ইসলামে সুদ হারাম ও সুদ খাওয়ার ভয়ংকর শাস্তি!

নিজস্ব প্রতিবেদক
হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী- বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ
প্রকাশিত: রবিবার ১০ই নভেম্বর ২০২৪ ১০:৪১ পূর্বাহ্ন
ইসলামে সুদ হারাম ও সুদ খাওয়ার ভয়ংকর শাস্তি!

ইসলামে সুদ হারাম। সুদের সকল কার্যক্রমও হারাম। সুদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই অভিশপ্ত। সুদ দেওয়া-নেওয়ার সঙ্গে জড়িত সবাইকে নবীজি (স.) অভিশাপ দিয়েছেন। বর্ণিত হয়েছে, ‘যে সুদ খায়, যে সুদ খাওয়ায়, যে সাক্ষী থাকে এবং যে ব্যক্তি সুদের হিসাব-নিকাশ বা সুদের চুক্তিপত্র ইত্যাদি লিখে দেয় সবার প্রতি রাসুলুল্লাহ (স.) লানত করেছেন।’ (তিরমিজি: ১২০৬)


সুদের বিপরীতে মহান আল্লাহ বেচাকেনাকে হালাল করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ ক্রয়-বিক্রয় হালাল করেছেন আর সুদকে হারাম করেছেন।’ (সুরা বাকারা: ২৭৫) 


সুদ বর্জনের নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে বিশ্বাস স্থাপনকারীরা, আল্লাহকে ভয় করো এবং যদি তোমরা মুমিন হও, তাহলে সুদের মধ্যে যা বাকি আছে তা বর্জন করো। কিন্তু যদি তা না করো তাহলে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের পক্ষ থেকে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাও। যদি তোমরা ক্ষমা প্রার্থনা করো, তাহলে তোমাদের জন্য তোমাদের মূলধন আছে। তোমরা অত্যাচার করবে না আর তোমরা অত্যাচারিত হবে না।’ (সুরা বাকারা: ২৭৮)


সুদখোর স্বয়ং আল্লাহ ও রাসুলের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে। এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সুদের যা বকেয়া আছে তা ছেড়ে দাও, যদি তোমরা মুমিন হও। যদি তোমরা না করো তবে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের পক্ষ থেকে যুদ্ধের ঘোষণা শুনে নাও..।’ (সুরা বাকারা: ২৭৮-২৭৯)


কোরআন-হাদিসে সুদের ক্ষেত্রে যত কঠোর ভাষা প্রয়োগ করা হয়েছে অন্য কোনো গুনাহর ব্যাপারে এমনটি করা হয়নি। সুদ ৭০ প্রকার পাপের সমষ্টি, যার মধ্যে সবচেয়ে নিম্নতম হলো—আপন মায়ের সঙ্গে ব্যভিচার করার সমতুল্য (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক: ১৫৩৪৫)। 


রাসুল (স.) বলেছেন, ‘তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক কাজ থেকে বিরত থাকো। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল, সেই সাতটি ধ্বংসাত্মক কাজ কী? তিনি বলেন, আল্লাহর সঙ্গে শরিক করা; জাদু করা; অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যা করা, যা আল্লাহ নিষেধ করেছেন; সুদ খাওয়া; এতিমের সম্পদ আত্মসাৎ করা; জিহাদের ময়দান থেকে পালিয়ে যাওয়া; সতী মুমিন নারীদের অপবাদ দেওয়া।’ (বুখারি: ২৭৬৬)


সুদের শাস্তি:


১. সুদ খাওয়ার শাস্তি সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যারা সুদ খায়, তারা কেয়ামতের দিন দণ্ডায়মান হবে, যেভাবে দণ্ডায়মান হয় ওই ব্যক্তি; যাকে শয়তান আসর করে মোহাবিষ্ট করে দেয়।’ (সুরা বাকারা: ২৭৫)


২. সুদখোরকে মৃত্যুর পর থেকে কেয়ামত পর্যন্ত বরজখি জীবনে আজাব দেওয়া হবে। তাকে এমন নদীতে সাঁতার কাটতে হবে, যার পানি হবে রক্তের মতো লাল এবং তাতে তার ওপর পাথর নিক্ষেপ করা হবে। (বুখারি: ১৩৮৬)


৩. মেরাজের রাতে রাসুল (স.) এমন কিছু লোক দেখেছিলেন যাদের পেটগুলো বিশাল ঘরের মতো বের হয়ে ছিল, এবং তা ছিল অসংখ্য সাপে পরিপূর্ণ। যেগুলো পেটের বাইরে থেকে দেখা যাচ্ছিল। জিবরাঈল (আ.) জানান, এরা সুদখোরের দল। (মুসনাদে আহমদ: ৮৬৪০)


সুদের ক্ষতিকর প্রভাব:


১. সুদ মারাত্মক গুনাহ হওয়ার কারণে এর প্রভাবে তাকওয়া বা খোদাভীতি হারিয়ে যায়।

  

২. সুদ মানুষের আত্মায় শিরকের মতো প্রভাব ফেলে। (মুসনাদ বাজ্জাজ: ১৯৩৫)


৩. সুদের কারণে মানুষের অন্তরে কৃপণতা সৃষ্টি হয় এবং সম্পদের প্রতি মোহ তৈরি হয়।


৪. সুদখোর আল্লাহর রহমত থেকে দূরে থাকে। (মুসনাদে আহমদ: ১৩৬৫)


৫. সুদের কারণে কল্যাণের দরজা বন্ধ হয়ে যায়, ফলে একে অন্যকে সহায়তা করতে আগ্রহী হয় না।


আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সুদের ভয়ংকর ক্ষতি ও পরিণাম সম্পর্কে সতর্ক থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।