বাবা আছে তো মা নেই। মা আছে তো বাবা নেই। কারো কারো বাবা-মা কেউই বেঁচে নেই। আবার এমন অনেকেই আছেন যাদের বাবা-মা উভয়েই বেঁচে আছেন। সুতরাং চাই বাবা-মা জীবিত থাকুক কিংবা মারা যাক; উভয়ের জন্য বেশি বেশি দোয়া করা আল্লাহর নির্দেশ এবং সন্তানের জন্য একান্ত আবশ্যক কর্তব্য। কিন্তু কীভাবে এ দোয়া করবেন সন্তানরা? দোয়া করা সম্পর্কে মহান আল্লাহ কী বলেছেন?
বাবা-মার জন্য এ দোয়াটি বেশি বেশি করা-
رَّبِّ ارۡحَمۡهُمَا کَمَا رَبَّیٰنِیۡ صَغِیۡرًا
উচ্চারণ : ‘রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বায়ানি সাগিরা।’
অর্থ : ‘হে আমার রব! তাদের উভয়ের (বাবা-মা) প্রতি দয়া করুন; যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে লালন-পালন করেছেন।’ (সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ২৪) তাহলে মহান আল্লাহ তাআলা বাবা-মাকে নিয়ে কী নির্দেশ দিয়েছেন। কোরআনের সে নির্দেশনাটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
وَ قَضٰی رَبُّکَ اَلَّا تَعۡبُدُوۡۤا اِلَّاۤ اِیَّاهُ وَ بِالۡوَالِدَیۡنِ اِحۡسَانًا ؕ اِمَّا یَبۡلُغَنَّ عِنۡدَکَ الۡکِبَرَ اَحَدُهُمَاۤ اَوۡ کِلٰهُمَا فَلَا تَقُلۡ لَّهُمَاۤ اُفٍّ وَّ لَا تَنۡهَرۡهُمَا وَ قُلۡ لَّهُمَا قَوۡلًا کَرِیۡمًا
‘তোমার প্রভু নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তিনি ছাড়া অন্য কারো উপাসনা করবে না এবং মা-বাবার প্রতি ভালো ব্যবহার করবে; তাদের একজন অথবা উভয়েই তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্য হলে তাদেরকে (বিরক্তিসূচক শব্দ) ‘উঃ’ কিংবা ‘উফ্’ শব্দ বলো না এবং তাদেরকে ভৎর্সনা (গালাগাল) করো না; বরং তাদের সঙ্গে সম্মানসূচক নম্র ভাষায় কথা বলো।’ (সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ২৩)
পরবর্তী আয়াতে তাদের উভয়ের জন্য দোয়া করার নির্দেশ ও দোয়ার ভাষা সুস্পষ্টভাবে মহান আল্লাহ এভাবে তুলে ধরেছেন-
وَ اخۡفِضۡ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحۡمَۃِ وَ قُل
‘অনুকম্পায় তাদের প্রতি বিনয়াবনত থেকো এবং (তাদের উদ্দেশ্যে) বলো-
رَّبِّ ارۡحَمۡهُمَا کَمَا رَبَّیٰنِیۡ صَغِیۡرًا
হে আমার প্রতিপালক! তাদের উভয়ের প্রতি দয়া কর; যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে প্রতিপালন করেছে।’ (সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ২৪)বাবা-মাকে বেশি বেশি স্মরণ করা ও তাদের জন্য দোয়া করার আরও অনেক কারণ উল্লেখ করেছেন বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনি বাবা-মার সঙ্গে ভালো ব্যবহারকে সবচেয়ে উত্তম আমল হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন এভাবে-
হজরত আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রশ্ন করেন, কোন আমল মহান আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বেশি প্রিয়? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘সময় মতো নামাজ আদায় করা। তিনি বললেন, তারপর কোন কাজ? তিনি বললেন, বা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা। তিনি বললেন, তারপর? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদ করা। (বুখারি)সন্তানের জন্য মা-বাবার মর্যাদা কতবেশি তা হাদিসের এ নির্দেশনা থেকেও প্রমাণিত-
হজরত আসমা রাদিয়াল্লাহু আনহা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করেন, আমার মা মুশরিকা। তিনি আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন। তাকে আদর-আপ্যায়ন করা জায়েয হবে কি? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন ‘তোমার মাকে আদর-আপ্যায়ন কর।’ (মুসলিম)মা মুশরিকা হওয়া সত্ত্বেও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার মায়ের সেবাযত্ন ও সদ্ব্যবহারের জন্য নির্দে শ দিয়েছেন। তবে অমুসলিম মা-বাবার আনুগত্য করা যাবে না।
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, মহান আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলা। বাবা-মার জন্য বেশি বেশি দোয়া করা। তাদের প্রতি বিরক্তি প্রকাশ না করা। তারা কষ্ট পায় এমন কোনো কথা ও কাজ না করা।আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বাবা-মা উভয়ের জন্য বেশি বেশি দোয়া করার তাওফিক দান করুন। তাদের কল্যাণে কাজ করার তাওফিক দান করুন। তাদের ভালোবাসা পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।