প্রকাশ: ২০ আগস্ট ২০২৫, ১০:১৮
ইসলামে আল্লাহর যিকরকে (স্মরণ) এক বিশেষ ইবাদত হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। কুরআন ও হাদিসে বারবার উল্লেখ আছে, যিকর হলো এমন এক কাজ যা মানুষের অন্তরকে প্রশান্ত করে, হৃদয়কে শক্তিশালী করে এবং দুনিয়ার দুঃশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দেয়। আল্লাহ তায়ালা সূরা রা’দে বলেছেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহর স্মরণেই অন্তর শান্তি লাভ করে।” এই আয়াতই প্রমাণ করে যে, জীবনের নানা অশান্তি ও সমস্যার সমাধান লুকিয়ে আছে যিকরের ভেতর।
নবী করীম (সা.) সাহাবিদের প্রতি বিশেষভাবে যিকরের ওপর গুরুত্বারোপ করতেন। হাদিসে এসেছে, রাসূল (সা.) বলেছেন, “তোমাদের জিহ্বা সর্বদা আল্লাহর যিকরে ব্যস্ত থাকুক।” এটি শুধু কোনো ইবাদত নয়, বরং এমন এক আমল যা মানুষের প্রতিটি মুহূর্তকে বরকতময় করে তোলে।
যিকরের মধ্যে রয়েছে আল্লাহর মহিমা বর্ণনা করা, আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং তাসবিহ, তাহমিদ ও তাকবির পাঠ করা। যেমন সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার—এই শব্দগুলো শুধু উচ্চারণ নয়, বরং হৃদয়কে পবিত্র করে তোলে।
যারা নিয়মিত যিকর করে, তাদের জীবনে দুশ্চিন্তা ও হতাশা কম থাকে। কারণ তারা বিশ্বাস করে, সবকিছু আল্লাহর ইচ্ছায় ঘটে এবং আল্লাহই সব সমস্যার সমাধানকারী। এ বিশ্বাস তাদের মানসিকভাবে দৃঢ় রাখে এবং ধৈর্যশীল হতে সহায়তা করে।
একটি সহিহ হাদিসে বর্ণিত আছে, রাসূল (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি একবার ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলে, তার জন্য জান্নাতের একটি বৃক্ষ রোপণ করা হয়।” এই হাদিস প্রমাণ করে, যিকর শুধু দুনিয়ায় নয়, আখিরাতেও মানুষের জন্য সঞ্চয় তৈরি করে।
আজকের ব্যস্ত জীবনে মানুষ যতো আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করুক না কেন, মনের শান্তি খুঁজে পাওয়া যায় না। আধুনিক চিকিৎসকরাও বলেন, আল্লাহর নাম স্মরণ করার ফলে মানসিক চাপ কমে যায় এবং মস্তিষ্ক প্রশান্ত হয়। এর মানে হলো, যিকর শুধু ধর্মীয় দিক থেকে নয়, বরং মানবস্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী।
প্রতিটি মুসলমানের উচিত দিনের শুরু ও শেষ যিকরের মাধ্যমে করা। সকাল-সন্ধ্যার দোয়া ও যিকর রাসূল (সা.)-এর প্রিয় আমল ছিল। এতে জীবনের প্রতিটি কাজে বরকত আসে এবং শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
অতএব, যিকর শুধু জিহ্বার কাজ নয়, বরং এটি অন্তরের ইবাদত। হৃদয়ের ভেতর থেকে আল্লাহকে স্মরণ করলে জীবনে শান্তি ও প্রশান্তি নেমে আসে। তাই প্রতিটি মুসলমানের উচিত জীবনের প্রতিটি পর্বে আল্লাহর যিকরকে আপন করে নেওয়া।