হজরত ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন বিদ্রোহীদের দ্বারা নিজ ঘরে আবদ্ধ হন, তখন তিনি নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি হাদিস বর্ণনা করে বিদ্রোহীদের শুনান। আর নিজের প্রতি তার বিশ্লেষণ করে বুঝিয়ে দেন যে, ইসলাম কোন কোন পর্যায়ে হত্যা বা মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার অধিকার দেয়। ক্ষেত্রগুলো কী কী?
হজরত আবু ওমামা ইবনে সাহল ইবনে হুনাইফ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, বিদ্রোহীদের দ্বারা বাড়িতে অবরুদ্ধ থাকাকালে হজরত ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু (বিদ্রোহীদের) বলেন, আমি আল্লাহর শপথ করে তোমাদের বলছি, ‘তোমরা কি জান না যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
‘তিনটি অপরাধ ছাড়া কোনো মুসলমানকে হত্যা করা বৈধ নয়? (সে অপরাধ ৩টি হলো)-
১. বিয়ে করার পর (বিবাহিত ব্যক্তির) জিনা বা ব্যভিচার করা;
২. ইসলাম গ্রহণের পর (ইসলাম) ধর্ম ত্যাগ করা এবং
৩. কেউ কোনো ব্যক্তিকে অন্যায়ভাবে খুন করা।
এ তিনটির যে কোনো একটি অপরাধ সংঘটিত হলে, এ অপরাধের কারণে (দোষী ব্যক্তিকে) মৃত্যুদণ্ড দেওয়া যায়।
আল্লাহর শপথ (করে বলছি)!
১. আমি জাহেলি যুগেও জিনা করিনি, ইসলাম কবুলের পর তো নয়-ই।
২. আমি আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে যেদিন আনুগত্যের শপথ (বাইআত) নিয়েছি, সেদিন থেকে (মুহূর্তের জন্য) ধর্মত্যাগীও হইনি।
৩. আর এমন কোনো (ব্যক্তির) প্রাণও আমি হত্যা করিনি, যার হত্যা আল্লাহ তাআলা অবৈধ করেছেন। (তাহলে) আমাকে কি কারণে তোমরা হত্যা করবে? (বুখারি, মুসলিম, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি)
ইসলামের তৃতীয় খলিফা হজরত ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু কিছু সংখ্যক বিদ্রোহীর হাতে শাহাদাত বরণ করার আগে মুসলিম জাহানের মানুষের কাছে শান্তির এ বার্তা দিয়ে যান যে-‘৩টি কারণ ছাড়া কোনো মুসলমান কোনো মুসলমানকে হত্যা করবে না।’হজরত ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর এ সতর্ক বার্তা ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ইসলামের সৌন্দর্যের বহিঃপ্রকাশ। অপরাধমুক্ত সমাজ বিনির্মাণে জ্ঞানীদের জন্য রয়েছে দিকনির্দেশনা।
হত্যা সম্পর্কে কোরআনের বিধান
আল্লাহ তাআলা হত্যার মতো মারাত্মক অপরাধমুক্ত সমাজ গঠনে সুস্পষ্ট বিধানও জারি করেন-
১. ‘হে ঈমানদারগণ! মানুষ হত্যার ব্যাপারে তোমাদের জন্য কিসাস (প্রতিশোধ গ্রহণের বিধান) বিধিবদ্ধ করা হলো; ‘স্বাধীন ব্যক্তির বদলে স্বাধীন ব্যক্তি, ক্রীতদাসের বদলে ক্রীতদাস ও নারীর বদলে নারী। কিন্তু তার ভাইয়ের পক্ষ থেকে কিছুটা ক্ষমা প্রদর্শন করা হলে, প্রচলিত প্রথা অনুসরণ ও সদয়ভাবে তার (বিনিময়) পরিশোধ করা উচিত। আর এতো তোমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে ভার লাঘব ও অনুগ্রহ।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৭৮)
জিনা-ব্যভিচারের অপরাধে করণীয় সম্পর্কে কোরআনে বিধান হলো-
২. ‘ব্যভিচারিণী ও ব্যভিচারী, ওদের প্রত্যেককে একশ’ কশাঘাত কর। আল্লাহর বিধান কার্যকরীকরণে ওদের প্রতি দয়া যেন তোমাদের অভিভূত না করে, যদি তোমরা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস কর। আর বিশ্বাসীদের একটি দল যেন ওদের (অপরাধীদের) শাস্তি প্রত্যক্ষ করে।’ (সুরা নুর : আয়াত ২)
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় নবিজী অবিবাহিত জিনাকারীদের শাস্তি একশ’ বেত্রাঘাত আর বিবাহিত জিনাকারীদের পাথরের আঘাতে মৃত্যু নিশ্চিত করার কথা বলেছেন।’বর্তমান দেশীয় আইনেও এসব অপরাধের মারাত্মক শাস্তি; এমনকি মৃত্যুদণ্ড হতেও দেখা যায়। দেড় হাজার বছর আগে নবিজীর ঘোষিত বাণীই হোক বিশ্বব্যাপী শান্তি প্রতিষ্ঠার অনন্য হাতিয়ার।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে উল্লেখিত অপরাধ থেকে নিজেদের হেফাজতের পাশাপাশি ইসলামি সমাজ বিনির্মাণে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিসের বাস্তবায়ন করার তাওফিক দান করুন। কুরআন-সুন্নাহর সঠিক বুঝ গ্রহণের তাওফিক দান করুন। আমিন।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।