নারী নির্যাতন প্রতিরোধে ইসলামের ভূমিকা

নিজস্ব প্রতিবেদক
ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: শনিবার ২৭শে নভেম্বর ২০২১ ১০:৪৮ পূর্বাহ্ন
নারী নির্যাতন প্রতিরোধে ইসলামের ভূমিকা

নারী নির্যাতন প্রতিরোধে ইসলামের ভূমিকা অনস্বীকার্য। ইসলামই নারীর সর্বোচ্চ অধিকার ও সুরক্ষা নিশ্চিতে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছে। বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় আলোচিত বিষয় নারী নির্যাতন। বাংলাদেশসহ বিশ্ব মিডিয়ার দিকে তাকালে দেখা যায়, প্রতিদিনই পৃথিবীর কোথাও না কোথাও অহরহ ঘটে চলেছে নারীর প্রতি অমানুষিক নির্যাতন। নিঃসন্দেহে নারীর প্রতি নির্যাতন ও বৈষম্য প্রতিরোধে ইসলামই একমাত্র ভরসার স্থল।


ইসলামে নারীর মর্যাদা


ইসলাম নারীকে দিয়েছে যথাযথ মর্যাদা ও সম্মান। আলাদা আলাদা করে বলতে গেলে ইসলামই দিয়েছে নারীকে মায়ের মর্যাদা। স্ত্রী মর্যাদা ও পারস্পরিক সুসম্পর্ক, বোনের যথাযথ অধিকার এবং কন্যার প্রতি দায়িত্ব পালনের অধিকার সংরক্ষণ সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছে ইসলাম। কোরআনে নারীর অধিকার রক্ষায় আল্লাহ ঘোষণা দেন-


يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِذَا جَاءكَ الْمُؤْمِنَاتُ يُبَايِعْنَكَ عَلَى أَن لَّا يُشْرِكْنَ بِاللَّهِ شَيْئًا وَلَا يَسْرِقْنَ وَلَا يَزْنِينَ وَلَا يَقْتُلْنَ أَوْلَادَهُنَّ وَلَا يَأْتِينَ بِبُهْتَانٍ يَفْتَرِينَهُ بَيْنَ أَيْدِيهِنَّ وَأَرْجُلِهِنَّ وَلَا يَعْصِينَكَ فِي مَعْرُوفٍ فَبَايِعْهُنَّ وَاسْتَغْفِرْ لَهُنَّ اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ


হে নবি! ঈমানদার নারীরা যখন আপনার কাছে এসে আনুগত্যের শপথ করে যে, তারা আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার করবে না, তাদের সন্তানদের হত্যা করবে না, জারজ সন্তানকে স্বামীর ঔরস থেকে আপন গর্ভজাত সন্তান বলে মিথ্যা দাবি করবে না এবং ভাল কাজে আপনার অবাধ্যতা করবে না, তখন তাদের আনুগত্য গ্রহণ করুন এবং তাদের জন্যে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল অত্যন্ত দয়ালু।’ (সুরা মুমতাহিনা : আয়াত ১২)


নারীর যত প্রতিবন্ধকতা



আধুনিক সমাজ ব্যবস্থার নামে নারীকে অগ্রসর ভাবা হলেও ইসলামের দৃষ্টিতে মর্যাদা সম্মান ও নিরাপত্তায় বরং নারীরা এখনও অনেক পিছিয়ে আছে। আধুনিকতার নামে নারীরা সম্মান মর্যাদায় পিছিয়ে যাচ্ছে। অনেক সুবিধা থেকে বঞ্চিত এবং বহু ক্ষেত্রে তারা নির্যাতিত হচ্ছে। আধুনিক সমাজ ব্যবস্থা নারীর কল্যাণে সেভাবে পাশে দাঁড়াতেও ব্যর্থ হয়েছে। যে কারণে নারীরা এখনও এসব সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে-


১. নিরাপদে ঘরতে বের হতে পারে না।


২. পাচারের শিকার হয়।


৩. জোরপূর্বক বেশ্যাবৃত্তিতে বাধ্য হয়।


৪. অহরহ যৌন হয়রানির শিকার হয়।


৫. গর্ভবতী নারীও স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি, দেবর ও ননদদের নির্যাতন থেকে মুক্তি পায় না।


৬. যৌতুকের বলি হয়ে মৃত্যুবরণ করতে হয়।


৭. স্বামী ও পিতার সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে হয়।


৮. অধিকাংশ নারীই পায় না তার ন্যয্য মোহরানার অধিকার।


৯. ঝুঁকিপূর্ণ গৃহপরিচারিকার কাজ থেকে মুক্তি পায় না কোমলমতি শিশুকন্যা।


১০. শ্রমের সঠিক মূল্যয়ন পেতেও ব্যর্থ নারীরা।


১১. আধুনিক সভ্যতাই উচ্চ মর্যাদার নামে নারীদের পণ্য হিসেবে ব্যবহার করছে।


১২. কৌশলে ধর্মীয় অধিকার থেকেও বঞ্চিত করা হচ্ছে নারীকে।


১৩. স্বাধীনতার নামে ইসলামের সবচেয়ে ঘৃনিত কাজ তালাকের অপব্যবহারের বলি হচ্ছে নারীরা।


সুতরাং নারীর নির্যাতন রোধে করণীয়


নারী নির্যাতন প্রতিরোধে ইসলামের ভূমিকাই সঠিক ও সর্বশ্রেষ্ঠ। কেননা ইসলামই নারীর শিক্ষা অর্জনের অধিকার, সম্পত্তির অধিকার, স্বাধীন চিন্তা ও মত প্রকাশের অধিকার সুনিশ্চিত করেছে। এমনকি ইসলামি শরিয়াতের সীমার মধ্যে থেকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ব্যাপারে পুরুষের মতো শ্রম-সাধনা করায় নারীর সমান অংশগ্রহণের অনুমতি দিয়েছে ইসলাম।ইসলামই একমাত্র জীবন ব্যবস্থা; যেখানে নারীরা মান-সম্মান ওইজ্জত-আব্রু হেফাজরে নিশ্চয়তা পায়। নির্যাতন থেকে মুক্তি পায়। সঠিক কর্ম দিকনির্দেশনা পায়। ইসলামের এসব নির্দেশনাগুলো হলো-


১. নারীর নিরাপত্তা


নারীকে সার্বিক নিরাপত্তা দিয়েছে ইসলাম। রাস্তায়, কর্মস্থলে ও যত্রতত্র নারীদের হয়রানি করা তো দূরের কথা বরং ইসলাম নারীদের সৌন্দর্যের প্রতি দৃষ্টি দিতেও কঠোর নির্দেশ দেয়। আল্লাহ বলেন-


قُل لِّلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ذَلِكَ أَزْكَى لَهُمْ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ


‘হে রাসুল! আপনি) মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাজত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয়ই তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন।‘ (সুরা নুর : আয়াত ৩০) আর কেউ যেন নারীকে হয়রানি না করে সে জন্য নারীকে বোনের দৃষ্টিতে দেখার ঘোষণা দেন প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনি বলেছেন-


إِنَّمَا النِّسَاءُ شَقَائِقُ الرِّجَال


‘নারীরা পুরুষদের সহোদরা (বোন)।’ (আবু দাউদ)


২. ধর্ষণ- ব্যভিচার ও অপবাদ রোধে ইসলাম


ইসলাম নারীর ব্যভিচার, দেহব্যবসা, নগ্নতা, বেহায়াপনা, অশ্লীলতা ও দেহপ্রদর্শনীকে সম্পূর্ণ হারাম তথা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। শুধু তাই নয়, ইসলামে নারীকে ধর্ষণ করা কিংবা ধর্ষণের চেষ্টা করা এবং নারীকে মিথ্যা অপবাদ দেওয়ার অত্যন্ত ভয়াবহ শাস্তি ঘোষণা করেছে। যাতে খারাপ চিত্তের পুরুষবা এসব অবাঞ্ছিত কাজ থেকে বিরত থাকে। একাধিক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন-


> وَلاَ تَقْرَبُواْ الزِّنَى إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاء سَبِيلاً


আর ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ।’ (সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ৩২)


> وَلاَ تَقْرَبُواْ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ


‘আর তোমরা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য অশ্লীলতার কাছাকাছি যেও না।।’ (সুরা আল-আনআম : আয়াত ১৫১)


> إِنَّ الَّذِينَ يُحِبُّونَ أَن تَشِيعَ الْفَاحِشَةُ فِي الَّذِينَ آمَنُوا لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَاللَّهُ يَعْلَمُ وَأَنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ


যারা পছন্দ করে যে, ঈমানদারদের মধ্যে ব্যভিচার প্রসার লাভ করুক, তাদের জন্যে ইহাকাল ও পরকালে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে। আল্লাহ জানেন, তোমরা জান না।’ (সুরা নুর : আয়াত ১৯)


> إِنَّ الَّذِينَ يَرْمُونَ الْمُحْصَنَاتِ الْغَافِلَاتِ الْمُؤْمِنَاتِ لُعِنُوا فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَلَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ


‘যারা সতী-সাধ্বী, নিরীহ ঈমানদার নারীদের প্রতি অপবাদ আরোপ করে, তারা ইহকালে ও পরকালে ধিকৃত এবং তাদের জন্যে রয়েছে গুরুতর শাস্তি।’ (সুরা নুর : আয়াত ২৩)


৩. অধিকার বাস্তবায়নের নির্দেশ


নারীর সম্পদের অধিকার দিয়েছে ইসলাম। এ অধিকার আল্লাহ তাআলা কর্তৃক নির্ধারিত। চাইলে যে কেউ নারীকে এ অধিকার থেকে বঞ্চিত করার ক্ষমতা রাখে না। আল্লাহ তাআলা এ বিষয়টি তুলে ধরেছেন কোরআনুল কারিমের এ আয়াতে-


يُوصِيكُمُ اللّهُ فِي أَوْلاَدِكُمْ لِلذَّكَرِ مِثْلُ حَظِّ الأُنثَيَيْنِ فَإِن كُنَّ نِسَاء فَوْقَ اثْنَتَيْنِ فَلَهُنَّ ثُلُثَا مَا تَرَكَ وَإِن كَانَتْ وَاحِدَةً فَلَهَا النِّصْفُ وَلأَبَوَيْهِ لِكُلِّ وَاحِدٍ مِّنْهُمَا السُّدُسُ مِمَّا تَرَكَ إِن كَانَ لَهُ وَلَدٌ فَإِن لَّمْ يَكُن لَّهُ وَلَدٌ وَوَرِثَهُ أَبَوَاهُ فَلأُمِّهِ الثُّلُثُ فَإِن كَانَ لَهُ إِخْوَةٌ فَلأُمِّهِ السُّدُسُ مِن بَعْدِ وَصِيَّةٍ يُوصِي بِهَا أَوْ دَيْنٍ آبَآؤُكُمْ وَأَبناؤُكُمْ لاَ تَدْرُونَ أَيُّهُمْ أَقْرَبُ لَكُمْ نَفْعاً فَرِيضَةً مِّنَ اللّهِ إِنَّ اللّهَ كَانَ عَلِيما حَكِيمًا


‘আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের সন্তানদের সম্পর্কে আদেশ করেন, একজন পুরুষের অংশ দু’জন নারীর অংশের সমান। অতঃপর যদি শুধু নারীই হয় দুই-এর অধিক, তবে তাদের জন্য ওই মালের তিন ভাগের দুই ভাগ যা ত্যাগ করে মরে এবং যদি একজনই হয়, তবে তার জন্যে অর্ধেক। মৃতের বাবা-মার মধ্য থেকে প্রত্যেকের জন্যে রেখে যাওয়া সম্পত্তির ছয় ভাগের এক ভাগ, যদি মৃতের ছেলে থাকে। যদি ছেলে না থাকে এবং বাবা-মা ওয়ারিস হয়, তবে মা পাবে তিন ভাগের এক ভাগ। অতঃপর যদি মৃতের কয়েকজন ভাই থাকে, তবে তার মাতা পাবে ছয় ভাগের এক ভাগ। ওসিয়ত পূরণ করার পর; যা (ওসিয়ত) করে মরেছে কিংবা ঋণ পরিশোধের পর। তোমাদের বাবা ও ছেলের মধ্যে কে তোমাদের জন্যে অধিক উপকারী তোমরা জান না। এটা আল্লাহ কতৃক নির্ধারিত অংশ। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা নিসা : আয়াত ১১)


এ আয়াতে নারী ক্ষেত্র বিশেষ যেমন পুরুষের অর্ধেক সম্পত্তি পাবে; আবার ক্ষেত্র বিশেষ নারীর সমান অর্ধেক সম্পত্তিও পাবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। আর নারীকে সম্পত্তির উত্তরাধিকার ঘোষণা করেছে ইসলাম।


৪. মোহরানা দেওয়ার নির্দেশ


 নারীর মোহরানার অধিকার সম্পর্কেও ইসলাম সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন-


> يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِنَّا أَحْلَلْنَا لَكَ أَزْوَاجَكَ اللَّاتِي آتَيْتَ أُجُورَهُنَّ


হে নবি! আপনার জন্য আপনার স্ত্রীগণকে হালাল করেছি, যাদের আপনি মোহরানা প্রদান করেন।’ (সুরা আহজাব : আয়াত ৫০)


> وَآتُواْ النَّسَاء صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً فَإِن طِبْنَ لَكُمْ عَن شَيْءٍ مِّنْهُ نَفْسًا فَكُلُوهُ هَنِيئًا مَّرِيئًا


‘আর তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের মোহর দিয়ে দাও খুশীমনে। তারা যদি খুশী হয়ে তা থেকে অংশ ছেড়ে দেয়, তবে তা তোমরা স্বাচ্ছন্দ্যে ভোগ কর।’ (সুরা নিসা : আয়াত ৪)


يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِنَّا أَحْلَلْنَا لَكَ أَزْوَاجَكَ اللَّاتِي آتَيْتَ أُجُورَهُنَّ وَمَا مَلَكَتْ يَمِينُكَ مِمَّا أَفَاء اللَّهُ عَلَيْكَ وَبَنَاتِ عَمِّكَ وَبَنَاتِ عَمَّاتِكَ وَبَنَاتِ خَالِكَ وَبَنَاتِ خَالَاتِكَ اللَّاتِي هَاجَرْنَ مَعَكَ وَامْرَأَةً مُّؤْمِنَةً إِن وَهَبَتْ نَفْسَهَا لِلنَّبِيِّ إِنْ أَرَادَ النَّبِيُّ أَن يَسْتَنكِحَهَا خَالِصَةً لَّكَ مِن دُونِ الْمُؤْمِنِينَ قَدْ عَلِمْنَا مَا فَرَضْنَا عَلَيْهِمْ فِي أَزْوَاجِهِمْ وَمَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ لِكَيْلَا يَكُونَ عَلَيْكَ حَرَجٌ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا


‘হে নবি! আপনার জন্য আপনার স্ত্রীগণকে হালাল করেছি, যাদেরকে আপনি মোহরানা প্রদান করেন। আর দাসীদেরকে হালাল করেছি, যাদেরকে আল্লাহ আপনার করায়ত্ব করে দেন এবং বিবাহের জন্য বৈধ করেছি আপনার চাচাতো ভগ্নি, ফুফাতো ভগ্নি, মামাতো ভগ্নি, খালাতো ভগ্নিকে যারা আপনার সাথে হিজরত করেছে। কোন মুমিন নারী যদি নিজেকে নবীর কাছে সমর্পন করে, নবী তাকে বিবাহ করতে চাইলে সেও হালাল। এটা বিশেষ করে আপনারই জন্য-অন্য মুমিনদের জন্য নয়। আপনার অসুবিধা দূরীকরণের উদ্দেশে। মুমিনগণের স্ত্রী ও দাসীদের ব্যাপারে যা (মোহর) ফরজ করেছি আমার জানা আছে। আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু।’ (সুরা আহজাব : ৫০)


৫. নির্যাতন নয় বরং অধিকার নিশ্চিতের নসিহত


নারীকে যে কোন ছুঁতোয় দৈহিকভাবে কিংবা মানসিকভাবে নির্যাতন করা ইসলামি শরীয়তে বৈধ নয়। স্বয়ং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজের জীবনে তার কোনো স্ত্রী  কিংবা কন্যার গায়ে হাত তোলেননি।


বাসা-বাড়ীতে কর্মরত কাজের মেয়ে কিবং বুয়ারাও ক্রীতদাসী নয়। ইসলামে ক্রীতদাস প্রথাবিলোপ করা হয়েছে। বিদায় হজ্জের ভাষণে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাস-দাসীদের ব্যাপারে বিশেষ নসিহত পেশ করেছেন-


‘তোমাদের দাস-দাসীদের ব্যাপারে সাবধান! তোমাদের দাস-দাসীদের ব্যাপারে সাবধান! তোমাদের দাসদাসীদের ব্যাপারে সাবধান! তোমরা যা খাবে তাদেরকে তা খেতে দেবে এবং তোমরা যা পরবে তাদেরকে তা পরতে দেবে।’ (মুসনাদ আহমাদ, আত-তাবাকাত আল-কুবরা)


৬. অপবাদ দেওয়ার শাস্তি ঘোষিণা


নারীকে অপবাদ দেওয়া নিষিদ্ধ করেছে ইসলাম। আল্লাহ তাআলা এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছেন এভাবে-


>  وَالَّذِينَ يَرْمُونَ الْمُحْصَنَاتِ ثُمَّ لَمْ يَأْتُوا بِأَرْبَعَةِ شُهَدَاء فَاجْلِدُوهُمْ ثَمَانِينَ جَلْدَةً وَلَا تَقْبَلُوا لَهُمْ شَهَادَةً أَبَدًا وَأُوْلَئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ


‘যারা সতী-সাধ্বী নারীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে অতঃপর স্বপক্ষে চার জন পুরুষ সাক্ষী উপস্থিত করে না, তাদেরকে আশিটি বেত্রাঘাত করবে এবং কখনও তাদের সাক্ষ্য কবুল করবে না। এরাই নাফারমান।’ (সুরা নুর : আয়াত ৪)


৭. তালাকের প্রতিরোধের নির্দেশ


স্বামী-স্ত্রীর অস্বস্তিকর জীবনের সুন্দর সমাধানের জন্য ইসলাম তালাকের বিধান রেখেছে। স্বামীর হাতে যদিও তালাকে প্রাথমিক অধিকার ন্যস্ত হয়েছে, কিন্তু সে অধিকার অন্যায়ভাবে প্রয়োগ করাও ইসলামি শরিয়তে আরেকটি অন্যায় ও গোনাহের কাজ হিসেবে বিবেচিত।


মনে রাখা জরুরি


বিয়ে যেভাবে সামাজিক সমঝোতার ভিত্তিতে হয়ে থাকে ঠিক তেমনি তালাকও উভয়ের বোঝাপড়ার মাধ্যমে সম্পন্ন করার নির্দেশ দেয় ইসলাম। এ ব্যাপারে ইসলামের দিকনির্দেশনা হলো এমন-


وَإِنْ خِفْتُمْ شِقَاقَ بَيْنِهِمَا فَابْعَثُواْ حَكَمًا مِّنْ أَهْلِهِ وَحَكَمًا مِّنْ أَهْلِهَا إِن يُرِيدَا إِصْلاَحًا يُوَفِّقِ اللّهُ بَيْنَهُمَا إِنَّ اللّهَ كَانَ عَلِيمًا خَبِيرًا


‘যদি তাদের মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদ হওয়ার মত পরিস্থিতিরই আশঙ্কা কর, তবে স্বামীর পরিবার থেকে একজন এবং স্ত্রীর পরিবার থেকে একজন সালিস নিযুক্ত করবে। তারা উভয়ের মীমাংসা চাইলে আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছু অবহিত।’ (সুরা নিসা : আয়াত ৩৫)


অতঃপর করণীয় কী হবে? এ সম্পর্কেও আল্লাহ তাআলা বলেন-


الطَّلاَقُ مَرَّتَانِ فَإِمْسَاكٌ بِمَعْرُوفٍ أَوْ تَسْرِيحٌ بِإِحْسَانٍ وَلاَ يَحِلُّ لَكُمْ أَن تَأْخُذُواْ مِمَّا آتَيْتُمُوهُنَّ شَيْئًا إِلاَّ أَن يَخَافَا أَلاَّ يُقِيمَا حُدُودَ اللّهِ فَإِنْ خِفْتُمْ أَلاَّ يُقِيمَا حُدُودَ اللّهِ فَلاَ جُنَاحَ عَلَيْهِمَا فِيمَا افْتَدَتْ بِهِ تِلْكَ حُدُودُ اللّهِ فَلاَ تَعْتَدُوهَا وَمَن يَتَعَدَّ حُدُودَ اللّهِ فَأُوْلَـئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ


‘তালাকে-‘রাজঈ' হলো- দুবার পর্যন্ত। তারপর হয় নিয়মানুযায়ী রাখবে, না হয় সহৃদয়তার সঙ্গে বর্জন করবে। আর তাদের কাছ থেকে নিজের দেওয়া সম্পদ থেকে কিছু ফিরিয়ে নেওয়া তোমাদের জন্য জায়েয নয়। কিন্তু যে ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী উভয়েই এ ব্যাপারে ভয় করে যে, তারা আল্লাহর নির্দেশ বজায় রাখতে পারবে না; অতঃপর যদি তোমাদের ভয় হয় যে, তারা উভয়েই আল্লাহর নির্দেশ বজায় রাখতে পারবে না, তাহলে সেক্ষেত্রে স্ত্রী যদি বিনিময় দিয়ে অব্যাহতি নিয়ে নেয়, তবে উভয়ের মধ্যে কারোরই কোনো পাপ নেই। এই হলো আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা। কাজেই একে অতিক্রম করো না। বস্তুতঃ যারা আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘন করবে, তারাই জালেম।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২২৯)


৮. পরকালের জবাবদিহিতা


প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল আর প্রত্যেককেই তার কাজের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। সুতরাং যে বা যারা নারী নির্যাতন করে থাকে; তাদের এ কথা স্মরণ রাখা জরুরি যে, এ নির্যাতনের জন্য অবশ্যই তাকে আল্লাহর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে জবাবদিহি করতে হবে। আর এ জবাবদিহিতাই মানুষকে নারী নির্যাতনসহ যে কোনো অন্যায় কাজ থেকে ফিরিয়ে রাখবে। জবাবদিহিতা থাকলে নারী-পুরুষ সবাই উত্তম চরিত্রের মুসলিমে পরিণত হবে ইন শা আল্লাহ।


মুসলিম উম্মাহর উচিত, নারী প্রতি আল্লাহ প্রদত্ত সব হক যথাযথভাবে আদায় করা। নারীকে মর্যাদা দেওয়া। নারীর মর্যাদা রক্ষায় কুরআন-সুন্নাহর ওপর যথাযথ আমল করা।আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহসহ সবাইকে নারীর প্রতি যথাযথ সম্মান ও মর্যাদায় ইসলামের বিধান মেনে চলার তাওফিক দান করুন। বিশ্বজুড়ে সবাইকে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে ইসলামের বিভিন্ন ইতিবাচক দিকগুলো বাস্তবায়নের তাওফিক দান করুন। আমিন।