নবিজীর (সা.) যেসব শারীরিক পরিশ্রম ও ব্যায়াম সুন্নাত

নিজস্ব প্রতিবেদক
ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: শনিবার ২৬শে মার্চ ২০২২ ১০:৩৩ পূর্বাহ্ন
নবিজীর (সা.) যেসব শারীরিক পরিশ্রম ও ব্যায়াম সুন্নাত

নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাজ করতে পছন্দ করতেন। নিজের কাজ নিজেই করতেন। পরিশ্রম করতেন, ব্যবসা করতেন। বাস্তব জীবনে নবিজীর সব কাজই ছিল সুস্বাস্থ্য, সুস্থতা ও আত্মনির্ভরশীল হওয়ার অনন্য নিদর্শন। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রেসালাতের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ইসলামের শুরুতেই নিজের কাজ নিজে করতেন। পরিশ্রম করতেন, সুস্থতা কিংবা অসুস্থতায় পদক্ষেপ গ্রহণ করতেন। তিনি কোনো কাজকেই ছোট করে দেখেননি। এ সম্পর্কে একাধিক হাদিসে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর বাস্তবজীবনের অনেক ঘটনা সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন। অনুসরণযোগ্য নবিজীর সেই কাজসমূহ কী?


সব সময় ধৈর্য, সহনশীল, পরিশ্রম, কষ্ট ও বীরত্বপূর্ণ জীবনযাপন করা নবিজীর ‍সুন্নাত। সব ধরনের বিপদ সহ্য করার এবং কঠিন থেকে কঠিনতর অবস্থার মোকাবিলা করার অভ্যাসও নবিজীর সুন্নাত। তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে সাদাসিধাভাবে বীরত্বের জীবন যাপনের চেষ্টা করতেন। আবার আরাম প্রিয়, পরিশ্রমবিমুখ, কোমলতা প্রিয়, অলস, সুখপ্রত্যাশী, আনমনা ও দুনিয়া পূজারি হতে নিরুৎসাহিত করেছেন। হাদিসের একাধিক বর্ণনায় তা প্রমাণিত-


১. আরাম প্রিয় না হওয়া


নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন হজরত মুয়াজ বিন জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহুকে ইয়ামেনের গভর্নর নিযুক্ত করে পাঠান, তখন তাকে উপদেশ দেন যে, হে মুয়াজ! আরাম প্রিয়তা থেকে বিরত থাকবে! কেননা আল্লাহর বান্দাহগণ আরাম প্রিয় হন না।' (মিশকাত)


২. সাধারণ জীবনযাপন করা


হজরত আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, 'সাদাসিধে জীবন-যাপন করা ঈমানের নির্দেশ।' (আবু দাউদ)


৩. ব্যায়াম/পরিশ্রম করা


নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সব সময় সদাসিধে ও বীরত্বের জীবনযাপন করতেন এবং সব সময় নিজের বীরত্বপূর্ণ শক্তিকে রক্ষা করা ও বর্ধিত করার চেষ্টা করতেন। তিনি সাঁতার কাটতেও পছন্দ করতেন। কেননা, সাঁতার কাটায় শরীরের উত্তম ব্যয়াম হয়। একবার এক পুকুরে তিনি ও তাঁর কিছু সাহাবি সাঁতার কাটতে ছিলেন, তিনি সাঁতারুদের প্রত্যেকের জুড়ি ঠিক করে দিলেন যে, প্রত্যেককে সাঁতার কেটে তার জুড়ির কাছে পৌঁছবে। সুতরাং তাঁর জুড়ি নির্বাচিত হলেন হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু। তিনি সাঁতার কেটে জুড়ি আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু পর্যন্ত পৌঁছে তার ঘাড় ধরে ফেললেন।


৪. পরিচর্যা ও যত্নবান হওয়া


নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সওয়ারির জন্য বাহন হিসেবে ঘোড়াকে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করতেন। নিজেই নিজের ঘোড়ার পরিচর্যা করতেন। নিজের জামার আস্তিন দ্বারা ঘোড়ার মুখ মুছে পরিষ্কার করে দিতেন। ঘোড়ার গ্রীবাদেশের কেশরসমূহকে নিজের পবিত্র আঙুল দ্বারা ঠিক করে দিতেন এবং বলতেন, কেয়ামত পর্যন্ত এর কপালের সাথে সৌভাগ্য  জড়িত।


৫. শিক্ষাকে মূল্যায়ন করা


হজরত ওকবা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘তীর চালান শিখো, ঘোড়ায় আরোহন করো, তীর নিক্ষেপকারীগণ আমার কাছে ঘোড়ায় আরোহনকারীদের থেকে অধিক প্রিয় এবং যে ব্যক্তি তীর নিক্ষেপ করা শেখার পর ছেড়ে দিলো, সে আল্লাহর নেয়ামতের অমর্যাদা করলো।’ (আবু দাউদ)


৬. দায়িত্ব পালন করা


হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ’যে ব্যক্তি বিপদের সময় মুজাহিদকে পাহারা দিল তার এ রাত ‘লাইলাতুল কদর’-এর রাত অপেক্ষা অনেক উত্তম।’ (মুসতাদরাকে হাকেম)


৭. দুনিয়ার ভালোবাসা ও মৃত্যুর ভয় ত্যাগ করা


নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবায়ে কেরামক সম্বোধন করে বললেন, ‘আমার উম্মতের ওপর ওই সময় অত্যাসন্ন যখন অন্যান্য জাতির লোকেরা তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে, যেমন খাবারের ওপর লোকেরা ঝাঁপিয়ে পড়ে। তখন কোনো এক সাহাবি জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! তখন কি আমাদের সংখ্যা এতই কম হবে যে, আমাদেরকে ধ্বংস করার জন্য অন্যান্য জাতির লোকেরা একত্রিত হয়ে আমাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে?


আল্লাহর রাসুল বললেন, ‘না’, সে সময় তোমাদের সংখ্যা কম হবে না বরং সে সময় তোমাদের সংখ্যা অনেক বেশি হবে। কিন্তু তোমরা বন্যায় ভাসমান খড়কুটার মতো হালকা হবে। তোমাদের শত্রুদের অন্তর থেকে তোমাদের প্রভাব দূরিভূত হয়ে যাবে এবং হীনমন্যতা ও কাপুরুষতা তোমাদের ঘিরে ধরবে। এরপর এক সাহাবি জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! এ হীনমন্যতা কেন আসবে? তিনি বললেন, এ কারণেই যে, ঐ সময় তোমাদের দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসা বেড়ে যাবে এবং মৃত্যুকে ভয় করতে থাকবে।’


৮. যে কোনো কাজে নির্ভীক হওয়া


হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘উত্তম জীবন ঐ ব্যক্তির; যে নিজের ঘোড়ার লাগাম ধরে আল্লাহর পথে দ্রুতবেগে দৌড়ায়ে চলে, কোথাও বিপদের কথা শুনলে ঘোড়ার পিঠে আরোহন করে দৌঁড়িয়ে যায় এবং হত্যা ও মৃত্যু থেকে এমন নির্ভীক হয়- যেন সে মৃত্যুর খোঁজেই আছে।’


সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করে ব্যক্তি পরিবার ও সমাজ জীবনে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাতের বাস্তবায়ন করা। সব সময় নিজেদের ধৈর্য, সহনশীল, পরিশ্রমী, কষ্ট ও বীরত্বপূর্ণ কাজে নবিজীর ‍সুন্নাতের অনুসরণ ও অনুকরণ করা।আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সুন্নাতি জীবন-যাপন করার তাওফিক দান করুন। হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করে সুস্বাস্থ্য ও সুস্থ থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।