যেসব কারণে বারবার মেসওয়াক করতে বলেছেন নবিজী (সা.)

নিজস্ব প্রতিবেদক
ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: সোমবার ১৭ই জানুয়ারী ২০২২ ১০:০৯ পূর্বাহ্ন
যেসব কারণে বারবার মেসওয়াক করতে বলেছেন নবিজী (সা.)

আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের অন্যতম মাধ্যম মেসওয়াক। নবিজী বলেন, ‘জিবরিল আলাইহিস সালাম অহি নিয়ে এসেছেন আর মেসওয়াকের কথা বলেননি- এমনটি কখনো হয়নি। তাই অবস্থা এমন মনে হতো যেন, মেসওয়াক করতে থাকার কারণে আমার মুখের অগ্রভাগ ছিলে যায়। (বুখারি, মুসনাদে আহমদ, মিশকাত) নবিজী মেসওয়াক করা প্রসঙ্গে কী বলেছেন? কেন খুব বেশি মেসওয়াক করতে বলেছেন? বেশি বেশি মেসওয়াক করার যুক্তিসংগত কারণই বাকী?


মেসওয়াকের গুরুত্ব


প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘উম্মতের জন্য কষ্টকর না হলে আমি ইশার নামাজকে দেরি করে পড়তে এবং প্রত্যেক নামাযের সময় দাঁতন বা মেসওয়াক করার আদেশ দিতাম।’ (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)


এমনকি তিনি আরও বলেছেন-


‘আমি আমার উম্মতের পক্ষে কষ্টকর না জানলে (প্রত্যেক) ওযুর সাথে দাঁতন বা মেসওয়াক করাকে ফরজ করতাম এবং ইশার নামাজ অর্ধেক রাত পর্যন্ত দেরি করে আদায় করতাম।’ (মুসতাদরাকে হাকেম, বায়হাকি,জামে)


এ কারণেই হজরত জায়েদ বিন খালেদ জুহানি রাদিয়াল্লাহুআনহু মসজিদে নামাজ পড়তে হাজির হওয়ার সময়ও তাঁর দাঁতন বা মেসওয়াককে কলমের মতো করে কানে গুঁজে রাখতেন। নামাজে সময় হলে তিনি মেসওয়াক করতেন তারপর আবার কানে গুঁজে রাখতেন।’ (আবু দাউদ, তিরমিজি, মিশকাত)


ঘন ঘন মেসওয়াক করার উপদেশ


১. নবিজী বলেছেন, মুমিন মুসলমানের প্রকৃতিগত কাজসমূহে একটি হলো- মেসওয়াক করে মুখ পরিষ্কার রাখা।’ (মুসলিম, মিশকাত)


২. নবিজী বলেছেন, ‘বিশেষ করে জুমআর দিন গোসল ও মেসওয়াক করা এবং আতর ব্যবহার করা একান্ত কর্তব্য। (মুসনাদে আহমাদ, বুখারি, আবু দাউদ, জামে)


৩. নবিজী বলেন, ‘জিবরিল (আ.) আমাকে এতবেশি দাঁতন বা মেসওয়াক করতে আদেশ করেছেন, যাতে আমি আমার দাঁত ঝরে যাওয়ার আশঙ্কা করছি।’


৪. অন্য বর্ণনায় তিনি বলেন, ‘এতে আমার ভয় হয় যে, দাঁতন বা মেসওয়াক করা আমার উপর ফরয করে দেওয়া হবে।’ (জামে)


৫. নবিজী বলেন, ‘বাড়িতে ঢুকামাত্রই তিনি প্রথম যে কাজ করতেন, তা হল দাঁতন বা মেসওয়াক করা।’ (মুসলিম)


৬. নবিজী আরও বলেন, ‘তাহাজ্জুদ পড়তে উঠলেই তিনি দাঁতন বা মেসওয়াক করেই দাঁত মাজতেন।’ (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)


৭. নবিজী বলেন, নামাজ ছাড়াও রাতের অন্যান্য সময়েও যখন তিনি জেগে উঠতেন; তখনও মেসওয়াক করতেন। আর এই কারণেই রাতে শোয়ার সময় তিনি শিথানে মাথার কাছে দাঁতন বা মেসওয়াক রেখে নিতেন।’ (জামে)


মেসওয়াক করার কারণ ও উপকারিতা


১. নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘দাঁতন বা মেসওয়াক করায় রয়েছে মুখের পবিত্রতা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি।’ (মুসনাদে আহমাদ, দারেমি, নাসাঈ, ইবনে খুযাইমাহ, ইবনে হিব্বান, বুখারি, মিশকাত)


২. একবার হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু দাঁতন বা মেসওয়াক আনতে আদেশ করে বললেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘বান্দা যখন নামাজ পড়তে দাঁড়ায়; তখন ফেরেশতারা তার পেছনে দাঁড়িয়ে কেরাত শুনতে থাকেন। ফেরেশতারা তার কাছাকাছি হতে থাকেন। পরিশেষে ফেরেশতা নিজ মুখ তার (বান্দার) মুখে মিলিয়ে দেন! ফলে তার মুখ হতে কুরআনের যেটুকুই অংশ বের হয় সেটুকু অংশই ফেরেশতার পেটে প্রবেশ করে। সুতরাং কোরআনের জন্য তোমরা তোমাদের মুখকে পবিত্র করো।’ (মুসনাদে বাযযার, তারগিব)


৩. নবিজী বলেছেন, ‘মেসওয়াক করে তোমরা তোমাদের মুখকে পবিত্র করো। কারণ, মুখ হল কোরআনের পথ।’ (সিলসিলাহ)


৪. হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মেসওয়াক করে আমাকে তা ধুতে দিতেন। কিন্তু ধোয়ার আগে আমি মেসওয়াক করে নিতাম। তারপর তা ধুয়ে তাঁকে দিতাম।’ (আবু দাউদ, মিশকাত)


নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে মেসওয়াকের গুরুত্ব এতবেশি ছিল যে, তাঁর ইন্তেকালের আগ মুহূর্তেও তিনি হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার দাঁতে চিবিয়ে নরম করে দেওয়া দাঁতন দিয়ে মেসওয়াক করেছেন।’ (বুখারি, মিশকাত)মেসওয়াক করার ক্ষেত্রে তিনি আরাক (পিল্লু) গাছের (ডাল বা শিকড়ের) দাঁতন বা মেসওয়াক ব্যবহার করতেন। (মুসনাদে আহমাদ)


সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, ঘন ঘন মেসওয়াক করা। হাদিসের ওপর আমল করা। মেসওয়াক করার মাধ্যমে ঘোষিত ফজিলত ও উপকারিতা অর্জন করা।আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হাদিসের দিকনির্দেশনা অনুসারে সব সময় ঘন ঘন মেসওয়াক করার তাওফিক দান করুন। আমিন।