প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ‘আপনি তো নাট্যকার, আপনি নেত্রী না’। রবিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যার বিচারের দাবিতে আয়োজিত গণজমায়েতে কামাল হোসেন বলেন, সন্ত্রাসকে আজ প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হয়েছে। আবরার কী অন্যায় করেছিল? আবরারের সঙ্গে যেটা করা হয়েছে, সেটা সংবিধানের ওপর আঘাত, সংবিধানকে অমান্য করা, সংবিধানকে ধ্বংস করা এটা অপরাধ। এই অপরাধ হলো সবচেয়ে গুরুতর অপরাধ।
তিনি বলেন, ‘আইন ভঙ্গ করা তো অপরাধ বটেই। কিন্তু মৌলিক আইন ভঙ্গ করা মানে সেখানে যে মৌলিক অধিকার আছে, সেটাকে অমান্য করা। এর চেয়ে গুরুতর অপরাধ আর হয় না। এ অপরাধ এরা (সরকার) রীতিমতো করে যাচ্ছে’। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে ড. কামাল বলেন, ‘সময় থাকতে মাথা ঠান্ডা করেন। মনে করবেন না, কিছু পুলিশ, কিছু বন্দুক দিয়ে এ দেশের মানুষকে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পারবেন। আমাদের কণ্ঠকে স্তব্ধ করার কোনো ক্ষমতা নেই আপনার, পারবেনও না। ১৬ কোটি মানুষের কণ্ঠকে স্তব্ধ কেউ করতে পারে নাই। আপনিও পারবেন না। সময় থাকতে মাথা ঠান্ডা করে কুশাসন থেকে দেশকে মুক্ত করেন’।
তিনি বলেন, ‘‘যথেষ্ট হয়েছে। আর কত? তৃতীয়বার? তৃতীয়বার কে আপনাকে নির্বাচিত করেছে। আমরা তো দেখেছি ২৯ তারিখ রাতের পর ৩০ তারিখ সকালে এসে ‘আমি হয়ে গেছে, আগামী পাঁচ বছরের জন্য আমি হয়ে গেছি, আপনাদেরকে ধন্যবাদ দিই’। এই নাটক দেখেছি। আপনি তো নাট্যকার। আপনি নেত্রী না। আপনি নিজে মিথ্যার শিকার হচ্ছেন। মিথ্যার শিকার যারা হন, তাদের পরিণতি হয় ভয়াবহ। মিথ্যা দিয়ে আপনি কত দিন ভুল পথে চলবেন’? কামাল হোসেন বলেন, ‘আমরা কেউ সেই প্রতারণার সঙ্গী না। আমরা সেই প্রতারণার ব্যাপারে কোনো ভূমিকা রাখি নাই। সুতরাং আপনার ধন্যবাদ আমরা কেউ গ্রহণ করছি না। সভ্যভাবে আপনি সরে যান। সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন। অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন করেন’।
ড. কামাল বলেন, ‘আমি ক্ষমতা চাচ্ছি না। এই মঞ্চের কেউ চাচ্ছে না। ১৬ কোটি মানুষের কাছে মালিকানা ছেড়ে দিন। কুশাসন থেকে মানুষ মুক্ত হোক। সুশাসন প্রতিষ্ঠা হোক। আপনি সরে দাঁড়ান। আপনাকে সরতেই হবে। দেশের প্রতিদিন যে ক্ষতি হচ্ছে, সেই ক্ষতি থেকে বাঁচতে আপনাকে সরে দাঁড়াতেই হবে’। খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য গুরুতরভাবে খারাপ হয়েছে। তার বেঁচে থাকার ব্যাপারে সবাই আশঙ্কা করছে। উনি তিন বার দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। উনি মুক্তি পাবেন না, চিকিৎসা পাবেন না, এটা কল্পনা করা যায় না। আমি ওনার মুক্তি দাবি করছি’।
জমায়েতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি আ স ম আবদুর রব, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য এস এম আকরাম, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহুমুদ টুকু, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অধ্যাপক আবু সাঈদ, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী প্রমুখ।
পরে প্রেসক্লাব থেকে শহীদ মিনার অভিমুখে শোকর্যালি শুরু করেন ফ্রন্টের নেতাকর্মীরা। প্রেসক্লাব থেকে বের হওয়ার পর কদম ফোয়ারার আগে র্যালি আটকে দেয় পুলিশ। এ সময় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা সরকারবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেন। পুলিশের সঙ্গে নেতাকর্মীদের কিছুটা কথা কাটাকাটি ও ধস্তাধস্তি হয়। বাধা দেওয়ায় সেখানেই দাঁড়িয়ে সরকারের কড়া সমালোচনা করেন জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব। তিনি বলেন, এই সরকার গণবিরোধী সরকার। জনগণকে দেখলেই তারা ভয় পায়। র্যালি করতে না দেওয়া তিনি ২২ অক্টোবর শোক র্যালির ঘোষণা করেন।
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।