সরকারবিরোধী ও ধর্মীয় উসকানির তৎপরতায় জামায়াত-শিবিরের প্রকাশ্যে লিফলেট বিতরণ

নিজস্ব প্রতিবেদক
মোঃ আতিকুর রহমান আজাদ,উপজেলা প্রতিনিধি কালকিনি (মাদারীপুর)
প্রকাশিত: শনিবার ১৪ই মার্চ ২০২০ ০৫:১৭ অপরাহ্ন
সরকারবিরোধী ও ধর্মীয় উসকানির তৎপরতায় জামায়াত-শিবিরের প্রকাশ্যে লিফলেট বিতরণ

স্বাধীনতাবিরোধী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধের প্রক্রিয়া চলমান আছে। যে কোনো সময় নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিষিদ্ধ করা হতে পারে সংগঠনটিকে। গোটা দেশে যখন সংগঠনটির অস্তিত্ব সংকটের মুখে তখনই মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলায় মাথাচাড়া উঠেছে জামায়াতে ইসলামী ও তাদের সহযোগী সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির। প্রকাশ্য দিবালকে চলছে সরকারী বিরোধী তৎপরতা ও তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম।

গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় কালকিনি উপজেলার খাঁসেরহাট বন্দরে সাপ্তাহিক হাট চলাকালীন সময় কয়েক হাজার লিফলেট বিতরণ করেন জামায়াতে ইসলামী ও তাদের সহযোগী সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা । উপজেলা জামায়াতের আমীর সরদার মোঃখলিলুর রহমান ও ছাত্রশিবির নেতা রাশেদুল ইসলাম টিটুর নেতৃত্বে বর্তমান সরকারবিরোধী এই প্রচারণা চালানো হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরেজমিন গিয়ে জানা গেছে, খাসেরহাট বন্দরের বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও সাধারণ জনগণ এই তথ্য দিয়েছেন। 

‘গণসংযোগ পক্ষ-২০২০ উপলক্ষ্যে দেশবাসীর প্রতি আহবানথ শিরোনামে বিতরণ করা হয় খোলাচিঠি। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় আমীর ডা: মো: শফিকুর রহমানের দেওয়া বার্তাই মূলত ছড়ানো হচ্ছে এ লিপটেট। যেখানে সরকারবিরোধী বিভিন্ন অভিযোগ করা হয়। ধর্মীয় অনুভূতিকে পুঁজি করে সাধারণ জনগণকে অনুপ্রাণিত করার চেষ্টায় চালানো হয় চিঠিতে। এতে করে অরাজকতা পরিস্থিতি তৈরির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

স্বাধীনতাবিরোধী সংগঠনটির এই কার্যক্রমে আতঙ্কিত স্থানীয় সাধারণ জনগণ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় বেশ কয়েকজন ব্যাবসায়ী ও সাধারন জনগন ক্ষোভ প্রকাশ করেন। কিন্তু প্রকাশ্যে প্রতিবাদ জানাতে সাহস পারছেন না তাদের ভয়ে। অনেক সময় প্রশাসনের ভয় দেখিয়ে কালকিনিতে নানা সময়ে বিভিন্ন কার্যক্রম চালানো হচ্ছে বলে  স্থানীয় জনগন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা অভিযোগ করে বলেন,  কোন ক্ষমতা পুঁজি করে এসব কার্যক্রম চালাচ্ছেন জামায়াত-শিবির নেতা-কর্মীরা। প্রশাসন একটু-আধটু ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করলেও তাতে ব্যর্থ হয়েছেন। নেপথ্য কারণ ঘেঁটে  জামায়াত নেতা খলিলুরের পারিবারিক শক্তি কোথায়,কে তাদের সহযোগীতা করেন বর্তমান সরকার বিরধী কর্মকান্ড পরিচালনা করছে। তাদেরকে খুজে বের করে আইনের আওতায় আনার দাবী জানান। এ সময় আরও বলেন,এই পরিবারের তিনজনের নাম সবশেষ প্রকাশিত রাজাকারের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। তালিকায় নাম আসা প্রয়াত তিনজনই খলিলুরের ভাই। ৬৫ বছর বয়সী খলিলুর দীর্ঘ প্রায় দুই দশক ধরে সংগঠনটির উপজেলা আমীর পদে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের পর থেকেই সংগঠনটির নিয়মিত কর্মী হিসেবে স্থানীয়ভাবে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।

গত ৫ মার্চ একজন প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধার ছেলেকে অপহরণ ও ক্রসফায়ারে হত্যার হুমকি দিয়েছেন শিবিরনেতা রাশেদুল ইসলাম টিটু। এ বিষয়ে মাদারীপুর পুলিশ সুপার ও উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শকের (ডিআইজি, ঢাকা রেঞ্জ) লিখিত অভিযোগ জানান আতঙ্কে থাকা মুক্তিযোদ্ধা পরিবার। পরে গত সোমবার অতিরিক্তি ডিআইজি (ঢাকা রেঞ্জ) জিহাদুল কবির মাদারীপুর পুলিশ সুপারকে একজন উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাকে দিয়ে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ প্রদান করেন। অথচ কোন অদৃশ্যের ক্ষমতায় শিবির নেতা টিটুর সাংগঠনিক কার্যক্রম এখনও অব্যাহত রেখেছেন তিনি।

গত কাল বিতরণ করা লিফলেটে সরকারবিরোধী ও ধর্মীয় উসকানির বার্তা ছড়ানো হয়েছে। চিঠিতে লেখা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ আজ নানা সমস্যায় জর্জরিত। বর্তমান ক্ষমতাশীনদের কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থা আমানবিক কায়দায় প্রতিপক্ষকে দমন, হয়রানি মামলা, হামলা, দেশকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, চাাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস, মাদকের ভয়াবহ ছোবল ইত্যাদি কারণে মানুষ আজ দিশেহারা। জনগণ তাদের ভোটাধীকারটুকুও হারিয়েছে। বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা-অপবাদ ইসলাম ও ইসলামী শিক্ষার বিরুদ্ধে নানাবিধ ষড়যন্ত্র চলছে। যার মাধ্যমে প্রকারান্তরে সু-কৌশলে ইসলামের ভিত্তি মূলে আঘাত হানা হচ্ছে। আলেম-ওলামা ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানসহ সংখ্যা লঘু স¤প্রদায় ও নানাভাবে নিগৃহীত হচ্ছে। নৈরাজ্য, নিরাপত্তাহীনতা, হতাশা, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা আজ নিত্য নৈমত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

লিফলেট বিতরণ ও জামায়াত-শিবিরের এসব কার্যক্রম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কালকিনি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার জলিল আকন বলেন, ‘মুজিববর্ষের আয়োজন বাধাগ্রস্ত করার চক্রান্ত এটা। জামায়াত-শিবির পাকিস্তানের তাবেদারি করছে। মুক্তিযুদ্ধবিরোধী এই সংগঠনটি সবসময়ই আওয়ামী লীগ সরকারকে নাজেহাল করার পাঁয়তারা চালিয়েছে। মুবিজবর্ষে দেশবিরোধী এই সংগঠনের নিবন্ধন বাতিলের দাবি জানাচ্ছি। প্রশাসনের কাছে আমাদের চাওয়া, এসব চক্রকে দ্রুত আইনের আওতায় এনে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

লিফলেট বিতরণ প্রসঙ্গে কালকিনি থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) হারুন-অর-রশিদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সংবাদ পাওয়ার সাথে সাথে আমি খাসেরহাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে আইসি আল-আমিনকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছি এবং সে জনসাধারণের কাছ থেকে লিফলেট উদ্ধার করেন। তবে কে বা কারা কারা এসব লিফলেট বিতরণ করেছেন এটা আমরা জানতে পারিনি। তদন্ত সাপেক্ষ আমরা খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব