প্রকাশ: ১৬ মার্চ ২০২৫, ৯:৪৬
বর্তমান সময়ে সবচেয়ে জনপ্রিয়, নিরাপদ, সাশ্রয়ী ও আরামদায়ক যোগাযোগমাধ্যম হলো ট্রেন। প্রতিদিন লাখো মানুষ বিভিন্ন ট্রেনে যাতায়াত করে থাকে। যাত্রীদের জন্য রেল পরিবহন একটি সহজ ও পরিবেশবান্ধব মাধ্যম হলেও, নানা কারণে এটি প্রায়ই ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা এবং সরকারি ছুটির দিন সেই ভোগান্তি বৃদ্ধি পায় বহুগুণে। প্রতিনিয়তই উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ, কিন্তু পিছিয়ে পড়ছে রেল খাত। ফলে ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে ট্রেনযাত্রীদের ভোগান্তি।
ট্রেনযাত্রীদের ভোগান্তি শুরু হয় টিকিট কেনার মধ্য দিয়ে। অনলাইন, অফলাইন কোনো জায়গায় ট্রেনের টিকিট পাওয়া যায় না। ওয়েবসাইট থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছে টিকিট ছাড়ার ৫ থেকে ১০ মিনিটের মধ্যেই। এর মূল কারণ টিকিট কালোবাজারি। টিকিট কালোবাজারি মোকাবিলা করে অনেক চেষ্টার পর খুব কমসংখ্যক যাত্রী টিকিট কিনতে সমর্থ হন। অনলাইনে না পেয়ে অফলাইনে টিকিট কিনতে স্টেশনে গিয়ে দেখা যায় লম্বা লাইন। সেখানেও দেখা যায় টিকিট কালোবাজারির কালো হাত। যে কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। এতে ট্রেনযাত্রীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। ট্রেনযাত্রীদের ভোগান্তির অন্যতম কারণ রেল কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের দুর্নীতি। প্রায় সময়ই দেখা যাচ্ছে, একটি আসনের বিপরীতে তিন থেকে চারটি স্ট্যান্ডিং টিকিট কিনতে বাধ্য করছে। এতে যাত্রীদের একটু আরামদায়ক ভ্রমণের জন্য অতিরিক্ত টাকা ব্যয় হচ্ছে। রেল খাতের দুর্নীতির ফলেই যাত্রীসেবার মান নিম্ন থেকে নিম্নতর হচ্ছে।
যাত্রী চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত পরিমাণে ট্রেনে আসন না থাকায় দেখা যায়, বিপুল পরিমাণ যাত্রী বিনা টিকিটে ট্রেন ভ্রমণ করছেন। বিভিন্ন স্টেশনে নির্দিষ্ট সময় ট্রেনের যাত্রাবিরতি থাকায় টিকিটবিহীন যাত্রীদের চাপের কারণে সবাই ট্রেনে উঠতে পারেন না। আবার বিভিন্ন সময় দেখা যায়, বিনা টিকিটের যাত্রীদের ট্রেন ভ্রমণ রোধ করতে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই ট্রেনের বগিগুলোর দরজা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। ফলে টিকিটধারী যাত্রীরা ট্রেনে উঠতে পারছে না। অতিরিক্ত পরিমাণ টিকিটবিহীন যাত্রীদের চাপে নিজের ক্রয় করা আসনে বসাটাই অসম্ভব হয়ে যায়। এতে টিকিট কেনার পরও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ যাত্রীরা।
ট্রেনে যাতায়াত করার সময় যে জিনিসটা সবচেয়ে বেশি পীড়া দেয় সেটা হচ্ছে হিজড়া বা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের যন্ত্রণা। ট্রেনে উঠে তারা টাকা দাবি করে। যদি টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানানো হয় তখন তারা অশ্লীল গালি, জনসমক্ষে বিশ্রী ব্যাপার ঘটানোর ভয় দেখায়। যেটা ভয়ংকর লজ্জার বিষয়। এ ছাড়া আছে বিভিন্ন ধরনের ভিক্ষুক ও ফেরিওয়ালাদের আনাগোনা, যা রেলযাত্রীদের ভোগান্তি চরম পর্যায়ে নিয়ে যায়।
ট্রেনযাত্রায় নিরাপত্তা একটি বড় উদ্বেগের বিষয়। যাত্রীরা প্রায়ই ট্রেনের ভেতরে বা স্টেশনে অপরাধের শিকার হন, বিশেষ করে রাতের ট্রেনে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে নারী যাত্রীদের জন্য। এ ছাড়া প্রায়ই দেখা যায় চলন্ত ট্রেনে দুষ্কৃতকারীদের পাথর নিক্ষেপের মতো ঘৃণ্য কাজ। এ কারণে গুরুতর আহত হচ্ছেন যাত্রীরা। অনেক সময় মৃত্যুরও ঘটনা ঘটে। ট্রেনযাত্রার নিরাপত্তার অভাবে যাত্রীরা ভোগান্তিরও শিকার হচ্ছেন।
ট্রেন যাতায়াতের আরেক ভোগান্তির নাম শিডিউল বিপর্যয়। অব্যবস্থাপনা ও দুর্ঘটনার জন্য বিভিন্ন সময় ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় ঘটে। এ ছাড়া দেখা যায় ট্রেনচালকরা কোনো কারণ ছাড়াই বিনা টিকিটের যাত্রীদের নিরাপদে ট্রেন থেকে নামিয়ে দিতে নির্দিষ্ট স্টেশন ছাড়া যেখানে সেখানে ট্রেন থামিয়ে দিচ্ছে। এতে ঘটছে শিডিউল বিপর্যয়, বাড়ছে দুর্ভোগ। ফলে প্রারম্ভিক স্টেশন থেকে ট্রেন ছাড়তে বিলম্ব করছে। যে কারণে যাত্রীরা সময়মতো তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছে না। তিন ঘণ্টার যাতায়াত ছয় থেকে সাত ঘণ্টা লেগে যাচ্ছে।
রেল খাতের দুর্নীতি বন্ধ করা গেলে যাত্রীসেবার মান অনেকাংশে বৃদ্ধি করা সম্ভব। ট্রেনযাত্রীদের ভোগান্তি কমিয়ে আনতে রেল খাতের দুর্নীতি বন্ধে সরকারকে নিতে হবে কার্যকরী পদক্ষেপ। ট্রেন যাতায়াত সহজ এবং স্বাচ্ছন্দ্য করতে প্রয়োজন সঠিক ব্যবস্থাপনা ও রেল কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা। বিনা টিকিটের যাত্রীদের রোধ করতে প্রয়োজন কঠোর চেকিং ব্যবস্থা এবং রেলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আইনের যথাযথ প্রয়োগ। টিকিট কালোবাজারি বন্ধ করতে সাধারণ যাত্রীদের সজাগ দৃষ্টি সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। সেইসঙ্গে সরকারের কঠোর নজরদারি ব্যবস্থা। ফেরিওয়ালা, ভিক্ষুক ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের ট্রেনে ওঠা নিষিদ্ধ করতে হবে। একই সঙ্গে সরকারের পাশাপাশি যাত্রীদেরও সচেতন হতে হবে এবং রেলপথে নিরাপত্তা ও সেবার মান উন্নত করার জন্য সহযোগিতা করতে হবে। তবেই দূর হবে রেলযাত্রীদের ভোগান্তি এবং আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠবে ট্রেন ভ্রমণ।
তাহমিদুল হাসান আকন্দ
শিক্ষার্থী, গণিত বিভাগ, সরকারি তিতুমীর কলেজ