রোজাদারের জন্য আল্লাহর বিশেষ পুরস্কার

নিজস্ব প্রতিবেদক
হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী- বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ
প্রকাশিত: রবিবার ২রা মার্চ ২০২৫ ০৪:৩৩ অপরাহ্ন
রোজাদারের জন্য আল্লাহর বিশেষ পুরস্কার

পবিত্র রমজান মাস মুসলমানদের জন্য এক বিশেষ মর্যাদা ও বরকতপূর্ণ সময়। এটি সিয়াম সাধনা, তাকওয়া অর্জন, রহমত, মাগফিরাত ও জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তির মাস হিসেবে পরিচিত। মহান আল্লাহ তায়ালা এই মাসকে অশেষ ফজিলত ও মর্যাদায় অভিষিক্ত করেছেন। এই সময় সকল মুসলমানকে রোজা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে তারা একদিকে যেমন আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারে, তেমনি অন্যদিকে নিজের গুনাহ মাফ করে নিতে পারে।  


মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, “তোমাদের মধ্যে যারা এ মাস পাবে, তারা যেন এ মাসে রোজা পালন করে।” (সূরা আল-বাকারাহ : ১৮৫) এই নির্দেশনা থেকে বোঝা যায় যে রমজান মাস রোজাদারদের জন্য একটি মহান সুযোগ। রোজা রাখার মাধ্যমে তাদের নেক আমল ও সওয়াব বৃদ্ধি পায়। তবে রোজার সওয়াব অন্য সকল আমলের চেয়ে আলাদা এবং এর পুরস্কার সরাসরি আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে দেওয়া হবে।  


হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে, “রোজা আমার জন্য, আর এর প্রতিদান স্বয়ং আমি দিব।” (সহীহ বোখারি ও মুসলিম) অর্থাৎ রোজাদারের সওয়াব কোনো নির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং তা আল্লাহ নিজ হাতে পুরস্কৃত করবেন। এটি রোজার বিশেষ মর্যাদা ও ফজিলতকে নির্দেশ করে।  


পবিত্র রমজান মাসে যদি কোনো ব্যক্তি নফল কাজও করে, তাহলে তা সাধারণ মাসের ফরজ কাজের সমান সওয়াবের অধিকারী হবে। আর যে এই মাসে ফরজ কাজ সম্পন্ন করবে, তাকে ৭০টি ফরজ কাজ করার সওয়াব দেওয়া হবে। রোজার দিনে রোজাদারের নিদ্রাও ইবাদতের সমতুল্য বলে বিবেচিত। হাদিসে বলা হয়েছে, “রোজাদারের চুপ থাকা তসবিহ পাঠের সমতুল্য এবং তার সমস্ত আমল অধিক সওয়াবের অধিকারী হয়।”  


রাসূল (সা.) বলেছেন, “ঈমান ও ইহতিসাবের সাথে যে ব্যক্তি রোজা রাখে, তার অতীত সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।” এই কারণে রমজান মাস মুসলমানদের জন্য এক বিশেষ সুযোগ, যার মাধ্যমে তারা নিজেদের পাপ মোচন করে এবং আল্লাহর কাছে নৈকট্য লাভ করতে পারে।  


এ মাসে কোরআন মজিদও নাজিল হয়েছে, যা মুসলমানদের জন্য হেদায়াত এবং সত্য পথযাত্রীদের জন্য স্পষ্ট পথনির্দেশ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, “রমজান মাসই হল সে মাস যাতে নাজিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়াত এবং সত্য পথযাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথনির্দেশ।” (সূরা আল-বাকারাহ: ১৮৫)  


রমজান মাসে আল্লাহ তায়ালা রহমতের দরজা খুলে দেন। হাদিসে এসেছে, “রমজান মাসের শুভাগমন উপলক্ষে জান্নাতের দরজাসমুহ উন্মুক্ত হয়ে যায়, আর জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ হয়ে যায়।” (বোখারি ও মুসলিম) এছাড়া শয়তানকে শৃঙ্খলিত করে দেওয়া হয়, যাতে মুমিনরা আরও বেশি ইবাদত করতে পারে।  


এ মাসে বেশি বেশি ইবাদত, তওবা ও ইস্তেগফার করার মাধ্যমে আল্লাহর রহমত লাভের সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে। আর এই সুযোগই মানব জাতির মুক্তির পথ। অতএব, এই মাসে যারা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে চায়, তারা যেন আরো বেশি আমল করে, আর নিজেকে ইবাদত-ভীরু ও খোদাভীতিপূর্ণ করে তোলে।  


এ মাসের মাধ্যমে যারা নিজেদের গুনাহ মাফ করাতে পারেনি, তারা সত্যিই হতভাগা। রমজান মাসের রোজা, কোরআন তিলাওয়াত, তারাবি নামাজ, দান-খয়রাত ইত্যাদি আমল একদিকে যেমন নিজেদের পাপ থেকে মুক্তি দেয়, তেমনি তাকওয়ার মানসিকতা গড়ে তোলে।  


মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে প্রকৃত রোজা পালন এবং উত্তম আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।