বাংলাদেশ সরকার মিয়ানমারের যুদ্ধবিধ্বস্ত রাখাইন রাজ্যে মানবিক করিডোর তৈরির নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা নিয়ে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) মনে করছে, সরকারের একতরফা সিদ্ধান্ত দেশের সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করতে পারে। তারা দাবি করেছে, দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ছাড়া এমন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত ছিল না।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঠাকুরগাঁওয়ে এক গণসংযোগের সময় বলেছেন, ‘‘এই করিডোরের কারণে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়তে পারে।’’ জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমানও তার ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ‘‘নিরাপত্তার বিষয় জড়িত থাকায় করিডোরের প্রসঙ্গটি জাতির সামনে স্পষ্ট করা দরকার।’’ এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব আলাউদ্দিন মোহাম্মদ বলেছেন, ‘‘এ জাতীয় সিদ্ধান্ত ঐকমত্যের ভিত্তিতে হতে হবে, যাতে জাতীয় নিরাপত্তা বজায় থাকে।’’
রোহিঙ্গাদের জাতিগত নিধনের ফলে প্রায় ১৩ লাখ মানুষ বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গত মাসে বাংলাদেশ সফরে এসে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন এবং রাখাইনে মানবিক সহায়তার জন্য করিডোর স্থাপনের আহ্বান জানান। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই চালানো আরাকান আর্মির কারণে মিয়ানমারের মূল ভূখণ্ড থেকে রাখাইনের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়েছে। জাতিসংঘ রাখাইনে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা করছে এবং সেখানে সহায়তা পাঠানোর জন্য করিডোরের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে।
গত ৮ এপ্রিল জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান এই করিডোরের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সিদ্ধান্ত জানান। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন জানিয়েছেন, ‘‘রাখাইন রাজ্যে মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে শর্তসাপেক্ষে করিডোর দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।’’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘‘এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত, যেটি এককভাবে নেওয়া উচিত নয়। দেশের সার্বভৌমত্ব এবং ভবিষ্যতের শান্তি-স্থিতিশীলতার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা উচিত ছিল।’’
এদিকে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান তার ফেসবুক পেজে লেখেন, ‘‘রাখাইনের সঙ্গে মানবিক করিডোরের বিষয়টি জাতির সামনে পরিষ্কার করা উচিত।’’ এনসিপির সদস্য সচিবও বলেন, ‘‘এ ধরনের সিদ্ধান্ত জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে হওয়া উচিত, যাতে রাজনৈতিক দলগুলো এবং জনমতের প্রতিফলন ঘটে।’’
এদিকে জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের রোববার চীনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে রোহিঙ্গাদের জন্য আরাকানে একটি স্বাধীন দেশ গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, কিন্তু পরবর্তীতে তার অবস্থান পাল্টে বলেছেন, ‘‘বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের সম্মানজনক প্রত্যাবাসন ও নিরাপদ অঞ্চল গড়ে তোলার বিষয়টি বোঝাতে চেয়েছি।’’
এভাবে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মানবিক করিডোর স্থাপনের সিদ্ধান্ত একটি বিতর্কিত ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে, এবং রাজনৈতিক দলগুলো এর বিরুদ্ধে নিজেদের উদ্বেগ প্রকাশ করছে।