যে আমল-ইসতেগফারে আসবে না অভাব

নিজস্ব প্রতিবেদক
ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার ২৮শে জুলাই ২০২১ ০৯:৪২ পূর্বাহ্ন
যে আমল-ইসতেগফারে আসবে না অভাব

ইসতেগফার বা ক্ষমা জীবিকা অর্জনের অন্যতম উপায়। এটি উত্তম রিজিক লাভের দুর্দান্ত কার্যকরী আমল হিসেবেও বিবেচিত। আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে জীবিকা বা রিজিক লাভে ইসতেগফারের বিষয়টি এভাবে তুলে ধরেছেন-

فَقُلْتُ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ إِنَّهُ كَانَ غَفَّاراً*يُرْسِلِ السَّمَاءَ عَلَيْكُمْ مِدْرَاراً*وَيُمْدِدْكُمْ بِأَمْوَالٍ وَبَنِينَ وَيَجْعَلْ لَكُمْ جَنَّاتٍ وَيَجْعَلْ لَكُمْ أَنْهَاراً

অতঃপর বলেছি, তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা প্রার্থনা কর। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের উপর অজস্র বৃষ্টিধারা ছেড়ে দেবেন, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি বাড়িয়ে দেবেন, তোমাদের জন্যে উদ্যান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্যে নদীনালা প্রবাহিত করবেন।’ (সুরা নুহ : আয়াত ১০-১২)


হাদিসে পাকে এসেছে, ‘অভাব মানুষকে কখনও কখনও কুফরের কাছাকাছি নিয়ে যায়।’ অনেক সময় এ অভাব মানুষের ঈমান-আকিদাকেও দুর্বল করে দেয়। শুধু ক্ষমা প্রার্থনাই নয় বরং উত্তম রিজিক দিয়ে মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর উম্মতকে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নানা ফর্মুলা ও আমল বাস্তবায়নের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। তাহলো-

১. বেশি বেশি তাওবাহ-ইসতেগফার করা

তাওবাহ-ইসতেগফারে বান্দার অভাব মোচন হয়। গোনাহ মাফ হয়। সন্তান-সন্তুতির অভাব যেমন থাকে না তেমিন রিজিকেও আসে পরিপূর্ণ বরকত। অভাবমুক্ত থাকতে কুরআনুল কারিমে বেশি বেশি ইসতেগফার তথা ক্ষমা প্রার্থনা করার এ নির্দেশই দেওয়া হয়েছে। যার ফলে আল্লাহ তাআলা মানুষকে উত্তম রিজিকসহ অসংখ্য নেয়ামতে ধন্য করবেন বলেও জানিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-

‘অতপর বলেছি- তোমরা তোমাদের পালনকর্তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের উপর অজস্র বৃষ্টিধারা ছেড়ে দেবেন। তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি বাড়িয়ে দেবেন, তোমাদের জন্যে উদ্যান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্যে নদীনালা প্রবাহিত করবেন।’ (সুরা নুহ : আয়াত ১০-১২)



> أَستَغْفِرُ اللهَ

উচ্চারণ : ‘আস্তাগফিরুল্লাহ।’

অর্থ : আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি।


> أَسْتَغْفِرُ اللهَ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ

উচ্চারণ : ‘আস্তাগফিরুল্লাহা ওয়া আতুবু ইলাইহি।‘

অর্থ : আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তাঁর দিকেই ফিরে আসছি।


> رَبِّ اغْفِرْ لِيْ وَتُبْ عَلَيَّ إِنَّكَ (أنْتَ) التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ

উচ্চারণ : 'রাব্বিগ্ ফিরলি ওয়া তুব আলাইয়্যা ইন্নাকা (আংতাত) তাওয়্যাবুর রাহিম।'

অর্থ : 'হে আমার প্রভু! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমার তাওবাহ কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি মহান তাওবা কবুলকারী করুণাময়।'


> أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّومُ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ

উচ্চারণ : 'আস্‌তাগফিরুল্লা হাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল কইয়্যুমু ওয়া আতুবু ইলায়হি।'

অর্থ : 'আমি ওই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, যিনি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোনো মাবুদ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী এবং তাঁর কাছেই (তাওবাহ করে) ফিরে আসি।'



> رَبِّ إِنِّى ظَلَمْتُ نَفْسِى فَٱغْفِرْ لِى

উচ্চারণ : ‘রাব্বি ইন্নি জলামতু নাফসি ফাগফিরলি’ (সুরা কাসাস : আয়াত ১৬)

অর্থ : হে আমার রব! নিশ্চয় আমি আমার নফসের উপর জুলুম করেছি। সুতরাং আপনি আমাকে ক্ষমা করুন।’


২. যথা সময়ে জাকাত আদায়

অভাবমুক্ত সমাজ গঠনে জাকাত ব্যবস্থা বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। তাই অভাবমুক্ত সমাজ গঠনের উদ্দেশ্যে যথা সময়ে নিজ উদ্যোগে রাষ্ট্রীয় তথা নির্ভরযোগ্য জাকাত ফাণ্ডে জাকাতের টাকা জমা দেওয়া। জাকাতের অর্থ সুষম বণ্টনের জন্য কারা এ অর্থ পাবে তার সুস্পষ্ট বর্ণনাও এসেছে কুরআনে।

যাদের সম্পদ অর্জনের কোনো যোগ্যতা বা সামর্থ্য নেই। জীবন পরিচালনায় উত্তরাধিকার সূত্রেও কোনো সম্পদ পায়নি। আল্লাহ তাআলা তাদের জন্য ধনী-সম্পদশালীর অর্থে অধিকার প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছেন। এসব লোক সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন-

’জাকাত হল কেবল ফকির, মিসকিন, জাকাত আদায়কারী ও যাদের চিত্ত আকর্ষণ প্রয়োজন (নব মুসলিম) তাদের হক এবং তা দাস-মুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর পথে জেহাদকারীদের জন্য এবং মুসাফিরদের জন্য, এই হল আল্লাহর নির্ধারিত বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা তাওবাহ : আয়াত ৬০)


আল্লাহ তাআলা কর্তৃক নির্ধারিত বিধান গরিবের অধিকার জাকাত আদায়ে গুরুত্বারোপ করেছেন প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। কেননা যারা জাকাত আদায় করবে না তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। হাদিসে এসেছে-

হজরত আবু যার রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন,(কিছু কথপোকথনের পর) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘সেই সত্তার শপথ! যাঁর হাতে আমার জীবন! যে ব্যক্তি এ ধরনের উট অথবা গরু রেখে মৃত্যুবরণ করল, যার জাকাত সে দেয়নি, কেয়ামতের দিন সেগুলো পূর্বাবস্থা থেকে বেশি মোটাতাজা হয়ে তার কাছে আসবে এবং নিজেদের পায়ের ক্ষুরা দ্বারা তাকে দলিত (আঘাত) করবে এবং শিং দ্বারা গুঁতা মারবে। (এভাবে) শেষের জন্তুটি চলে যাওয়ার পর আবার প্রথম জন্তুটি ফিরে আসবে। মানুষের সম্পূর্ণ বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত শাস্তির এ ধারা চলতে থাকবে।’ (তিরমিজি)


আল্লাহর বিধান বাস্তবায়নে হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু ইসলামিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় জাকাত আদায়ে অস্বীকারকারীদের ব্যাপারে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। আর সে কারণেই ইসলামি খেলাফতের সফল খলিফা দ্বিতীয় ওমর খ্যাত হজরত ওমর ইবনে আব্দুল আজিজের সময়ে এসে জাকাতের অর্থ গ্রহণের জন্য কোনো লোক খুঁজে পাওয়া যায়নি।


৩. সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া

অভাবমুক্ত সমাজ গঠনে একে অন্যের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়াও অন্যতম একটি। মদিনায় হিজরতকালীন সময়ে মহাজিরদের আর্থিক সংকটে আনসারদের সহযোগিতাই এর অন্যতম উদাহরণ। সর্ব কালের সর্ব যুগের জন্য এ সহযোগিতার উদ্যোগ প্রশংসনীয় ও অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। হাদিসে সে সময়ের একটি ঘটনা এভাবে উঠে এসেছে-

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, একবার আনসার সাহাবিরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললেন, আমাদের ও আমাদের ভাই (মুহাজির)-দের মধ্যে খেজুরের বাগান ভাগ করে দিন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ’না’। তখন তাঁরা (মুহাজিরদের) বললেন, আপনারা আমাদের (আনসারদের) বাগানে (আমাদের সঙ্গে) কাজ করুন, আমরা আপনাদের (মুহাজিরদের) ফল-ফলাদির অংশীদার করব। তাঁরা বলল, আমরা শুনলাম এবং মানলাম।’ (বুখারি)


৪. আত্মীয়তার সুসম্পর্ক বজায় রাখা

অভাবমুক্ত সমাজ গঠনে একে অন্যের প্রতি সুসম্পর্ক বজায় রাখা জরুরি। বিশেষ করে আত্মীয়তার সুসম্পর্ক বজায় রাখা। আত্মীয়তার বন্ধ ঠিক রাখা কুরআনুল কারিমের নির্দেশও বটে। প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা ব্যক্তিদের রিজিক বেড়ে যাবে বলেছেন। হাদিসে এসেছে-

হজরত আনাস বিন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি শুনেছি, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি পছন্দ করে যে তার জীবিকা বৃদ্ধি হোক অথবা তাঁর মৃত্যুর পরে সুনাম থাকুক, সে যেন আত্মীয়দের সঙ্গে সদাচরণ করে।’ (বুখারি)


৫. দোয়ার আমল

অভাব থেকে মুক্তি ও উত্তম রিজিকের জন্য বেশি বেশি দোয়া করার বিকল্প নেই। প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর উম্মতকে অভাবমুক্ত থাকতে আল্লাহর কাছে দোয়া করার বিশেষ আবেদন শিখিয়েছেন। যাতে তাঁর উম্মত অভাবের কারণে কুফরির দিকে চলে না যায়। হাদিসে এসেছে-

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْكُفْرِ وَالْفَقْرِ اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল কুফরি ওয়াল ফিকরি, আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনা আজিবল ক্বাবরি লা ইলাহা ইল্লা আংতা।’ (আবু দাউদ)


অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনার নিকট কুফরী ও দরিদ্রতা হতে আশ্রয় চাইছি। হে আল্লাহ! আমি কবরের আজাব থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাইছি, আপনি ছাড়া অন্য কোনো ইলাহ নেই।’


অভাবমুক্ত থাকতে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দিকনির্দেশনা মুমিন মুসলমানসহ সবার জন্য খুবই জরুরি। আর তা পালনে ব্যক্তি পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্র হবে নিঃসন্দেহে অভাবমুক্ত।


আল্লাহ তাআলা কুরআন-সুন্নাহর এসব দিকনির্দেশনা মেনে অভাবমুক্ত সমাজ বিনির্মাণের তাওফিক দিন। অভাবের কারণে মুমিন মুসলমানকে কুফরির দিকে ধাবিত হওয়া থেকে হেফাজত করুন। আমিন।