কালকিনিতে মাদ্রাসা সুপারকে অপসারনের দাবীতে মানববন্ধন!

নিজস্ব প্রতিবেদক
মোঃ আতিকুর রহমান আজাদ,উপজেলা প্রতিনিধি কালকিনি (মাদারীপুর)
প্রকাশিত: বুধবার ২২শে জানুয়ারী ২০২০ ০৫:০৫ অপরাহ্ন
কালকিনিতে মাদ্রাসা সুপারকে অপসারনের দাবীতে মানববন্ধন!

মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার উত্তর কানাইপুর দারুল আমান দাখিল মাদ্রাসার সুপার এইচ,এম বজলুর রহমানকে মাদ্রাসা থেকে অপসারনের দাবীতে আজ বুধবার সকালে মাদ্রাসা চত্বরে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। তার বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল, ছাত্রীর সঙ্গে অনৈতিক কার্যকলাপ, প্রতিষ্ঠানের অর্থ আত্মসাৎসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দূর্নীতির প্রমান পেয়েছে তদন্তকারী কর্মকর্তারা। ওই সুপারের বিরুদ্ধে থানায় ফৌজদারী মামলা দায়ের করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোঃ ওয়াহিদুল ইসলাম।

লিখিত অভিযোগ, সরেজমিন ও মাদ্রাসা সুত্রে জানা গেছে, উপজেলার আলীনগর এলাকার উত্তর কানাইপুর দারুল আমান দাখিল  মাদ্রাসার সুপার পদে গত ২০০০ইং সালে এইচ,এম বজলুর রহমান যোগদান করেন। যোগদানের কিছুদিন পর থেকেই তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দূর্ণীতির অভিযোগ ওঠে। এর মধ্যে ২০১৮ইং সালে ৯ম শ্রেনীর এক ছাত্রীর সঙ্গে জোরপূর্বক অবৈধ কার্যে লিপ্ত হয়। পরে তার বিরুদ্ধে ওই শিক্ষার্থীর বাবা বাদী হয়ে থানায় একটি নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা দায়ের করেন।

সুপার বজলুর রহমান মাদ্রাসার এডক কমিটির অভিভাবক সদস্য মনোনয়নে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আমিনুল ইসলামের স্বাক্ষর জাল করে কমিটির কাগজ জমা দেন। এবংকি সে মাদ্রাসার পুকুর লিজ দিয়ে ৫০হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন। তার বিরুদ্ধে বিভিন অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ পেয়ে জেলা প্রশাসক মোঃ ওয়াহিদুল ইসলাম উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ মাহাবুবুর রহমান, সাবেক জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রমেশ চন্দ্র বিশ্বাস, জেলা (ভারপ্রাপ্ত) শিক্ষা কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র দাস ও সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রমথ রঞ্জন ঘটককে তদন্ত করার নির্দেশ প্রদান করেন।

পরে সাবেক জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রমেশ চন্দ্র বিশ্বাস গত ২৩-০৪-১৮ইং, জেলা শিক্ষা অফিসের সহকারী পরিদর্শক মোঃ ইমন মিয়া গত ২৮-০৭-১৮ইং, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রমথ রঞ্জন গত ১৭-০৫-১৮ইং ও , জেলা (ভারপ্রাপ্ত) শিক্ষা কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র দাস গত ১৫-১০-১৯ই মাদ্রাসাটি পরিদর্শন করেন। তদন্তকারী কর্মকর্তারা আলাদাভাবে মাদ্রাসায় গিয়ে তদন্ত করলে ও  সুপার বজলুর রহমানকে কখনও তদন্তকারী কর্মকর্তারা মাদ্রাসায় উপস্থিত পান নাই। এবং হাজিরা খাতা অনুয়ায়ি গত ০১-০১-১৬ইং থেকে ১৫-১০-১৯ইং পর্যন্ত প্রায় ৪৮মাস মাদ্রাসায় অনুপস্থিত রয়েছে। এ ঘটনার পরে সুপার বজলুর রহমানকে কারন দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। সুপার এই কারন দর্শানোর কোন জবাব দাখিল করেন নাই। তদন্ত করে তদন্তকারী কর্মকর্তারা জেলা প্রশাসকের কাছে রিপোর্ট পেশ করেন।

পরে জেলা প্রশাসক মোঃ ওয়াহিদুল ইসলাম গত ০৯-০৯-১৯ইং মাদ্রসায় এসে পরিদর্শন করেন। এবং এসময়ও মাদ্রাসার সুপারকে অনুপস্থিত পান। এবং শিক্ষক হাজিরা থাতায় অনুপস্থিত লিখেন। এদিকে সুপার বজলুর রহমান মাদ্রসার এডক কমিটির অভিবাবক সদস্য মনোনয়নে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আমিনুল ইসলামের স্বাক্ষর জাল করে কমিটির প্রস্তাব প্রেরন করেন। পরে জেলা প্রশাসক মোঃ ওয়াহিদুল ইসলাম মাদ্রাসা সুপার মোঃ বজলুর রহমানের বিরুদ্ধে থানায় একটি ফৌজদারী মামলা দায়ের করার জন্য দায়িত্ব দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আমিনুল ইসলামকে। সুপার বজলুর রহমান মাদ্রাসায় বিভিন্ন অনিয়ম এবং অনুপস্থিত থাকার কারনে মাদ্রাসার শিক্ষার পরিবেশ ও সার্বিক বিঘ্ন ঘটছে।

এবতেদায়ী সমাপনি, জেডিসি ও দাখিল পরিক্ষায় অংশগ্রহনকারী শিক্ষার্থীদের ব্যবক হয়রানির স্বীকার হতে হচ্ছে। তাই দ্রুত সুপার বজলুর রহমানকে মাদ্রাসা থেকে অপসারনের দাবীতে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। এসময় বক্তব্য রাখেন, শিক্ষক মোঃ খলিলুর রহমান, ওবাইদুর রহমান, মাকসুদুর রহমান, সিদ্দিকুর রহমান, শিক্ষার্থী দোলা আক্তার, মনি ও সুবর্নাসহ ১০/১২জন শিক্ষক শিক্ষার্থী।  

শিক্ষক খলিলুর রহমান, সিদ্দিকুর রহমান, মিজানুর রহমানসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মচারি অভিযোগ করে বলেন, সুপার মোঃ বজলুর রহমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল, ছাত্রীর সঙ্গে অনৈতিক কার্যকলাপ, প্রতিষ্ঠানের অর্থ আত্মসাৎসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দূর্নীতির সাথে জরিত রয়েছেন। তাই আমরা জেলা প্রশাসকের কাছে সুপারের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করি। তার কু-তৃতির কারনে আমাদের মাদ্রাসায় এখন কোন শিক্ষার্থী ভর্তি হতে চায় না। আমরা তার বিচার চাই।

নাম প্রকাশে অনিশ্চুক বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, ২০১৮ইং সালে ৯ম শ্রেনীর এক ছাত্রীর সঙ্গে জোরপূর্বক অবৈধ কার্যে লিপ্ত হয়। পরে তার বিরুদ্ধে ওই শিক্ষার্থীর বাবা বাদী হয়ে থানায় একটি নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা দায়ের করেন। আমরা সুপারের অপসারন চাই। অভিযোগকারী সুপার এইচ,এম বজলুর রহমান বলেন, আমি ষরযন্ত্রর শিকার।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আমিনুল ইসলাম বলেন, আমার স্বাক্ষর জাল করেছে সুপার বজলুর রহমান তাই আমাকে তার বিরুদ্ধে মামলা করতে নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসক। এবং সুপারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দূর্ণীতির প্রমান পাওয়ায় তার বিরুদ্ধে বিভাগী ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সুপারিশ করেছেন জেলা প্রশাসক মোঃ ওয়াহিদুল ইসলাম।

ইনিউজ ৭১/এম.আর