রোহিঙ্গা কামাল উদ্দিন (৫০), ২০১৭ সালের ২৯ আগষ্ট তুমব্রু স্থল সীমান্ত দিয়ে স্বপরিবারে অন্যান্য রোহিঙ্গাদের সাথে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। তিন মাসের মাথায় তার ছেলে নুরুল আমিন (২২) কে ওমরা ভিসা নিয়ে সৌদি আরব পাঠিয়ে দেয়। ২০১৭ সালে উদ্বাস্তু হয়ে বাংলাদেশে আসার আরো কয়েক বছর আগে সে মিয়ানমার থেকেই বাংলাদেশী জাতীয় পরিচয় পত্র ও পাসপোর্ট বানিয়ে নেয়। ফলে পালিয়ে আশ্রয় নেওয়ার পরও তাকে বেশীদিন অপেক্ষা করতে হয়নি।স্বল্প সময়ের ব্যবধানে নতূন আসা রোহিঙ্গা নূরুল বাংলাদেশী দালালের মাধ্যমে সৌদি আরব পাড়ি দিয়েছে। শুধু নূরুল আমিন নয় এ ধরনের অনেক রোহিঙ্গা সৌদি আরব, মালয়েশিয়া সহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশী পাসপোর্ট নিয়ে ইতিমধ্যে আশ্রয় শিবির ছেড়েছে। সম্প্রতি এক অনুসন্ধানে এ তথ্য জানা গেছে।
নুরুল আমিন মিয়ানমারের তুমব্রু গ্রামের ঢেকিবনিয়া এলাকার কামাল উদ্দিনের ছেলে। সে মিয়ানমার থাকতেই বাংলাদেশী জাতীয় পরিচয় পত্র নং ১৯৮৭১৯১৩১৫৭০৩৩৩৯০ বানিয়ে নেয়। ২০১৪ সালের ২১ মে কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার তারাসাইল কুমারদোঘা ঠিকানায় দালালের মাধ্যমে বাংলাদেশী পাসপোর্ট নং বিবি ০২২৪৮৯৯ করে নেয়।গত ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর সে ভিসা নিয়ে সৌদি আরব পাড়ি দেয়। তার বাবা,মা ও পরিবারের অন্যান্যরা এখনো উখিয়ার বালুখালী -৯ নং রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরের নিবন্ধিত মিয়ানমার নাগরিক।
উখিয়ার কুতুপালং লম্বাশিয়া -১ নং ক্যাম্পের নিবন্ধিত মিয়ানমার রোহিঙ্গা নাগরিক মরজিনা আক্তার তার স্বামী মৌলভী আবু বকর ছিদ্দিক। সে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বাকলিয়া থানার কালামিয়া বাজার এলাকার ঠিকানায় ১৯৮২১৫৯১০১৮০০০১১৩ নং বাংলাদেশী জাতীয় পরিচয় পত্র বানিয়ে নিয়ে উদ্বাস্তু আশ্রয় শিবিরে দিব্যি যাবতীয় সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে। উখিয়ার কুতুপালং – বালুখালী মেগা আশ্রয় শিবিরের ২০ নং ক্যাম্পে অবস্হান করছে ২০১৭ সালে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা আবছার। সে পার্বত্য বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ২৭৮ বাইশারী মৌজার দক্ষিণ বাইশারী এলাকার ঠিকানায় ০৩১৭৩১৯৩৭৫১৪৯ নং বাংলাদেশী এনআইডি বানিয়ে নিয়েছে।সেও আশ্রয় ক্যাম্পের একজন উদ্বাস্তু হিসেবে বিনামূল্যে যাবতীয় সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
জয়নাল আবেদীন পিতা হোসেন আহাম্মদ, সে টেকনাফের নয়াপাড়া নিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের একজন নিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থী। সে বর্তমানে গত ৬/৭ বছর ধরে স্বপরিবারে উখিয়ার কুতুপালং সংলগ্ন নাইক্ষ্যংছড়ির কচুবনিয়া এলাকায় বসবাস করছে। ১৯৯২ সালে অন্যান্য রোহিঙ্গাদের সাথে শরণার্থী হিসেবে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিল। শরণার্থী ক্যাম্প থেকে সে রোহিঙ্গা বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন বা আরএসও এর সাথে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে। আরএসওর সামরিক কমান্ডার হিসেবে তাকে অনেকে জানেন। সে দীর্ঘদিন নাইক্ষ্যংছড়ির পার্বত্য এলাকায় থাকার সুবাদে রেজু আমতলী ঠিকানা ০৩০২৯৫৩৭৪৯৩২ নং বাংলাদেশী এনআইডি বানিয়ে নেয়। তার এক ভাই মোঃ আয়ুব কুতুপালং -২ নং ক্যাম্পে পরিবার পরিজন নিয়ে থাকে।
খবর নিয়ে জানা গেছে, উখিয়ার কুতুপালং ও টেকনাফের নয়াপাড়া নিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের অধিকাংশ রোহিঙ্গা বাংলাদেশী এনআইডি ধারী হয়ে গেছে, অনেকে পাসপোর্ট করে ফেলেছে। ১৯৯২ ইং থেকে শরণার্থী হিসেবে অবস্হানের সুযোগে বাংলাদেশের সর্বত্র তাদের চেনা জানা হয়ে গেছে। অনেকের সাথে স্হানীয় লোকজন সহ কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, বান্দরবান সহ বিভিন্ন এলাকার লোকজনের সাথে নানা ভাবে সম্পর্কও গড়েছে।রেজিষ্টার্ড ক্যাম্প দুটোর শত শত রোহিঙ্গা মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, আরব আমিরাত সহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশী পাসপোর্ট নিয়ে অবস্থান করছে ও ক্যাম্পে যাতায়াত করছে বলে জানা যায়।
এদিকে মিয়ানমার থাকতেই অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশী এনআইডি ও পাসপোর্ট এর মালিক হয়েছে। আবার ২০১৭ সালের পর এসে দালালদের মাধ্যমে ভূঁয়া নাম ঠিকানা দিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে জম্ম নিবন্ধন, এনআইডি ও পাসপোর্ট বানিয়ে বিভিন্ন দেশে যাওয়ার জন্য অস্তির হয়ে ওঠেছে। একাজে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে ঐ সব রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন দেশে প্রবাসী স্বজনরা ও বাংলাদেশী অভিবাসী দালালরা। গত দেড় বছরে ভুঁয়া নাম ঠিকানা দিয়ে আসল পরিচয় গোপন করে পাসপোর্ট করতে গিয়ে দেশের প্রায় সব জেলা ও আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস গুলো থেকে এধরনের কয়েক শত রোহিঙ্গা আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক হয়েছে।
প্রশ্ন দেখা দিয়েছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এত কড়াকড়ির পরও কিভাবে রোহিঙ্গারা সারা দেশ ছড়িয়ে পড়তে পারে।এ ব্যাপারে উখিয়া থানার ওসি মোঃ আবুল খায়ের জানান, আমার দেশের লোকজনরাই রোহিঙ্গাদের ছড়িয়ে পড়তে ও বিভিন্ন দেশে পাড়ি দিতে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। এধরণের বেশ কিছু সহযোগীকেও আটক করে আইনানুগ ব্যবস্হা নেয়া হয়েছে। তা ছাড়া আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন পয়েন্টে স্থাপিত অস্হায়ী চেক পোস্ট গুলোতে গত আটার মাসে ৬০ হাজারের মতো রোহিঙ্গাকে আটক করে সংশ্লিষ্ট ক্যাম্পে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এসব রোহিঙ্গারা ক্যাম্প ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করছিল বলে ওসি জানান।
ইনিউজ ৭১/এম.আর
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।