
প্রকাশ: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ২২:১৯

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার শাহজাদাপুর ইউনিয়ন পরিষদের দুস্থ ভিজিডি কার্ডধারীদের রিলিফের চাল রাতের আঁধারে পাচারের সময়ে পুলিশ আটক করেছে। বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) রাতে উপজেলার শাহজাদাপুর ইউপি কার্যালয় এলাকায় দেওড়া গ্রাম থেকে পুলিশ ‘শেখ হাসিনার বাংলাদেশ ক্ষুধা হবে নিরুদ্দেশ’ এ স্লোগান যুক্ত রিলিফের চাল ভর্তি ১১৯ বস্তা আটক করে থানায় নিয়ে আসে। এ চাল পাচারের দায়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে পাঁচ শ্রমিককে গ্রেফতার করে।
তারা হলেন- দেওড়া গ্রামের জয়নাল মিয়ার ছেলে শাকিল (২০), আলকাছ মিয়ার ছেলে রাজন (২০), গোলাম সফর আলীর ছেলে সাইফুর রহমান (৩০), আবদুল মালেক মিয়ার ছেলে মাসুদ মিয়া (৪৫) ও আবদুল রসুল মিয়ার ছেলে মো. তৌহিদ মিয়া (৫০)।
এদিকে এ ঘটনার পর শাহজাদাপুর ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম খোকন বুধবার রাতে গা-ঢাকা দিলেও আজ বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকালে উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে বীরদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে তিনি উপজেলার কয়েকজন প্রভাবশালী ইউপি চেয়ারম্যানকে নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সরাইল থানার ওসির সঙ্গে কথাও বলেছেন।
সরাইল থানার উপ-পরিদর্শক (এস.আই) মো. মনজুর আহমেদ বলেন, বুধবার রাত পৌনে আট’টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাতব্যাপী অভিযান চালিয়ে এসব সরকারি রিলিফ এর চাল সহ পাঁচজনকে আটক করা হয়। আটকৃত সকলেই শ্রমিক। তারা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে এসব চালের বস্তা বুধবার বিকেলে সরাসরি শাহজাদাপুর ইউপি কার্যালয় থেকে বের করে দেওড়া গ্রামের শাহজাহান মিয়ার বাড়িতে নিয়ে প্রথমে মজুত করে। পরে সন্ধ্যার পর এসব চাল সরকারি সিলযুক্ত বস্তা থেকে বের করে সাদা প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে। ঘটনাস্থল থেকে দেড়শতাধিক খালি বস্তাও উদ্ধার করা হয় বলে পুলিশের এই এসআই জানান।
এদিকে এই সরকারি চাল পাচার ও উদ্ধার নিয়ে বুধবার রাতে সরাইল থানার ওসি সাহাদাত হোসেন টিটো ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ এস এম মোসা নিয়মনীতির আলোকে কঠোর অবস্থানে থাকার কথা সাংবাদিকদের জানালেও বৃহস্পতিবার সকালের পর থেকে তাঁরা এই বিষয়ে ভিন্ন বক্তব্য দিচ্ছেন। পুলিশের ওসি জানিয়েছেন এ ঘটনায় আটক শ্রমিকদের আসামি করে মামলা নেওয়ার প্রস্ততি চলছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানিয়েছেন এ ঘটনায় ইউপি চেয়ারম্যান, সচিব ও ট্যাগ অফিসারকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে। এ অবস্থায় রিলিফের চাল কেলেঙ্কারির অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যানকে রক্ষা করতে ইউএনও ও ওসি ফাঁকফোকর বের করেছেন। তবে এ বিষয়ে প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকার জন্যে প্রশাসন কর্মকর্তাদের নিয়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে নানা মহলে।
এ ব্যাপারে সরাইল খাদ্য গুদাম ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোছা. হাফছা হাই বৃহস্পতিবার এ প্রতিবেদককে বলেন, রিলিফের এই চাল ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম খোকন নিজে স্বাক্ষর দিয়ে গুদাম থেকে গ্রহন করেছেন। এর সম্পূর্ণ দায়ভার ওই চেয়ারম্যানের। শাহজাদাপুর ইউপির রিলিফ বিতরণে তদারকি অফিসার (ট্যাগ অফিসার) উপজেলা দারিদ্র বিমোচন কর্মকর্তা কাজী আবদুল মমিন এ প্রতিবেদককে জানান, নিয়ম অনুযায়ী আমার উপস্থিতিতে কার্ডধারী দুস্থদের মাঝে রিলিফের চাল বিতরণের কথা। কিন্ত এই রিলিফের চাল কখন কিভাবে বিতরণ করা হয়েছে, এসবের আমি কিছুই জানিনা। ইউপি চেয়ারম্যান ও সচিব রিলিফের চাল বিতরণের কথা আমাকে কিছুই জানাননি।
