মানুষের জীবনের তিনটি স্তর জন্ম, মৃত্যু এবং পুনরুত্থান। প্রত্যেক ব্যক্তিকেই অনিবার্যভাবে এ তিনটি পর্যায় অতিক্রম করতে হবে। কারণ মানুষের মূল এবং সবার আদি পিতা হজরত আদম আলাইহিস সালামও সৃষ্টি হয়েছিলেন। তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন এবং একদিন পুনরুত্থানও করবেন। এ বিষয়গুলো সম্পর্কে কোরআনুল কারিমের আল্লাহ তাআলা সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা তুলে ধরেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
مِنۡهَا خَلَقۡنٰکُمۡ وَ فِیۡهَا نُعِیۡدُکُمۡ وَ مِنۡهَا نُخۡرِجُکُمۡ تَارَۃً اُخۡرٰی
‘মাটি থেকেই আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি, আর আমি মাটিতেই তোমাদের ফিরিয়ে নেব এবং মাটি থেকেই তোমাদের পুনরায় বের করে আনা হবে।’ (সুরা ত্বাহা : আয়াত ৫৫)
এ আয়াতে মহান আল্লাহ মানুষের জন্ম, মৃত্যু এবং পুনরুত্থানের বিষয়টি একসঙ্গে তুলে ধরেছেন। যাতে মানুষ একটিকে বাদ দিয়ে অন্যটিকে ভুলে না যায় কিংবা প্রাধান্য না দেয়। প্রতিটি মানুষের জীবনেই এ তিনটি পর্যায় আসবে। আর মানুষকে এর প্রতিটি পর্যায়ই অতিক্রম করবে। মানুষের জন্ম-মৃত্যু-পুনরুত্থান যদি সফলভাবে সম্পন্ন হয় তবেই মিলবে নাজাত বা মুক্তি।
মানুষের জীবনের ৩টি পর্যায়
১. দুনিয়ায় জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত একটি পর্যায়;
২. আবার মৃত্যু থেকে কেয়ামত সংঘটিত হওয়া পর্যন্ত দ্বিতীয় পর্যায় এবং
৩. কেয়ামতের পর পুনরায় জীবিত হওয়া পর্যন্ত একটি পর্যায়।
কোরআনুল কারিমের এ আয়াতে সে বিষয়টি তুলে ধরে জন্ম-মৃত্যু-পুনরুত্থান সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি সুস্পষ্ট করা হয়েছে। আর আয়াতের দৃষ্টিতে এ তিনটি পর্যায় জমিনের উপরই অতিবাহিত হবে। জমিন থেকে তাদের শুরু। তারপর মৃত্যুর পর জমিনেই তাদের দাফন করা হবে। আর যখন সময় হবে তখন এখান থেকেই তাদের পুনরুত্থান ঘটানো হবে।’ (ইবনে কাসির)
বিষয়টি প্রমাণে মহান আল্লাহ একাধিক আয়াতেও নাজিল করেছেন এভাবে-
১. یَوۡمَ یَدۡعُوۡکُمۡ فَتَسۡتَجِیۡبُوۡنَ بِحَمۡدِهٖ وَ تَظُنُّوۡنَ اِنۡ لَّبِثۡتُمۡ اِلَّا قَلِیۡلًا
‘যেদিন তিনি তোমাদেরকে ডাকবেন এবং তোমরা তার প্রশংসার সঙ্গে তার ডাকে সাড়া দেবে এবং তোমরা মনে করবে, তোমরা অল্পকালই অবস্থান করেছিলো।’ (সুরা আল-ইসরা : আয়াত ৫২)
দুনিয়ায় মৃত্যুকাল থেকে নিয়ে কেয়ামতের দিনে উত্থান পর্যন্ত সময়কাল মাত্র কয়েক ঘন্টার বেশি বলে মনে হবে না। তোমরা তখন মনে করবে, আমরা সামান্য একটু সময় ঘুমিয়ে পড়েছিলাম তার মধ্যে হঠাৎ এ কেয়ামতের শোরগোল আমাদের জাগিয়ে দিয়েছে। কুরআন তাদের এ সমস্ত কথাবার্তার বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরেছে। কোথাও বলেছে-
کَاَنَّهُمۡ یَوۡمَ یَرَوۡنَهَا لَمۡ یَلۡبَثُوۡۤا اِلَّا عَشِیَّۃً اَوۡ ضُحٰهَا
‘যেদিন তারা তা দেখতে পাবে সেদিন তাদের মনে হবে যেন তারা পৃথিবীতে মাত্র এক সন্ধ্যা অথবা এক সকাল অবস্থান করেছে!’ (সুরা আন-নাযিআত : আয়াত ৪৬)
২. قَالَ فِیۡهَا تَحۡیَوۡنَ وَ فِیۡهَا تَمُوۡتُوۡنَ وَ مِنۡهَا تُخۡرَجُوۡنَ
‘তিনি (আল্লাহ) বললেন, সেখানেই তোমরা জীবন-যাপন করবে এবং সেখানেই তোমরা মারা যাবে। আর সেখান থেকেই তোমাদের বের করা হবে।’ (সুরা আল-আরাফ : আয়াত ২৫)
মানুষের অনিবার্য এ তিনটি পর্যায় সম্পর্কিত আয়াতটির একটি আমলও রয়েছে। মানুষের মৃত্যুর পর এ আয়াতটি পড়ে মৃতব্যক্তির কবরে ৩ মুঠি মাটি রাখে। হাদিসের কোনো কোনো বর্ণনায় মৃতব্যক্তিকে কবরে রাখার পর তিন মুঠি মাটি দেওয়ার সময় এই আয়াত পাঠ করে। আবার এ আয়াতটি পড়ার ছাড়াও তিনবার মাটি দেওয়ার বর্ণনা বিশুদ্ধ সনদে ইবনে মাজায় এসেছে। আর এ কারণেই ওলামায়ে কেরাম দাফনের সময় দুই হাত দিয়ে কবরে তিনবার মাটি দেওয়াকে মুস্তাহাব বলেছেন।
মনে রাখতে হবে
যেই আল্লাহ তাআলা মানুষকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন, তিনিই মানুষকে মাটিতে ফিরিয়ে নেবেন এবং এ মাটি থেকেই তাকে বের করে আনবেন। মানুষের জন্ম-মৃত্যু-পুনরুত্থান সম্পর্কে এ বর্ণনাটি এভাবেই এসেছে কোরআনে-
مِنۡهَا خَلَقۡنٰکُمۡ وَ فِیۡهَا نُعِیۡدُکُمۡ وَ مِنۡهَا نُخۡرِجُکُمۡ تَارَۃً اُخۡرٰی
‘মাটি থেকেই আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি, আর আমি মাটিতেই তোমাদের ফিরিয়ে নেব এবং মাটি থেকেই তোমাদের পুনরায় বের করে আনা হবে।’ (সুরা ত্বাহা : আয়াত ৫৫)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচি, গুনাহমুক্ত জীবন গঠনে জন্ম-মৃত্যু-পুনরুত্থান নিয়ে চিন্তা ও গবেষণা করা। অন্যায় ও অপরাধমুক্ত জীবন গড়া। কোরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনা অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা।আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপ জন্ম-মৃত্যু-পুনরুত্থানের বিষয়টি স্মরণ করে চলার তাওফিক দান করুন। পরকালের চিরস্থায়ী জীবনের প্রস্তুতি গ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।