প্রাথমিকে বৃত্তি: মেধা যাচাইয়ের নামে মানসিক চাপ

নিজস্ব প্রতিবেদক
ইনিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার ২২শে আগস্ট ২০২৩ ০৯:৩২ অপরাহ্ন
প্রাথমিকে বৃত্তি: মেধা যাচাইয়ের নামে মানসিক চাপ

২০২২ সালে ১৫ দিন আগে নোটিশ দিয়ে প্রাইমারি স্কুলের শীতকালীন ছুটি বাতিল করে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা গ্রহণ করা হলো। ৪ বিষয়ে ১০০ নম্বরের পরীক্ষা একই দিনে নিতে ৫০ টাকা ফি নেয়া হলো। ইতোপূর্বে সমাপনী পরীক্ষায় ৫ দিনে ৫০০ নম্বরের পরীক্ষা নিতেও ৫০ টাকা ফি লাগতো।


পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন থেকে শুরু করে ফলাফল তৈরি পর্যন্ত সকল কাজ যেহেতু উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে হয়, সেহেতু ব্যাপক অনিয়মের কারণে দেখা যায় পরীক্ষা না দিয়েও কেউ বৃত্তি পেয়েছে, আবার অনেক মেধাবী শিশু বৃত্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছে।


এবার ২০২৩ সালেও একই নিয়মে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে শীতকালীন ছুটির সময় এই বৃত্তি পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।


২০২০ সাল থেকে জেএসসি, পিইসি এবং সকল প্রকার বৃত্তি পরীক্ষা বাতিল হয়। ৮ম শ্রেণিতে কোনো বৃত্তি পরীক্ষা না হলেও প্রাথমিকের শিশুদের জন্য বৃত্তি পরীক্ষার মাধ্যমে মেধা যাচাইয়ের নামে এক মানসিক চাপ তৈরি করা হচ্ছে। অথচ ২০২১ সালের নতুন কারিকুলামে বৃত্তি পরীক্ষা অথবা অন্য নামে কোনো পরীক্ষা নেয়ার কথা বলা নেই। বরং বলা আছে শিক্ষার্থীরা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় বসবে এসএসসিতে গিয়ে।


নতুন কারিকুলামে শিশুরা চাপহীনভাবে আনন্দের সাথে শেখার কথা থাকলেও প্রাথমিকের ১০ থেকে ২৫ শতাংশ শিশুদের বাছাই করে বৈষম্যমূলক এই পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। ‍প্রাথমিকের শিশুদের মেধা যাচাইমূলক কোনো পরীক্ষার কথা নতুন কারিকুলামে নেই।


সকল প্রাথমিক শিক্ষক বাধ্যতামূলকভাবে ইতোমধ্যে অনলাইনে নতুন কারিকুলামের উপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করলেও মাঠ পর্যায়ে তারা তার বাস্তবায়ন দেখতে পাচ্ছে না। প্রাথমিক শিক্ষা যেখানে সকল শিশুর জন্য উন্মুক্ত এবং ইতোপূর্বে সমাপনী পরীক্ষার মাধ্যমে শতভাগ শিশু বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিলেও বর্তমানে তা ১৫ বছর আগের গতানুগতিক বৃত্তি পরীক্ষায় রূপ নিয়েছে।


সরকার শতভাগ প্রাথমিক শিক্ষার্থীকে বর্তমানে উপবৃত্তি দেয়ার পর কেনো বৈষম্যমূলক ভাবে আংশিক শিক্ষার্থীকে মেধাবী ঘোষণা দিয়ে বৃত্তি দেয়া হবে তা বোধগম্য নয়। এই পরীক্ষার মাধ্যমে আবারও কোচিং এবং গাইড বই বাণিজ্যকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। কিছু অসাধু কর্মকর্তা শিশুদের জিম্মি করে নিজেদের মুনাফা লাভের খেলায় মত্ত হয়ে উঠেছে।


আগের দিনে বৃত্তি পরীক্ষা চালু ছিলো এজন্য যে, সরকার তখন শতভাগ শিশুকে শিক্ষা সহায়তা দিতে পারতো না, তাই মেধাবী বাছাই করে শিক্ষা সহায়তা দেয়া হতো। বর্তমানে প্রাথমিকে ভর্তির হার যেখানে শতভাগের কাছাকাছি সেখানে ১০ বা ২৫ শতাংশ নয়, বৃত্তি পরীক্ষা নিতে হলে শতভাগ শিক্ষার্থীর নেয়া হোক। বৃত্তি পরীক্ষার নামে ১০ বা ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী বাছাই করে শিশুদের মনে হীনমন্যতা তৈরির চেষ্টা রহিত করা হোক।


সময়ের সাথে সাথে শিক্ষা ব্যবস্থার সব কিছুতে পরিবর্তন এসেছে। অথচ প্রাথমিকে সেই মান্ধাতার আমলের পদ্ধতি পুনঃপ্রবর্তন করা হয়েছে। আমরা সচেতন অভিভাবকরা এই পরীক্ষার তীব্র বিরোধিতা করছি। আমরা চাই সকল শিশু একই রকম মর্যাদা নিয়ে আনন্দে লেখাপড়া করুক।