সামান্য রিজিকেও সন্তুষ্ট থেকেছেন। এভাবে তিনি উম্মতকে শেখিয়েছেন, প্রকৃত সমৃদ্ধি রিজিকের পরিমাণে নয়, বরং তাতে বরকতে।
আজকের যুগে রিজিকের চিন্তায় উদ্বিগ্ন মানুষের জন্য এই ইসলামী শিক্ষা এক অনন্ত শান্তির বার্তা—রিজিকের দায়িত্ব আল্লাহর, আমাদের দায়িত্ব শুধু হালাল পথে চেষ্টা, ধৈর্য ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। তবেই জীবনে শান্তি ও বরকত নেমে আসবে।