এস.এম. হাফিজুর রহমান: বাবা আজ সেই দিন, যে দিন তুমি মহা অভিমানে চলে গেলে অচেনা এক অন্যলোকে। মনের কল্পনারা আজও তোমাকে ভুলতে দেয়না, আবার তোমার অস্তিত্বরা আমাকে তাড়া করে প্রতিক্ষণে। তোমার নিদারুণ শুন্যতা আমার হৃদয় বিষাদমলিন করে বুকের পাজর ভেঙ্গে তছনছ করে। তোমার বিয়োগ যাতনা ও হৃদয়ের আকুলতা কাউকে প্রকাশ করতে পারিনা বাবা। নীরবে-আড়ালে ও গভীর রজনীতে চোখের জলটুকুই যেন সঙ্গী হয়ে আছে আজও। তোমাকে ভাবতেই চোখের জ্বলের দেখা মেলে বার বার, যেন তোমার সাথে তাদের সখ্যতা আছে, তাই চোখের জ্বলকেই এখন সঙ্গী ভাবি। বাবা আজ তুমিহীন কষ্টের প্রহরগুলো বুকের ভিতর জমাট কান্নার ঢেউ তুলে যায় বার বার! তোমার নির্মোহ আদরের সেই নিখুঁত সুরের দেখা আজও আর মেলেনি কোথাও। বাবা কষ্টের ঢেউ গুলি রোজ হৃদয়ের মাঝে ধাক্কা দিচ্ছে আর বারং বারং বলছে তোমার মাঝে আমার সমস্ত সুখ লুকিয়ে ছিল। বাবা তুমি যে এক বিশাল বটবৃক্ষ ও মাথার উপর মজবুত ছাদ তা আজ তিলে তিলে বাস্তবতা আমাকে প্রতি মূহুত্বে শেখাচ্ছে। পৃথিবীর সকল যন্ত্রণার কষ্টময় তীরের আঘাত নিজের গায়ে মেখে আর প্রচন্ড রৌদ্দুরের খরতাপে পুড়ে নিজের শান্তিকে বিসর্জন দিয়ে তোমার বুকের ছায়ায় আগলে রেখেছিলে জীবনের প্রতিটি মূহুর্তে।
বড় অসময় চলে গেলে বাবা। আমাদের জীবন নাটকের যে দৃশ্যগুলো তোমাকে প্রচন্ড বিমোহিত ও আপ্লুত করে তুলতো সেই দৃশ্যগুলো তোমাকে দেখাতে ব্যার্থ হলাম বাবা। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ করার সুযোগ তোমার হয়নি বাবা, কিন্তু জীবন নামক পাঠশালায় তুমি এক মহাজ্ঞানী আমার কাছে। তোমার হাত ধরেই শিখেছি সত্য-মিথ্যা ও সুন্দর-অসুন্দরের পার্থক্য। তুমি বলতে আমি যে হাড়ভাঙ্গা কর্মের সাথে আছি জীবনে তোমাদের এ পথের পথিক আমি হতে দেবনা। বাবা তোমার সেই চাওয়া পূর্ণ হয়েছে কিন্তু এক অজানা নির্মম প্রলেপ সবকিছু ঢেকে দিয়েছে।
তোমার পবিত্র হাতের উপর শেষ নি:শ্বাসটুকু গ্রহণ করার পরম সৌভাগ্য হয়েছিলো মায়ের। মা’কে হারিয়ে তুমি নির্বাক হয়েছিলে, স্ত্রীর শুন্যতা তোমাকে শিশুদের মত অসহায় করে তুলেছিলো। তাইতো মায়ের চলে যাওয়ার আট মাস পরে তুমিও চলে গেলে মায়ের দেখানো পথ ধরে অজানা এক ঠিকানায়। মা হয়ত বা একাকীত্ব মানতে পারেনি, তাই বড় অবেলায় তোমাকেও আমাদের কাছ থেকে ডেকে নিল। তোমার নীরেট ভালোবাসার স্মৃতি গুলো ঘিরে রেখেছে আজ আমাকে। দিন দিন তোমার স্মৃতির ডায়েরীগুলি ভারী হয়ে যাচ্ছে, বহণ করতে আমি যে আজ বড় ক্লান্ত বাবা, তবুও তোমার সব স্মৃতি বুকের মাঝে আঁকড়ে ধরে থাকতে চাই।
বাবা তোমার কি মনে পড়ে ? সময়টা ২০০৯ সাল, ঢাকাতে আমার বাসায় বেড়াতে এসেছিলে তুমি। এক কাক ডাকা সকালে হঠাৎ দরজার ফাঁক দিয়ে তোমার আদরের বৌমার দৃষ্টি পড়তেই সে অবাক বিস্ময়ে দেখতে পেলো একজন সত্যিকারের পিতার সন্তানের জন্য কতটা ভালোবাসা। সেই ছোট বেলায় তুলতুলে মুখে ভালোবাসার পরশ মাখিয়ে দিয়েছো যেভাবে বার বার। হয়ত আমি বাবা হওয়ার পরেও তুমি তা ভুলতে পারোনি। আমাকে সেভাবে আদর করার প্রচন্ড ব্যাকুলতা ছিলো তোমার মনে। তাই খুব সকালে আমি যখন আমার কলিজার টুকরো সন্তানকে নিয়ে বিছানায় ঘুমিয়ে ছিলাম ঠিক তখনি তুমি সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে আমার গায়ে হাত বুলিয়ে বুলিয়ে আদর করেছো অনবরত। পৃথিবীতে বোধ হয় এটিই সেরা দৃশ্য যা তোমার আদরের বৌমা (যাকে তুমি মা বলে ডাকতে) নিজ চোখে মনের ক্যামেরায় ধারণ করে রেখেছে। মাঝে মাঝে তোমার এ নি:স্বার্থ ভালোবাসার উদাহরণ আমার সন্তানের সামনে তুলে ধরে, যেন সে তোমার রেখে যাওয়া এ সুন্দরকে ধারণ করতে পারে তার বুকে। বাবা সে দিনের তোমার আদর আমি বুঝতে পারেনি, ঘুমের নিমগ্নতা আমাকে এতটাই ছুয়ে ছিলো যে আমাকে বুঝতে দেয়নি, আর সেই সুযোগে তুমি তোমার আদরের ছোয়া আমার গায়ে লাগিয়ে দিয়েছো। তোমার আদর আমি তিলে তিলে অনুভব করি বাবা।
কোন কিছুতে অভিমান করে গো-ধরে বসে থাকতাম, খাবারের ওয়াক্ত যখন পেরিয়ে যেতো তখন তুমি বুঝতে তোমার আদরের সন্তানকে কিভাবে ভাতের প্লেটের কাছে বসাতে হয়। তুমি বলতে “আব্বা রাগ করতে নেই ভাত খেয়ে নাও, তুমি কথা না শুনলে তোমার ছোট ভাই-বোনও শুনবে না” তারপরও গো-ধরা থেকে যখন সরে আসতাম না তখন স্বভাব সূলভভাবে তুমি বলতে “ওরে আব্বা ওঠো না কেন, খেয়ে নাও, যাও যাও, পাগল কোথাকার, এমন করে ভালো ছেলেরা” এমন কথার পরে আমি অভিমান ভেঙ্গে খেয়ে নিতাম। কখনো কখনো খাওয়ার সময় তুমি পিঠে হাত বুলিয়ে শিক্ষা মূলক জ্ঞান আমার কর্ণকুহরে পৌছে দিতে। তোমার মতো শিক্ষক আমি আর পাইনি বাবা, তুমি সত্যিকারে আমার কাছে মহাজ্ঞানী ও মহা শিক্ষক। বাবা মনে আছে কি ? কিশোর বয়সেও তোমার কাছে ঘুমানোর সুযোগ গ্রহণ করেছি বার বার। আর একটি বিষয় আজও মন থেকে ভুলতে পারিনি বাবা সেটি হলো তোমার শরীর থেকে একটা ঘ্রাণ আসতো, খুব মিস করি বাবা তোমার সেই গায়ের ঘ্রাণকে।
বাবা তুমি বোধহয় বুঝতে পেরেছিলে তোমার প্রস্থান যাত্রার অঘোম সংবাদটি ? এমনই এক আম কাঠালের সময় তোমাকে কথা দিয়েছিলাম বুধবারে আসবো বলে, কিন্তু নিয়তির কি পরিহাস বাবা, হাজার মানুষের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তোমার কাছে ওয়াদা দেয়া বুধবারে আমি যেতে পারিনী, আবার সময় নিয়েছিলাম রবিবারে আসবো বাবা। শুনেছি তুমি আমার জন্য নাকি সেরা পাকা আম রেখেছিলে আমি বাড়ীতে আসলে তুমি আমাকে খাওয়াবে, বুধবারে যেতে পারিনি তাই আমগুলো তুমি কারো খেতে দেওনি। শেষ মেষ বলেছিলে আমার বড় ছেলে না খেতে পারলে এ আম কারো খেতে দেব না। সময় মতো যেতে পারেনি বলে আমগুলো নষ্ট হওয়ায় বাবা তুমি নিজ হাতে তা বাগানে ফেলে দিয়েছো কষ্ট ভরা মনে।
তোমার মন তোমাকে বুঝিয়েছে তোমার ছেলে রবিবারেও আসবে না তাই প্রচন্ড অসুস্থ শরীরে জীবনের শেষ দৃশ্যে তুমি ভালোবাসার অনন্য উদাহারণ সৃষ্টি করতে নিজে চলে এলে আমার ঢাকার বাসায়। ভেবেছো ছোট বেলার সেই অভিমান আজও বুঝি আমি করি তাই অভিমান ভাঙ্গাতে চলে এলে বিস্মকরভাবে। নবীনগরে দূর থেকে তোমাকে দেখে হঠাৎ চোখের বারীর বাঁধ আমি সামলাতে ব্যর্থ হয়েছিলাম। তোমার শরীরের অবস্থা আমার মনকে বিধ্বস্ত করে তোলে। কাছে গিয়ে সালাম দিতেই তুুমি তোমার অসুস্থ্যতা লুকানোর প্রাণপণ চেষ্টা করছিলে তা আমার বুঝতে বাকী ছিলো না। সেটা ছিলো তোমার অভিনয় আমাকে খুশি রাখতে, আমি যেন প্রেশানীতে না পড়ি। এই তো তুুমি আমার সেই কষ্ট লুকানো বাবা, তোমাদের মতো বাবাদের স্বভাব এমনটিই। তোমাকে জড়িয়ে ধরে সিএনজিতে যখন উঠালাম অন্য রকম এক ভালো লাগা কাজ করছিলো। ঠিক ছোট বেলায় তুমি যেমন আমাকে আদর করে জড়িয়ে ধরে কোথাও নিয়ে যেতে সিএনজির ভিতর আমি তোমাকে তেমনটি জড়িয়ে ধরে রেখেছিলাম, তোমার মনে পড়ে বাবা তুমি বলেছিলে “তোমার দুটো হাত আমার বুকের মাঝখানে রাখো” তোমার বুকে আমি হাত রেখেছিলাম, আমার হাতের উপর তুমিও হাত রেখেছিলে। সেকি প্রশান্তির এক মহা অনুভূতি।
আমার বাসায় তোমার প্রবেশ মানে, জীবনের চূড়ান্ত প্রস্থানের প্রাথমিক সাইরেন বেঁজে, সংকেতধ্বনি জানান দিয়ে যাচ্ছিল। এক রজনী কাটতেই তোমার অবস্থা বেগতিক দেখে রাজধানীর শিকদার মেডিকেলের হার্টের জৈষ্ঠ চিকিৎসক প্রিয় শাহিন ভাইয়ের কাছে তোমাকে নিয়ে যায়। রিকসায় আসা ও যাওয়ার মাঝে বুকের মধ্যে জমে থাকা অনেক কথা বলে গেলে বাবা। এতো কাছে থেকেও বুঝতে পারিনি তোমার হাতে একদম সময় কম। বাসার বিশ্রামকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আমাকে আরোও কিছু বলবে বলে চলে এলে আমার অফিসে। আমার চেয়ারে তোমাকে বসালাম, তুমি তৃপ্তিবোধ অনুভব করেছিলে আমি কিন্তু ঠিকই বুঝেছিলাম। চেয়ারে বসে বার বার তোমার মুখে আমার উদ্দেশ্যে একটি অনুরোধ জানাচ্ছিলে- “তুমি কালই বাড়ীতে চলো, আমি আজ বাদে কাল থাকবো না, জমি জমা যা আছে বুঝে নাও”। সন্তানের প্রতি তোমার দায়িত্ববোধ দেখে সত্যিই আমি বিস্মিত হয়েছিলাম। বাবা তুমি স্বাক্ষী এই কথা শোনার পরে আমি বলেছিলাম আমার কোন জমি-জমার দরকার নেই, মৃত্যুর পরে কবর দেওয়ার মতো এক খন্ড জমিন হলে চলবে। তুমি বলেছিলে “কার মৃত্যু কোথায় হয় সেকি জানে ? তোমার মৃত্যু কোথায় হবে তুমি কি জানো ?” আমার প্রিয় সন্তান ফারাবীকে মাঝে মাঝে শান্তনা দিতে অভিনয় করতে হয়। ঠিক তেমনি তোমাকেও শান্তনা দিতে বলেছিলাম আচ্ছা তুমি যা বলো তাই। আসলে ওটা আমার মনের কথা ছিলো না। আমার কথা শুনে তুমি শিশুদের মতো শান্ত হয়ে গেলে।
তিনটি রাত্রির সাথে তোমার শেষ দেখা হয়েছিলো আমার বাসায়। তোমার যেন কোন কষ্ট না হয় সে জন্য বাসার সবাইকে অন্য রুমে দিয়ে তোমাকে নিয়ে আমি ঘুমাতাম এক খাটে। তুমি সারা রাত্রি ঘুমাতে পারতে না, তোমার সমস্ত শরীর বিশেষ করে পায়ে আমি টিপে দিতাম যেন তুমি আরামে ঘুমাতে পারো। কিন্তু তুমি ঘুমাতে পারতে না বরং আমাকেই বলতে তুমি ঘুমিয়ে পড়ো, আমার সমস্যা হলে তোমাকে ডাকবো। ঘুমেদের সাথে লড়াই করে অমোঘ অবশতা আর ক্লান্তিতে ঘুম যখন আমাকে কাবু করে ফেলতো তখন ঠিক তোমার পা দুটো জড়িয়ে কোন রকম চোখ বন্ধ করে থাকতাম। তোমার পা দুটো জড়িয়ে ঘুমাতাম এই কারণে তুমি নড়ে চড়ে উঠলেই আমি যেন বুঝতে পারি। তিনটি রাত্রি এমনিভাবে কেটেছে বাবা। এক সকালে আমি যখন অফিসে যাবার প্রস্তুতি গ্রহণ করছি ঠিক তখনি তুমি বলে উঠলে “আমরা তাহলে কয়টার দিকে বাড়ী যাচ্ছি ?” আমি তোমাকে বলেছিলাম আব্বা ইসলামী ব্যাংক, জয়দেবপুর শাখায় আমার একটা বিল পাওনা আছে ওটা আজ দিবে তাই আনতে যাচ্ছি সেখান থেকে এসে তারপর যাবো। তুমি বলেছিলে “ও বুঝেছি তুমি বোধহয় যাবা না তাই এসব কথা বলছো” একটুখানি অভিমান করেছিলে শিশুদের মতো তুমি। তোমার বৌমা আর আমি দুজনে মিলে তোমার সমস্ত গায়ে তেল মাখিয়ে ঠিক যে জায়গায় আমি নিয়মিত রাতে ঘুমায় সেখানে তোমাকে শুয়ে দিয়ে আমি অফিসে আসলাম।
মন কাননে ব্যাথার ঢেউরা বার আমাকে অস্থির করে তুলছিলো কোন কাজে মন স্থির করতে পারছিলাম না। এরই মাঝে বাসা থেকে তোমার বৌমার ফোন আব্বার শরীরটা আগের থেকে খারাপ পারলে বাসায় চলে এসো। মনের ভেতরটা যেন কোন এক বিষাদের বার্তা জানান দিচ্ছিল। বাসায় চলে যাবো বলে হাতে থাকা কিছু অগোছালে কাজ গুছিয়ে আর অফিসে থাকা ভাগ্নে রকিবকে কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার প্ল্যান অংকণ করছিলাম। আবার ফোন বেঁজে উঠলো, বুকের ভিতরে অস্থির ঝড় যেন থামছে না। অপর প্রান্ত থেকে কান্না জড়িত কন্ঠে বলে উঠলো দ্রুত এসো আব্বার অবস্থা একদম ভালো না। বাবা তোমার এমন সংবাদ শুনে আমি ঠিক যে অবস্থায় ছিলাম সেই অবস্থায় বেখেয়ালী মনে রিকসা না পেয়ে দৌড়াতে লাগলাম, আমার মন আওয়াজ দিয়ে চূড়ান্তভাবে বলছিলো তোমার সাথে আর আমার কথা হবেনা। সেখানে এক বিশাল দেয়াল তৈরি হয়েছে, সে দেয়াল ভেদ করা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। আধা কিলো যেতেই একটি রিকসার দেখা মিললো। তোমার কাছে পৌঁছাবো বলে নিরন্তর চেষ্টা আমার বাবা। জীর্ন শীর্ন বিধ্বংস ভাঙ্গা নির্বাক মন নিয়ে তোমার কাছে পৌঁছালাম। তখনও তোমার বৌমা তোমাকে তেল মাখিয়ে দিচ্ছিল, তোমার আদরের দাদু ভাইটাও পাশে ছিলো এক ব্যাথাতুর মনে। তখনও কেউ বুঝে উঠতে পারেনি তুমি সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে চির ঘুমকে আলিঙ্গণ করেছো। মহামহিম রব যে তোমাকে ডাক দিয়েছে তুমি তার ডাকে সাড়া দিতেই তোমার এ প্রস্থান।
বাবা ঠিক আমি যেখানে ঘুমাতাম তুমিও সেখানে ঘুমিয়ে গেলে কিন্তু তোমার ঘুম সেতো নিষ্ঠুর ঘুম সে তোমাকে আর কোন দিন এই ধরাধামে জাগতে দেবে না। বাবা আমি তোমাকে দেখেই বুঝতে পেরেছিলাম তুমি অজানা রাজ্যের বাসিন্দা হয়েছো। আমি নির্বাক, দিশেহারা, নিঃস্ব, নিস্তব্ধ মূহুর্তেই হতাশার মোড়কে সবকিছু বন্দি হয়ে গেল, মাথার উপর থাকা বিশাল ছাদ যেনো এক অজানা ঝড়ে ঠিকানাহীন গন্তব্যে পাড়ি দিল। বুকের পাজর দুমড়ে মুছড়ে যন্ত্রনাগুলো একাকার করছে হৃদয়ের দেয়াল ফেটে চৌচির হয়ে বেরিয়ে আসতে চাইছে কান্নার দলা গুলো। বুদ্ধিহীনের মতো তোমাকে জড়িয়ে ধরলাম যেতে দেব না তাই, কিন্তু তুমি তো মহা অভিমানে ঘুমিয়ে গেলে আর জাগবে না বলে। তুমি কি একবারও ভেবেছো ভুলে ভরা তোমার এ পাগল ছেলেকে কোথাও রেখে যাচ্ছো ? তোমার ছেলের অভিমান ভাঙ্গাবে আর কে ? মূহুত্বেই সব ভুলে গেলে বাবা?
তিমির ঘন অন্ধকারকে সাথী করে তোমার নিথর দেহ কফিনে করে নিয়ে ছুটলাম মায়ের কাছে তোমাকে পৌছে দেবো বলে। তোমার বাড়ীতে যাওয়ার প্রচন্ড ব্যাকুলতা ছিলো, কিন্তু গেলে সাদা কাফন আর কফিনকে সঙ্গী করে। বাবা জীবন যুদ্ধে তুমি হারোনি, নির্মমভাবে হেরেছি আমি, তুমি সব কথা রেখোছো, রাখতে পারেনি আমি। বাবা ও মা, তোমাদের রেখে যাওয়া স্মৃতিকে চির জাগরুক রাখবো বলে তোমাদের নামে আমি একটি ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছি যা শুধু মানুষের কল্যাণের জন্য। বাবা হাত জোড় করে বলছি আমায় ক্ষমা করে দিও। মাকেও বলো তোমার ভুলে ভরা পাগলটা ক্ষমা চেয়েছে। তোমাদের অজানা ঠিকানায় আমার এ আর্তনাদের করুন আওয়াজ পৌঁছেবে কিনা জানিনা। পৌঁছালে আমায় ক্ষমা করো বাবা অভিমান ভেঙ্গে। আল্লাহ চাইলে আবার দেখা হবে বাবা। হে আমার রব সন্তান হিসেবে তোমার কাছে তাদের জন্য আকুতি তোমার মেহমান হিসেবে তাদেরকে কবুল করে নিও। আর বার বার শতবার বলি তোমার শিখিয়ে দেওয়া সেই দোয়া- রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বা ঈয়ানী সাগিরা।
এস.এম. হাফিজুর রহমান
চেয়ারম্যান, অক্সফোর্ড স্কুল এন্ড কলেজ
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।