বরগুনায় রাস্তায় ফেলে প্রকাশ্যে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যার চাঞ্চল্যকর ঘটনার প্রধান সাক্ষী ও তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে হুকুমের আসামি করে শিগগিরই মামলার অভিযোগপত্র প্রস্তুত করছে পুলিশ। মামলার তদন্ত কার্যক্রমের তদারকিতে জড়িত একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে রিফাত শরীফ হত্যাকা- ও মামলার অগ্রগতি নিয়ে আলোচনায় এ ধরনের আভাসই পাওয়া গেছে। মিন্নিকে হুকুমের আসামি করার বিষয়ে কর্মকর্তারা বলেন, এই হত্যাকান্ডে মিন্নির জড়িত থাকার যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ তারা সংগ্রহ করেছেন। রিফাত শরীফ হত্যার পর মিন্নি আসামিদের নিরাপদে সরে যেতে বলার কথোপকথনের রেকর্ড তদন্তকারী কর্মকর্তা পেয়েছেন বলে পুলিশ দাবি করছে।
মিন্নির পরিবার পুলিশের এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, মিন্নির নামে কোনও রেজিস্ট্রেশনকৃত সিম নেই। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পুলিশ যে মোবাইল সিমের কথা বলছে, ওই নম্বর নয়ন বন্ডের মায়ের এবং কথোপকথন নয়ন বন্ড ও তার মায়ের মধ্যকার। পুলিশের দাবি, নয়নকে রিফাত শরীফের ওপর হামলা করার জন্য মিন্নি উদ্বুদ্ধ করায় এই হত্যাকান্ড ঘটেছে। মিন্নির বাবা সংবাদ সম্মেলনে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের স্ত্রী সামসুন্নাহার খুকির বিরুদ্ধে রিফাত ফরাজী ও রিশান ফরাজীকে রিফাত শরীফের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করার অভিযোগ আনলেও পুলিশ বিষয়টিতে গুরুত্ব দিচ্ছে না।
মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোরের বিরুদ্ধে প্রতারণার মাধ্যমে মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার অভিযোগে মামলা করার জন্য রিফাত শরীফের বাবা প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে মিন্নির পরিবার পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, দুলাল শরীফ তার মাদকাসক্ত ছেলেকে সংশোধন করার জন্য আমাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে দিতে বাধ্য করেছে। দুলাল শরীফ বিয়ের আগে মোবাইলে মিন্নির সঙ্গে একাধিকবার কথা বলে অনুনয়-বিনয় করেছেন তার ছেলেকে বিয়ে করার জন্য।
রিফাত শরীফ হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ওসি (তদন্ত) মো. হুমায়ুন কবির বলেন, আমরা তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করতে ব্যস্ত সময় পার করছি। কবে নাগাদ প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়া হবে তা বলা যাচ্ছে না। তবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, ২৬ জুন রিফাতকে বরগুনার রাস্তায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সেই সময় স্বামীকে বাঁচাতে মিন্নির চেষ্টার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সারাদেশে আলোচনার সৃষ্টি হয়। পরদিন রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ ১২ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। তাতে প্রধান সাক্ষী করা হয়েছিল মিন্নিকে। পরে মিন্নির শ্বশুর তার ছেলের হত্যাকান্ডে পুত্রবধূর জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করলে আলোচনা নতুন দিকে মোড় নেয়।
১৬ জুলাই মিন্নিকে বরগুনার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে দিনভর জিজ্ঞাসাবাদের পর এ মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। পর দিন আদালতে হাজির করা হলে বিচারক মিন্নিকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন। রিমান্ডের তৃতীয় দিন শেষে মিন্নিকে আদালতে হাজির করা হলে সেখানে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন বলে জানায় পুলিশ। বরগুনার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালত এবং জেলা ও দায়েরা জজ আদালতে মিন্নির জামিন আবেদন নাকচ হয়ে যাওয়ার পর হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন মিন্নি।
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।