
প্রকাশ: ১২ মে ২০১৯, ২৩:৪৮

মা দিবসে সকল ছেলে-মেয়েরা যখন মায়ের সাথে হাসি, আনন্দে সময় কাটাচ্ছে তখন পিতৃহীন দুই বোন স্বর্ণা ও সমাপ্তি অসুস্থ্য মায়ের পাশে হাসপাতালের গ্রিল ধরে লুকিয়ে চাখের জল ফেলছে। আপন কাকা সমির হাওলাদারের নির্মম নির্যাতনে মাথার ব্যথায় মা বাসন্তি রানী যখন ছটফট করে তখন মায়ের মাথার পাশে বসে শান্তনা দিচ্ছে স্বর্না। আর মায়ের শরীরের ব্যথার দাগ খুতিয়ে খুতিয়ে দেখছে ছোট বোন সমাপ্তি। এভাবে মা দিবসে কলাপাড়া হাসপাতালের বেডে অসুস্থ মায়ের পাশেই দিন কেটেছে হতভাগী দুই বোনের।
উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের নিজকাটা গ্রামের গৃহবধু বাসন্তি রানীর স্কুলের গন্ডি পার হতেই বসতে হয় বিয়ের পিড়িতে। বয়স মাত্র ২৮ হলেও স্বামীকে হারিয়েছেন একযুগ আগে। তখন ছোট মেয়ে দুই মাসের গর্ভবতী। নিজের ভবিষ্যত চিন্তা না করে কখনও রাস্তার মাটি কেটে, হোগলা বুনে দুই মেয়েকে লেখাপড়া করাচ্ছেন। দুই মেয়ের উজ্জল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখে বিসর্জন দিয়েছেন নিজের ভবিষ্যত। বড় মেয়ে স্বর্ণা পাখিমারা প্রফুল্ল ভৌমিক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণিতে ও ছোট মেয়ে সমাপ্তি নিজকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ছে।
বাসন্তী রানী জানান, গত ৮ মে বিকালে দেবর সমীরের হাতে নির্মম নির্যাতনের শিকার হন তিনি। স্বামীর রেখে যাওয়া ভিটা দখল নিতে একের পর এক চক্রান্তের পর তাদের ঘর থেকে বের করে তালা ঝুলিয়ে সমীর। উঠানে ফেলে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করা হয় তার উপর। রডের আঘাতে মাথা ফাটিয়ে দেয়া হয় তার। মাথা থেকে প্রচন্ড রক্ত বের হলেও তার উপর থেমেনি নির্যাতন। মায়ের উপর নির্যাতন করতে দেখে দুই মেয়ে কাকাকে বাঁধা দিলে তাঁদেরও মারধর করে সমীর। এ সময় প্রতিবেশীরা এগিয়ে এলে প্রতিবেশী নারীদের উপরও হামলা চালানো হয়। এ হামলার সংবাদ এলাকায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে গ্রামবাসী একজোট হয়ে এগিয়ে আসলে পালিয়ে যায় সমির। রাতেই মা, দুই মেয়ে ও এক প্রতিবেশীকে কলাপাড়া হাসপাতালে ভর্তি করে এলাকাবাসী।
এ ঘটনায় ৯ মে বৃহস্পতিাবার দেবর সমির ও পুতুল রানীর নামে কলাপাড়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেছেন বাসন্তী রানী। আদালত কলাপাড়া থানার ওসিকে মামলাটি এজাহার হিসেবে নেয়ার নির্দেশ দেন। মায়ের উপর নির্মম নির্যাতনের দৃশ্য এখনও ভুলতে পারেনি দশম শ্রেণির ছাত্রী স্বর্ণা। স্বর্ণা জানায়, মায়ের মাথা থেকে যখন দরদর করে রক্ত বের হচ্ছিল তখনও তাকে কিল ঘুষি ও লাঠি দিয়ে মেরে যাচ্ছে কাকা। সে দৌড়ে গায়ের ওড়না দিয়ে মায়ের মাথার ক্ষতস্থান বাঁধতে গেলে তাকেও মারধর করা হয়। কাদো কাদো কন্ঠে স্বর্না আরও জানায়, বাবা অনেক আগেই মারা গেছে। মাই আমাদের শেষ ভরসা। আর এ ঘটনায় মায়ের যদি কিছু হয়ে যেত তাহলে আমরা একেবারেই এতি হয়ে যেতাম। এ বিষয়ে সমীরের কাছে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব