প্রকাশ: ১২ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৭
মানুষ জীবনে নানা রকম দুঃখ-কষ্ট, বিপদ-আপদ ও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে। কখনও অর্থনৈতিক দুরবস্থা, কখনও শারীরিক অসুস্থতা, আবার কখনও সম্পর্ক বা কাজের সংকটে মানসিক ক্লান্তি আসে। কিন্তু এসব মুহূর্তে যে মানুষ আল্লাহর উপর দৃঢ়ভাবে ভরসা রাখে, সে কখনও একা থাকে না। কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা রাখে, আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট” (সূরা আত-তালাক, আয়াত ৩)।
এই আয়াত শুধু ধর্মীয় উপদেশ নয়, এটি জীবনের এক গভীর বাস্তব শিক্ষা। যখন মানুষ নিজের সামর্থ্যের সীমা বুঝে আল্লাহর উপর নির্ভর করে, তখন তার মনে আসে এক অনন্য শান্তি। সে জানে, চেষ্টা তার কাজ, কিন্তু ফল আল্লাহর হাতে। এই বিশ্বাসই একজন মুমিনকে ভয়, উদ্বেগ ও হতাশা থেকে মুক্ত রাখে।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যদি তোমরা আল্লাহর উপর তেমন ভরসা করতে পারতে যেমনটি করার অধিকার, তাহলে তিনি তোমাদের এমনভাবে রিজিক দিতেন যেমন পাখিদের দেন— তারা সকালে ক্ষুধার্ত বের হয় আর সন্ধ্যায় পেট ভরে ফিরে আসে।” (তিরমিজি, হাদিস ২৩৪৪)। এই হাদিসে এক অপূর্ব দৃষ্টান্ত দেওয়া হয়েছে—পরিশ্রম করো, কিন্তু ফলাফলের নিশ্চয়তা আল্লাহর হাতে ছেড়ে দাও।
আজকের দুনিয়ায় যেখানে প্রতিযোগিতা, দুশ্চিন্তা আর অনিশ্চয়তা মানুষকে ক্লান্ত করে তুলছে, সেখানে তাওয়াক্কুল বা আল্লাহর উপর ভরসা এক মানসিক আশ্রয়স্থল। এই তাওয়াক্কুলই মানুষকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে, কারণ সে জানে—কেউ যদি তার ক্ষতি করতে চায়, আল্লাহ না চাইলে কিছুই ঘটবে না।
ইসলাম কখনো অলসতার ধর্ম নয়। তাওয়াক্কুল মানে হাত গুটিয়ে বসে থাকা নয়; বরং চেষ্টা করা এবং একই সঙ্গে আল্লাহর কাছে ফলাফলের ব্যাপারে সন্তুষ্ট থাকা। রাসূল (সা.) উট বেঁধে রেখে তারপর ভরসা করতে বলেছেন—অর্থাৎ দায়িত্ব পালন করতে হবে, তারপর আল্লাহর উপর নির্ভর করতে হবে।
যখন একজন মুমিন নিজের জীবনে এই বিশ্বাসকে প্রতিষ্ঠিত করে, তখন সে আর কোনো পরিস্থিতিতে হতাশ হয় না। সে ব্যর্থতাকে পরিণতিতে পরিণত হতে দেয় না; বরং আল্লাহর হিকমাহ্র উপর বিশ্বাস রেখে এগিয়ে চলে। এই দৃষ্টিভঙ্গি মানুষকে দৃঢ়, সাহসী ও মানসিকভাবে স্থিতিশীল করে তোলে।
আজকের সমাজে এই তাওয়াক্কুলের শিক্ষা বিশেষভাবে প্রয়োজন। চাকরি হারানো, ব্যবসায় ক্ষতি বা পারিবারিক সমস্যা—এসব অবস্থাতেও যদি আমরা বিশ্বাস রাখি যে আল্লাহর পরিকল্পনা আমাদের অজানা হলেও উত্তম, তাহলে মন শান্ত থাকবে, সিদ্ধান্ত হবে পরিণত।
জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে আল্লাহর উপর নির্ভরতা মানুষকে সঠিক পথে রাখে। তাই কষ্টের সময়ে অভিযোগ নয়, বরং দোয়া ও ধৈর্যই হোক আমাদের প্রতিক্রিয়া। কারণ যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা রাখে, আল্লাহ কখনোই তাকে ব্যর্থ হতে দেন না।