প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০২৫, ১০:২৯
মানুষের জীবনে সুখ-দুঃখ, উত্থান-পতন অবশ্যম্ভাবী। আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বারবার বলেছেন যে তিনি মানুষকে পরীক্ষা করবেন কখনো ভয় দিয়ে, কখনো ক্ষুধা দিয়ে, কখনো ধন-সম্পদ বা প্রিয়জন হারানোর মাধ্যমে। কিন্তু এসব পরীক্ষায় মুমিনের সবচেয়ে বড় অস্ত্র হচ্ছে ‘সবর’ বা ধৈর্য। যে ব্যক্তি কঠিন সময়ে ধৈর্য ধরে আল্লাহর উপর ভরসা রাখে, সে কখনো পরাজিত হয় না। কারণ আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন” (সূরা বাকারা, আয়াত ১৫৩)।
কঠিন সময়ে ধৈর্য ধারণ করা মানে দুর্বলতা নয়; বরং এটি মুমিনের শক্তির প্রতীক। নবী করিম (সা.) বলেছেন, “ধৈর্য এমন এক আলো, যা কখনো নিভে যায় না।” অর্থাৎ, দুঃখ-দুর্দশার আঁধারে ধৈর্যই আলোর দিশা দেয়। যারা বিপদের সময় নিজের জিহ্বা ও মনকে সংযত রাখতে পারে, তারা আল্লাহর বিশেষ রহমতের অধিকারী হন।
ইতিহাস সাক্ষী, নবী ও রাসূলগণ কঠিনতম বিপদেও ধৈর্য হারাননি। নবী আইয়ুব (আ.) অসুস্থতা ও কষ্টের দীর্ঘ বছরেও আল্লাহর প্রতি অভিযোগ করেননি, বরং বলেছেন, “হে আমার প্রতিপালক, কষ্টে আমি আক্রান্ত হয়েছি, তুমি দয়ালুদের মধ্যে সর্বাধিক দয়ালু।” এভাবেই তিনি ধৈর্যের প্রতীক হয়ে ওঠেন।
আমাদের সমাজে অনেকেই সামান্য ক্ষতি বা বিপদে হতাশ হয়ে পড়েন, অভিযোগ করেন, এমনকি আল্লাহর উপর ভরসা হারিয়ে ফেলেন। অথচ ইসলামে শেখানো হয়েছে, বিপদের সময় ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ বলা উচিত—এর মাধ্যমে আমরা আল্লাহর কাছে ফিরে যাওয়ার অঙ্গীকার স্মরণ করি।
ধৈর্য শুধু মুখে উচ্চারণ নয়, এটি এক ধরনের আভ্যন্তরীণ ইমানি শক্তি। ধৈর্যশীল ব্যক্তি কঠিন সময়েও অন্যের প্রতি অন্যায় করে না, মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকে। নবী (সা.) বলেছেন, “যে রাগের সময় নিজেকে সংযত রাখে, সে প্রকৃত শক্তিশালী ব্যক্তি।”
অর্থনৈতিক সংকট, পারিবারিক সমস্যা কিংবা জাতীয় বিপর্যয়—যে পরিস্থিতিই হোক না কেন, ইসলাম বলে, ধৈর্য ধরলে শেষ পর্যন্ত কল্যাণই আসে। আল্লাহ তায়ালা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, “নিশ্চয়ই কষ্টের সঙ্গে রয়েছে স্বস্তি।” এই আয়াত আমাদের শেখায়, প্রতিটি অন্ধকারের পরই আলো আসে।
আজকের দিনে আমাদের প্রয়োজন ধৈর্যের এই গুণটিকে নতুন করে জাগিয়ে তোলা। ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে যখনই বিপদ আসবে, তখন মনে রাখতে হবে—সবরকারীর পুরস্কার সীমাহীন। কারণ আল্লাহ বলেন, “সবরকারীদেরকে আমি অগণিত পুরস্কার দেব।” (সূরা জুমার, আয়াত ১০)।