ভোলার বোরহানউদ্দিনে একদিকে টানা দুই মাস মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীতে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা অন্যদিকে করোনা ভাইরাসের কারণে বিকল্প কাজ করতে না পারায় ২০ হাজার জেলে পরিবারে দূর্দিন চলছে। ওই পরিবাগুলোর কাছে তিনবেলা খাবার খেয়ে জীবন বাঁচানোটাই এখন দায় হয়ে পড়েছে। গত একমাস ধরে তাদের জীবন হয়ে উঠেছে দূর্বিষহ।
১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত মেঘনা নদীর ৯০ কিলোমিটার ও তেঁতুলিয়া নদীর ১০০ কিলোমিটার অভয়াশ্রমে মাছ ধারা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে মৎস বিভাগ। এছাড়া অক্টোবর মাসে ওই এলাকায় ১৫ দিন মা ইলিশ রক্ষায় জাল ফেলা বন্ধ থাকে।
জেলেরা জানান, অন্য পেশার মানুষ বারো মাস আয় করতে পারেন। কিন্তু বছরে কয়েক দফা মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা থাকে জেলেদের। এখন চলমান দুই মাস নিষেধাজ্ঞার ১ মাস ছয় দিন গেলো।
উপজেলায় ১৭ হাজার ৯ শত ২৪ জন নিবন্ধিত জেলে আছেন। তার মধ্যে ১০ হাজার ৪ শত ৫১ জন জেলে ফেব্রুয়ারিও মার্চ মাসের বরাদ্দের ৮০ কেজি করে চাল চাল পেয়েছেন। তবে মৎস্যজীবি সমিতির নেতারা বলছেন নিবন্ধনের বাইরেও অন্তত: ৫-৬ হাজার জেলে আছেন। আবার নিবন্ধিত জেলেদের মধ্যে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার জেলে সরকারি চাল পাচ্ছেননা।
উপজেলার হাসাননগন ইউনিয়নের মেঘনা নদীর জেলে শফিক মাঝি, রিয়াজ মাঝি, সোহাগ মাঝি, মনসুর মাঝি ও ফরহাদ মাঝি জানান, সরকারি নিষেধের এক মাসের বেশী সময় নদীতে নামতে পাড়তেছিনা। সামনে আরো এক মাস। তারা প্রশ্ন রাখেন, কাজ ছাড়া ঘরবন্দি অবস্থায় ৮০ কেজি চালে কিভাবে সংসার চলে।
পক্ষিয়া ইউনিয়নের শাহে আলম, মিন্টু মাঝি, শাহাবুদ্দিন, পারভেজ ও কবির মাঝি জানান, সুদের উপর ধার-দেনা করে কোন রকমে সময় পার করতেছি। অন্যদিকে দাদনের ঝামেলা। বেঁচে থাকার জন্য এখন লড়াই করছি। সামনে চুলা জ্বলে কিনা সন্দেহ।
বড়মানিকা ইউনিয়নের জেলে মোসলেউদ্দিন, জামাল হোসেন, আলমগীর মাঝি, নুরুল ইসলাম, শামীম মাঝি জানান, একদিকে নদীতে নামতে পারছেননা অন্যদিকে বাইরে কাজ নেই খেয়ে, না-খেয়ে কোন রকমে দিন কাটছে।
গঙ্গাপুর ইউনিয়নের তেঁতুলিয়া নদীর জেলে জসিম খাঁন, আবুল হাসান, আ. মালেক, মাইনউদ্দিন, মো.ফখরুল জানান, তারা তিন বেলা খাবার যোগাতে পারছেননা। এখন আর ধার-দেনা চেয়েও পাচ্ছেননা। ছেলে-মেয়েদের আবদারে চোখে পানি চলে আসে। কিন্তু কিছুই করতে পারছেননা।
উপজেলা ক্ষুদ্র মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গির মেম্বার বলেন, সকল নিবন্ধিত জেলেদের খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি আর্থিক প্রণোদনা দেয়া উচিৎ। একসাথে সারা দেশে অবরোধ না দিলে এর সুফল পাওয়া যাবেনা বলে তিনি দাবি করে বলেন, নিবন্ধিত জেলেদের মধ্যে অনেক অন্য পেশার লোক ঢুকে প্রকৃত জেলেদের খাদ্য সহায়তা থেকে বি ত করেছেন।
পক্ষিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাগর হাওলাদার জানান, ইউনিয়নে নিবন্ধিত জেলে ২ হাজার ৩০ জন কিন্তু চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১ হাজার ৩০০ জনের নামে, হাসাননগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মানিক হাওলাদার জানান, তার ইউনিয়নে নিবন্ধিত জেলে ২ হাজার ৪০৭ জন। চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১ হাজার ৫০০ জনের। তারা জানান, এ রকম বরাদ্দে তারা বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন।
সিনিয়র উপজেলা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা নাজমুস সালেহীন জানান, জেলেদের আরো সুবিধা দিতে প্রস্তাবণা উর্দ্ধতন কতৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাগী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মো. বশির গাজী জানান, জেলেদের নাম হালনাগাদ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া জেলেদের সুবিধা পর্যায়ক্রমে বাড়ছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর বেড়েছে, ভবিষ্যতে আরো বাড়ানোর প্রস্তাবণা প্রক্রিয়াধীণ।
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।