সুরা ত্বালাকে মহান আল্লাহ ঘোষণা করেন, ‘আর যে আল্লাহর উপর ভরসা করে, তিনি তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান।’ যুগে যুগে যারাই আল্লাহর উপর ভরসা করেছেন, তারাই পেয়েছেন প্রকৃত সুখ ও প্রশান্তি। নবি-রাসুলদের বিভিন্ন ঘটনা থেকেও তার প্রমাণ মেলে।
দুনিয়াতেও দুই শ্রেণির মানুষ সুখী হয়ে থাকে। এক. আল্লাহর সকল সিদ্ধান্তে (তাকদিরে) সন্তুষ্ট ব্যক্তি দুই. সর্বাবস্থায় আল্লাহর উপর ভরসাকারী ব্যক্তি। এ থেকেও বুঝা যায় আল্লাহর উপর ভরসা করায় রয়েছে প্রকৃত প্রশান্তি।
আল্লাহর উপর ভরসা করার অর্থ এই নয় যে, কোনো কাজ না করে সবকিছু আল্লাহর উপর ছেড়ে দেওয়া। বরং তাওয়াক্কুল (আল্লাহর উপর ভরসা) হলো উপকরণ সংগ্রহ করে সাধ্যানুযায়ী কাজ করে যাওয়া এবং সফলতা পাওয়ার জন্য দোয়া করা। এটুকুই বান্দার কাজ। বাকি ব্যস, বান্দার কাজ এতটুকুই। বাকি কাজ আল্লাহই করে দেবেন এই আশা রাখা।
বিশ্বাস রাখতে হবে, এই উপায়-উপকরণ বা কাজের মাধ্যমে কোনো সফলতা আসবে না, বরং আল্লাহই সফলতা দেওয়ার মালিক। আল্লাহ তাআলা যখন চাইবেন তখন কোনো উপয়-উপকরণ ছাড়াও সাহায্য করতে পারেন আবার উপায়-উপকরণ দিয়েও সাহায্য করতে পারেন। যেমন-
হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামকে তিনি কোনো উপায়-উপকরণ ছাড়াই আগুন থেকে মুক্তি দিয়েছেন আবার হজরত মুসা আলাইহিস সালামকে (তাঁর নির্দেশে) সামান্য লাঠির আঘাতে সমুদ্র/নদীতে রাস্তা তৈরির মাধ্যমে সাহায্য করেছেন। মহান আল্লাহ তাআলা দুটোই করতে সক্ষম।
তবে সুন্নাহ বা ইসলামের নিয়ম হলো, আল্লাহর সাহায্য পেতে সাধ্যানুযায়ী উপায়-উপকরণ সংগ্রহ করা, এরপর তাঁর উপর নির্ভর করা। এটিই হলো প্রকৃত তাওয়াক্কুল বা ভরসা।
হজরত মারইয়াম আলাইহিস সালাম ছিলেন অন্তঃসত্ত্বা। এ কথা সবারই জানা যে, একজন অন্তঃসত্ত্বা শারীরিক এবং মানসিকভাবে বেশি দুর্বল থাকেন। আবার এটাও জানা যে, খেজুর গাছের ভিত্তি পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম শক্ত ও মজবুত ভিত্তি। যত বড় তুফানই আসুক খেজুর গাছকে সমূলে উপড়াতে পারে না। কিন্তু হজরত মারইয়াম আলাইহিস সালাম ছিলেন আল্লাহর খুবই প্রিয় একজন বান্দী। তিনি মাসজিদে থাকতেন। তাঁর জন্য জান্নাতের খাবার পাঠানো হতো। এগুলো সব কুরআনেই এসেছে। অথচ তাঁকে নির্দেশ দেওয়া হলো-
وَ هُزِّیۡۤ اِلَیۡکِ بِجِذۡعِ النَّخۡلَۃِ تُسٰقِطۡ عَلَیۡکِ رُطَبًا جَنِیًّا
‘আর তুমি খেজুর গাছের কান্ড ধরে তোমার দিকে নাড়া দাও, তাহলে তা তোমার উপর তাজা-পাকা খেজুর ফেলবে’। (সুরা মারইয়াম : আয়াত ২৫)
এই ঘটনায় অন্যতম শিক্ষা হলো, আল্লাহ্ তাআলা ইচ্ছা করলে এমনিতেই খেজুর নিক্ষেপ করতে পারতেন। তবুও তিনি মারইয়ামকে একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতির (প্রচেষ্টা তথা উপায়-উপকরণের) মধ্য দিয়ে রিজিক পৌঁছিয়েছেন। অথচ তিনি ছিলেন তখন শারীরিক ও মানসিকভাবে দুর্বল।
মনে রাখতে হবে
মানুষের উপায়-উপকরণ খুব তুচ্ছ হতে পারে, তবুও সেটি নিয়েই তাওয়াক্কুল করতে হবে। যেমনটি করেছিলেন হজরত মুসা ও মারইয়াম আলাইহিস সালামসহ অন্যান্য নবি-রাসুলগণ। এ কারণেই মহান আল্লাহ ঘোষণা করেন-
وَ مَنۡ یَّتَوَکَّلۡ عَلَی اللّٰهِ فَهُوَ حَسۡبُهٗ
‘আর যে আল্লাহর উপর ভরসা করে, তিনি তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান।’ (সুরা ত্বালাক : আয়াত ৩)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে তার ওপর তাওয়াক্কুল করার তাওফিক দান করুন। দুনিয়ার প্রতিটি কাজে প্রশান্তি পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।