ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, ময়মনসিংহের ১১টি আসনে রাজনৈতিক উত্তেজনা ততই বাড়ছে। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন, পিআর পদ্ধতিতে ভোট এবং নতুন নিয়মে ব্যালট ব্যবহারের বিষয়গুলোতে ভোটারদের মধ্যে প্রশ্ন থাকলেও মাঠের রাজনীতিতে তার প্রভাব খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। বরং বিএনপি, জামায়াতসহ বিরোধী দলগুলো ক্ষমতাসীন দলের অনুপস্থিতি কাজে লাগিয়ে স্বতঃস্ফূর্ত রাজনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছে।
সবচেয়ে আলোচনায় রয়েছে বিএনপি ও জামায়াতের অভ্যন্তরীণ সমীকরণ, সম্ভাব্য বিদ্রোহী প্রার্থী, জোটগত হিসাব এবং তৃণমূলের প্রত্যাশা–অসন্তোষ। পুরো ময়মনসিংহ এখন নির্বাচনি ব্যানার, পোস্টার, উঠোন বৈঠক ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব রাজনৈতিক প্রচারে মুখর।
বিএনপি–জামায়াতের কৌশলগত প্রস্তুতি
বিএনপি ময়মনসিংহের ১১ আসনের মধ্যে ৯টিতে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। তাদের কৌশল—“সব আসন পুনরুদ্ধার করে উত্তরাঞ্চলকে শক্ত ঘাঁটিতে পরিণত করা।”
অন্যদিকে জামায়াত এবার নতুন ধরনের সাংগঠনিক সক্রিয়তা দেখাচ্ছে। আটদলীয় জোটের মাধ্যমে নান্দাইলে জোটকে সমর্থন দিয়ে বাকি ১০ আসনে নিজেদের প্রার্থী দাঁড় করিয়েছে।
সংখ্যালঘু ভোট আকর্ষণে প্রচারণা
তরুণ ভোটারদের নানা সেবা ও ক্যাম্পেইন
সেবা রাজনীতি—চিকিৎসা ক্যাম্প, রাস্তাঘাট সংস্কার
সামাজিক অনুষ্ঠান ও ধর্মীয় সমাবেশে অংশগ্রহণ
অনলাইন প্রচারণায় ব্যাপক জোর
অভ্যন্তরীণ কোন্দল ঠেকাতে তৃণমূলকে চাঙা রাখা
এ আসনে বিএনপিতে আনুষ্ঠানিক প্রার্থী এমরান সালেহ প্রিন্স হলেও সালমান রুবেলের প্রচারণা প্রিন্সের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রচারে এগিয়ে থাকা রুবেল ব্যক্তিগত উদ্যোগে বহু উন্নয়নমূলক কাজ করছেন।
জামায়াত এখানে মুক্তাকে সামনে রেখে ভোটযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত।
এ আসনে তিনজন বিএনপি নেতা মনোনয়ন প্রত্যাশী হওয়ায় তৃণমূলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা তীব্র।
জামায়াতের মাহবুব আলম মণ্ডল সুশৃঙ্খলভাবে দলীয় কৌশল অনুসরণ করছেন।
বিএনপির ইকবাল হোসাইন দলীয় প্রধান প্রার্থী হলেও বিদ্রোহী নূরুল হক ও হিরন প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
জামায়াত সংগঠনের শক্তির ওপর ভর করে এ আসনে মোকাবিলায় প্রস্তুত।
জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আসনে বিএনপি সবচেয়ে বেশি সময় নিচ্ছে প্রার্থী চূড়ান্ত করতে। ছয়জন শক্তিশালী রাজনীতিক মনোনয়ন চাইছেন।
এদিকে জামায়াত আগেই প্রার্থী ঘোষণা করে সভা–সমাবেশ চালিয়ে যাচ্ছে।
বিএনপির জাকির হোসেন বাবলু এবং জামায়াতের মতিউর রহমান আকন্দ এখানে মুখোমুখি।
জাতীয় পার্টি ও খেলাফতও হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এ আসনে বিএনপির ভেতরে প্রচণ্ড প্রতিযোগিতা। অন্তত চারজন সম্ভাব্য বিদ্রোহী প্রার্থী এলাকায় প্রচারণা করছেন।
জামায়াত ও গণঅধিকার পরিষদও শক্ত অবস্থানে রয়েছে।
জাতীয় কবির স্মৃতিবিজড়িত এ আসনে বিএনপির ডা. লিটন প্রচারণায় এগিয়ে থাকলেও বিদ্রোহের আশঙ্কা রয়েছে।
জামায়াত, গণঅধিকার ও খেলাফত এখানে বহুমাত্রিক লড়াই তৈরি করবে।
বিএনপির মাজেদ বাবু ও সাবেক এমপি শাহীন সমান্তরাল প্রচারণা চালাচ্ছেন।
জামায়াতসহ অন্যান্য দল এ আসনে সবটুকু শক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়েছে।
বিএনপির সবচেয়ে বড় কোন্দল হচ্ছে এ আসনে। চার গ্রুপে বিভক্ত বিএনপি মনোনয়ন পাওয়া ইয়াসের খান চৌধুরীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করছে তৃণমূলের একটি অংশ।
জামায়াত ও আটদলীয় জোটও এ সুযোগ কাজে লাগাতে চায়।
আওয়ামী লীগের দুর্গ হলেও বিএনপি এবার একাধিক শক্তিশালী প্রার্থী দাঁড় করানোর প্রস্তুতি নিয়েছে।
জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনও ভিন্ন কৌশলে মাঠে আছে।
উন্নত শিল্পাঞ্চল হওয়ায় এ আসন এখন কৌশলগতভাবে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
বিএনপির ফখরুদ্দিন বাচ্চু বড় জনসমাগম করে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
জামায়াতের ফজলু ও অনেক স্বতন্ত্র ধাঁচের প্রার্থী এখানে অবস্থান তৈরি করছেন।
ময়মনসিংহের রাজনীতির সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য—
বিএনপি ও জামায়াতের নেতৃত্বে বিরোধী শক্তির মিল–অমিল
বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়া বা না হওয়াই অনেক আসনের বিজয়–পরাজয় নির্ধারণ করবে
তরুণ ভোটার, নারী ভোটার ও সংখ্যালঘুদের টার্গেট করে নতুন কৌশল
পিআর ভোট পদ্ধতির কারণে ছোট দলগুলোও সক্রিয়
সব মিলিয়ে ময়মনসিংহের রাজনৈতিক মাঠ এখন উত্তপ্ত, উদ্বিগ্ন ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ।