বাপের বাড়ি যাওয়া হলো না গৃহবধূ শারমিনের!

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: বুধবার ১লা মে ২০১৯ ১১:৩২ অপরাহ্ন
বাপের বাড়ি যাওয়া হলো না গৃহবধূ শারমিনের!

রাঙ্গুনিয়া গৃহবধূ সাহিদা আক্তার শারমিন (২২)। বিয়ে হয়েছে সবেমাত্র ছয় মাস হয়েছে। পরিবারের একমাত্র মেয়ে হিসেবে বাপের বাড়িতে সবার আদরের সন্তান ছিল সে। গত ১৮ এপ্রিল ভাইয়ের বিয়েতে স্বামী সহ গিয়ে প্রায় ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত থাকে সে। এরপর স্বামীর কর্মস্থলে ফিরে যাওয়ার সময় হয়ে আসায় আবারও শ্বশুর বাড়িতে ফিরে আসে শারমিন। কথা ছিল স্বামী কর্মস্থলে যাওয়ার দুইদিন পর বাপের বাড়ি যাবে সে। কিন্তু বাপের বাড়ি যাওয়া হলো না তার। রহস্যজনক ভাবে ৩০ এপ্রিল নিখোঁজ হওয়ার একদিন পর ১ মে কর্ণফুলী নদী থেকে ভাসমান অবস্থায় তার লাশ পাওয়া যায়। জানা যায়, বুধবার (১ মে) সকাল নয়টার দিকে রাউজান উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের উকিলপাড়া এলাকায় কর্ণফুলী নদীতে একটি লাশ ভাসতে দেখেন স্থানীয়রা। লাশটি ভাসতে ভাসতে পূর্বদিকে রাঙ্গুনিয়ার বেতাগী এলাকার দিকে চলে যায়। পরে ভাটার সময় রাউজানের খেলারঘাটে লাশটি আটকে পড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বিকাল ৪টার দিকে লাশটি উদ্ধার করেন। এর পূর্বে তিনটার দিকে সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন গৃহবধূর স্বজনরা।

তার স্বজনরা জানান, গত বছরের ২ নভেম্বর রাঙ্গুনিয়া উপজেলার স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়া ইউনিয়নের ২নম্বর ওয়ার্ডের মাওলানা মকবুল আহমেদ বাড়ির মো. শহীদুল্লাহর কন্যার সাথে রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার ২নম্বর ওয়ার্ড দক্ষিণ নোয়াগাঁও ফকিরখীল এলাকার নবীর হোসেনের পুত্র মো. আলমগীরের বিয়ে হয়। আলমগীর ঢাকার ধানমন্ডি ৬/এ আবাসিকে একটি ভবণে কেয়ারটেকারের কাজ করেন। বিয়ের পর থেকে সুখেই সংসার কাটছিল তাদের। বড় ভাইয়ের বিয়ে উপলক্ষে স্বামী সহ বাপের বাড়ি প্রায় ১০ দিন থাকার পর ২৮ এপ্রিল শ্বশুর বাড়িতে ফিরে আসেন তারা। এরপর সোমবার (২৯ এপ্রিল) রাত ৮ টায় ডলফিন বাস যোগে স্বামী ঢাকা চলে যায়। পরদিন ৩০ এপ্রিল ভোরে নিখোঁজ হয় সে। এই ব্যাপারে তার বাবা ঐদিনই রাঙ্গুনিয়া থানায় সাধারণ ডায়েরী দায়ের করেন। পরে ১ এপ্রিল কর্ণফুলীতে যুবতীর লাশ ভাসার খবরে দুপুর তিনটার দিকে রাউজার খেলাঘাট এলাকায় যান স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন। তারা গিয়ে দেখে এটি তাদের হারিয়া যাওয়া সাহেদা আক্তার শারমিনের লাশ। 

এদিকে নিহতের চাচী হাসিনা বেগম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আহাজারি করেন এবং নিহতের ভাই ও চাচাসহ নিহতের স্বামী মো. আলমগীরকে নানা বিষয়ে দোষারোপ করেন। ঘটনাস্থলে গৃহবধুর স্বামী মো. আলমগীর বলেন, বিয়ের পর থেকে সুখেই সংসার কাটছিল দু’জনের। আমাদের পরিবারের সবাই তাকে অনেক ভালবাসতো। সম্প্রতি আমার আত্মিয়ের মৃত্যুর সংবাদে লাশ দেখে ফেরার পর থেকে তার আচার-ব্যবহারে কিছুটা ব্যতিক্রম দেখা দেয়। সে তার মাথা ও চুল টানতে টানতে কেমন যেন লাগছে বলে জানায়। বিষয়টি আমি আমার শ্বশুরকে বললে উনি বৈদ্য দিয়ে নানা কোরআনি চিকিৎসা চালান। আমিও বেশ কয়েকজন বৈদ্যকে দেখায় এবং ডাক্তারি চিকিৎসাও করি। গত ২৯ এপ্রিল আমি কর্মস্থলে ঢাকা ফিরে যাওয়ার সময় আমাকে সে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করে এবং বিদায় জানায়। ঢাকা পৌছে মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ফোনের মাধ্যমে জানতে পারি ভোর হতে তার স্ত্রী নিখোঁজ। ঘরে কাউকে কিছু না বলে সে কোথায় চলে গেছে, কেউ জানে না। বিষয়টি খবর পেয়ে বাড়ি ফিরে আসি। শ্বশুরের সাথে একসাথে আমিও তাকে আত্মিয়-স্বজন ও বিভিন্ন সম্ভাব্য স্থানে খুঁজতে শুরু করি। বৈদ্যের বাড়িতে গিয়ে তার ব্যাপারে জানার চেষ্টা চালায়।

সে আরও বলেন, ‘ইদানিং সে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। হয়ত সেই কারণেই অবচেতন মনে সে ঘর থেকে বের হয়ে গেছে।’ এই বিষয়ে নিহতের বাবা শহীদুল্লাহ জানান, মেয়ে নিখোঁজের সংবাদ পেয়ে বৈদ্যের বাড়িতে গিয়ে হাজিরা দেখেন। পরে রাঙ্গুনিয়া থানায় গিয়ে একটি নিখোঁজের ডায়েরি করা হয়। তার মেয়ে ও স্বামীর সাথে তেমন কোন মতানৈক্য ছিল না। তবে সাংসারিক ছোটখাট কিছু অশান্তি ছিল। হয়ত এই কারণেই আমার মেয়েকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।’

মেয়ের চাচা আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘একটি মেয়ে নিজে নিজে বের হয়ে যাওয়া এবং পরে কর্ণফুলী থেকে লাশ পাওয়া। এরমধ্যে রহস্য অবশ্যই আছে। এমনি এমনি একজন সুস্থ মানুষ কিভাবে মারা যেতে পারে। এটি আসলে পরিকল্পীত হত্যাকান্ড। এই ব্যাপারে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।’  এদিকে বিকাল পাঁচটার দিকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন রাঙ্গুনিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আবুল কালাম চৌধুরী ও রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি ইমতিয়াজ মো. আহসানুল কাদের ভূঞা। এই ব্যাপারে ওসি ইমতিয়াজ ভূঞা বলেন, ‘কর্ণফুলী নদী থেকে গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করে সুরতাহাল প্রতিবেদন সংগ্রহ করা হয়েছে। লাশ ময়নাতদন্ত করা হবে। নিহতের স্বামীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। আমরা তার মৃত্যুর ব্যাপারে ঘটনার গভীরে গিয়ে তদন্ত চালিয়ে যাব। ময়না তদন্ত প্রতিবেদন ও তার নিখোঁজের ব্যাপারে আরও তদন্ত শেষে ঘটনার রহস্য উম্মোচিত হলে আমরা পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেব।’

ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব