আলোচনায় যুবলীগের বয়সসীমা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: বৃহঃস্পতিবার ১৭ই অক্টোবর ২০১৯ ০৯:৩১ পূর্বাহ্ন
আলোচনায় যুবলীগের বয়সসীমা

যুবলীগের আসন্ন জাতীয় কংগ্রেসে শীর্ষ পদে কারা আসছেন- এ নিয়ে আলোচনার চেয়ে পদপ্রত্যাশীদের আগ্রহ বেশি বয়সসীমা নিয়ে। গঠনতন্ত্রে বয়সের বাধ্যবাধকতা না থাকলেও বুড়োদের কাছ থেকে মুক্ত করে যুবকদের হাতেই নেতৃত্ব দিতে চায় আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। সংগঠনের নেতৃত্ব নির্বাচনে বয়সসীমা নিয়ে ভাবছেন দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা। পদপ্রত্যাশী সাবেক ছাত্রনেতারাও চান নেতৃত্ব বয়সের সীমা রেখার মধ্যেই থাকা উচিত।

সূত্রমতে, ১৯৭২ সালের ১১ নভেম্বর যুবলীগ প্রতিষ্ঠার পর ছয়টি জাতীয় কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৯৭৪ সালে প্রথম জাতীয় কংগ্রেসে মাত্র ৩৩ বছর বয়সে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন শেখ ফজলুল হক মণি। ওই সময় যুবলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ৪০ বছরের একটি বয়সসীমার বিধান ছিল। ১৯৭৮ সালে অনুষ্ঠিত সংগঠনটির দ্বিতীয় জাতীয় কংগ্রেসে ওই বিধানটি বাতিল করা হয়। ৩৮ বছর বয়সে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন আমির হোসেন আমু। ১৯৮৬ সালে তৃতীয় কংগ্রেসে ৩৭ বছর বয়সে মোস্তফা মহসীন মন্টু, ১৯৯৬ সালে চতুর্থ কংগ্রেসে ৪৭ বছর বয়সে শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ২০০৩ সালে ৪৯ বছর বয়সে জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং ২০১২ সালের সর্বশেষ সম্মেলনে ৬৪ বছর বয়সে মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। অর্থাৎ পর্যায়ক্রমে বুড়োরাই যুবলীগের নেতৃত্বে এসেছেন।

যুবলীগের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ইতিপূর্বে প্রতিটি কংগ্রেসেই যুবলীগের ভিতর থেকেই সংগঠনের চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। তবে এবার ব্যতিক্রম হতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে। কারণ হিসেবে সংগঠনের নেতারা বলছেন, যুবলীগের চেয়ারম্যান, সাধারণ সম্পাদক ও প্রেসিডিয়াম সদস্যদের বেশির ভাগই ষাটোর্ধ্ব। যুবলীগের মোট প্রেসিডিয়ামের পদ ২৭। পদাধিকারবলে চেয়ারম্যান এবং সাধারণ সম্পাদক প্রেসিডিয়াম সদস্য হওয়ায় মোট ২৯ জন। এর মধ্যে একজন মারা গেছেন। ২৮ জন প্রেসিডিয়াম সদস্যদের মধ্যে মাত্র পাঁচজনের বয়স ৬০ বছরের নিচে। বাকি ২৩ জনের বয়সই ষাটের বেশি। পাঁচজন যুগ্ম সম্পাদকের প্রত্যেকের বয়সই ৫৫ বছরের অধিক। নয় সাংগঠনিক সম্পাদকের মধ্যে শুধু একজনের বয়স ৫০-এর কম। বাকি আটজনের বয়সই পঞ্চাশোর্ধ্ব। সম্পাদকম লীর ৬০ জনের মধ্যে ৪৫ জনই পঞ্চাশোর্ধ্ব। সহসম্পাদক ২০ জনের মধ্যে ১৫ জনেরই বয়স ৫০-এর বেশি। সদস্য ২৬ জনের মধ্যে ১৫ জন ৫০ পার করেছেন। সূত্রমতে, দীর্ঘদিন যুবলীগসহ আরও চার সহযোগী সংগঠনের সম্মেলন না হওয়ায় ইমেজ সম্পন্ন অনেক সাবেক ছাত্রনেতাকে কাজে লাগানো সম্ভব হয়নি। এসব সাবেক ছাত্রনেতাদের রয়েছে সারা দেশে ব্যাপক পরিচিতি।

দেশব্যাপী পরিচিত, ক্লিন ইমেজ ও দক্ষ সংগঠকগুলোকে এবার কাজে লাগাতে চান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যুবলীগ ছাড়াও অন্য তিন সহযোগী সংগঠনে কাকে কোথায় কাজে লাগাবেন সে তালিকা তিনি ইতিমধ্যে তৈরি করেছেন। তাদের ব্যাপারে আরও বেশি খোঁজখবর নিচ্ছেন তিনি। গণভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছেন, এবার চার সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্ব বেছে নিতে দলের অন্য কোনো নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী নিজেই খোঁজখবর নিচ্ছেন। ছাত্রলীগের বিগত (শোভন-রাব্বানী) কমিটিতে নেতা নির্বাচনে কয়েকজন নেতাকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতার বাছাই করা ‘সেরাদের’ নেতৃত্ব দেওয়া হলেও আস্থা ধরে রাখতে পারেননি তারা। সে কারণে এবার অনেক যাচাই-বাছাই করেই নেতৃত্ব দিতে চান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।

সাবেক ছাত্রনেতা ও যুবলীগের বর্তমান কমিটিতে যারা রয়েছেন, আগামীতে যুবলীগের শীর্ষ পদে আসতে চান এমন প্রায় ২০ জন নেতার সঙ্গে কথা হয় একটি জাতীয় দৈনিকের । তারা জানিয়েছেন, আসন্ন যুবলীগের কংগ্রেসে বয়সসীমা নির্ধারণ করা হোক। বুড়ো লীগ থেকে বের হয়ে তারুণ্য নির্ভর যুব সংগঠন করতে হবে। তাহলে অনেক সাবেক ছাত্রনেতা রয়েছেন, যারা পদ-পদবিতে আসার সুযোগ পাবেন। বয়সসীমা নিয়ে এখনো কোনো নির্দেশনা পাননি জানিয়ে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ জাতীয় দৈনিককে বলেন, বয়সসীমা নির্ধারণ করা নিয়ে এখনো কোনো নির্দেশনা পাইনি। তবে দাবি উঠলে বা নির্দেশনা পেলে গঠনতন্ত্র উপকমিটি আছে, তারা ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক জাতীয় দৈনিককে বলেন, যুবলীগের কংগ্রেসে বয়স নিয়ে নতুন করে ভাবছেন দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি যে নির্দেশনা দেবেন, সে অনুযায়ী আগামীর নেতৃত্ব আসবে। তিনি আরও বলেন, যুবলীগের ইমেজ ফেরাতে পরিচ্ছন্ন ও দক্ষ সংগঠককেই বসানো হবে।

ইনিউজ৭১/জিয়া